লাটির ক্ষিপ্ত আঘাতটা কোন ক্রমে পাশ কাটালাম। তা দোকানের টেবিল বরাবর আছড়ে পড়ে। একটু দূরে দাড়িয়েই এগার-বার বছরের এক বালক সূচালো বাঁশের চিকন লাঠিটি আমাদের দিকে ছুড়ে দেয়। গন পিটুনির মুখোমুখি
এমন তীক্ষ্ণ সূঁচালো লাঠি খুব সহজেই ভয়ঙ্কর ভাবে বুকে ছিঁড়ে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যেতে পারে। অনিবার্য মৃত্যুর ছটফটানি কেমন হতে পারে ভাবছি।
একটি বালকের এমন আঘাতে, মুহূর্তে চোখ বন্ধ করলাম। ভাবছি, এখনিই কম্পমান হৃদপিণ্ডটি ধারালো শলাকায় আটকে যাবে।
আমি মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকব আর উন্মুক্ত মানুষ কিরিচ দিয়ে চোখ বন্ধ করেই কোপাতে থাকবে। এক পর্যায়ে জীবন প্রদীপ থেমে যাবে। কিন্তু ধারালো শলাকাটি বুকে বিধতে এত দেরী হচ্ছে কেন বুঝার জন্য চোখ একটু ফাঁক করে তাকালাম।
দোকানদার তড়িৎ গতিতে নিজ হাতে বাধা দিয়ে বালকের ছোড়া লাঠিটিকে দিকভ্রান্ত করে দিয়েছিলেন। তিনি সজোরে অনুরোধ করছেন,
“ডাকাত যদি মারতেই হয়, বাহিরে মারবেন, অনুরোধ করি আমার দোকানে যেন কোন অঘটন না করে”।
বাহিরে দাঁড়ানো সশস্ত্র উত্তেজিত জনতার কেউ কেউ চিল্লায়ে বলছিল, “ডাকাত যুগলকে আমাদের হাতে তুলে দিন। মসজিদের সামনে নিয়ে গোখরো সাপের মত পিটিয়ে মেরে ফেলি।
বহু জ্বালিয়েছে, অনেক জ্বালিয়েছে আমাদের; আজ জনমের মত শোধ তুলে ফেলি।
আরো পড়তে পারেন…
- তাকে দেখে যেন চেনা-জানা মনে হল
- প্রেম কাঁটার সাথে মানব সখ্যতা
- আরব দেশের পুলিশ
অনতিদূরে বন্ধুকেও জেরা করা হচ্ছে। তাকে নিয়ে কি হচ্ছে ভাবার সুযোগ নেই। ভাবলাম এখনও যেহেতু মরি নি তাহলে শক্ত হয়ে কথা বলে মরা উচিত।
সটান দাড়িয়ে চিৎকার করে বললাম, ভাইয়েরা তোমরা করছ টা কি? থামো! বন্ধু তাহের বলে উঠল, তোমরা থামো, আগে কথা শুন, তারপর মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নাও। আমরা তো আর পালাতে পারছিনা।
গণপিটুনিতে মানুষ মারার ঘটনা আমাদের দেশে একটি সাধারণ ব্যাপার। আগ-পিছ না ভেবে, অন্যের দেখা দেখি, ভুয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে, মানুষেরা খুনে জড়িয়ে যায়। পরে মামলা হয়।
পুলিশের ভয়ে সারা গ্রামের মানুষ পালিয়ে বেড়ায়। এ ধরনের একটি গণপিটুনির মুখে পড়েছিলাম, আমরা দুই বন্ধু। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। সেই ঘটনার পরে আরো ত্রিশ বছর বেচে আছি!
পাহাড়ে ঘুরার অভ্যাস
পাহাড়ে ঘুরাঘুরির অভ্যাস ছিল শৈশব থেকেই। বহুবার বন্ধুদের নিয়ে ঘন জঙ্গলে ঘুরেছি। পাহাড়ের বুক ছিঁড়ে গড়ে উঠা পথে হেঁটেছি। রাত কাটিয়েছি, বনভোজন করেছি। বইয়ে যে বনভোজনের রচনা লেখা হয়, সে ধরণের নয়।
একেবারে খাঁটি বনভোজন। পাহাড়ে জংলী জানোয়ার থাকে, তাদের থেকে রক্ষা পেতে প্রস্তুতি থাকে কিন্তু মানুষ কখনও জংলী হলে কেমন হয়, এমন ধারণা কখনও ছিলনা। তবে আজকের ঘটনায় আমরা তার কিছুটা দেখতে পাব।
বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা পশ্চিম আফ্রিকার মরক্কো থেকে দূর প্রাচ্যের চীন অবধি ঘুরেছেন দু’খানি পায়ের উপর নির্ভর করেই। আমার শৈশবের বন্ধুরাও ছিল যেন এক একজন ক্ষুদে বতুতা।
শুধুমাত্র ফুটবল খেলার জন্যই পাঁচ-ছয় মাইল পাড়ি দিয়ে মাঠে পৌঁছানো কোন ব্যাপারই ছিল না। ফলে দূরের, বহু দূরের গ্রামের ছেলেদের সাথেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠার সুযোগ হত।
বাল্য বন্ধু তাহের। অমায়িক, মিশুক, বুদ্ধিমান এবং ক্লাসের মেধাবী ছাত্র। শহরে একটি ঔষধ কোম্পানির এম আর। যথেষ্ট ব্যস্ত-ভাবে দিন কাটে। আমি চট্টগ্রাম ইপিজেড’ এ সবেমাত্র একটি আমেরিকার কোম্পানিতে Reconciliation officer হিসেবে যোগ দিয়েছি।
একদিন তাহের বলল, সে একটি নতুন পথের সন্ধান পেয়েছে। যদি কখনও উভয়ের ছুটি এক সাথে মিলে যায়। তাহলে সারাদিন কথা বলতে বলতে, সে নতুন পথ দিয়ে পাড়ি দিব। গন পিটুনির মুখোমুখি
প্রশ্ন করলাম পথের দৈর্ঘ্য কত? সে জানাল ১২ থেকে ১৬ মাইল হবে। মাঝ পথে আমাদের উভয়ের পরিচিত একজন মাদ্রাসা ছাত্রের বাড়ি। আবুল হাশেম পিতামাতার খেদমতের জন্য চরম অবহেলিত সেই অঞ্চলে থাকে।
তার সাথে বহুবছর দেখা নেই। তবে জেনেছি সে ওখানকার মসজিদে ইমামতি করে। তার সাথে দেখা হবে, কথা হবে এবং জিরিয়ে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওয়ানা হব।
ওই জায়গা পথে পানীয় জলের অভাব ছিল। চলার পথ মোটেও সুখকর ছিলনা। কোথাও দোকান-পাট নেই। ফলে খুব সহসাই দুর্বল হয়ে পড়ি। ক্লান্ত দেহে তাহের আগে আগে চলছিল আমিও প্রায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে অনেকটা পিছনে রয়ে গেলাম।
মাইল দুয়েক দুরে কয়েকটি দোকান-পাট আছে। সেখানেই সে মসজিদ। ওখানে পৌছলেই খেয়ে দেয়ে শরীর চাঙ্গা করে আবারো রওয়ানা হওয়া যাবে।
পাহাড়ে উঠেই নজরে পড়ল, সামনে একটি বিল। মানুষেরা সদলবলে সে বিলে মাছ ধরছে। বিলের মাঝ দিয়ে একটি রাস্তা। ওপাড়েই দোকান-পাঠ ও মসজিদ নজরে এলো। পাহাড়ের ঢালু দিয়ে নামার সময়, এক বুড়ি আমাকে ডাক দিয়ে প্রশ্ন করল, “তুমি মামুন ডাকাত না”?
সহাস্যে উত্তর দিলাম,
“না আমি মামুন ডাকাত নই, কেন আমি ডাকাত হতে যাব?”
বুড়ি বলল, “আমার চোখ দুটো তোমাকে বহুদিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছে, আমাকে তুমি কোন অবস্থাতেই ফাকি দিতে পারবে না। আমি তোমাকে চিনেছি। আজকে তুমি পালাতে পারবে না। এত ডাকাতি করেও তুমি কাপড়-চোপড় বদলাতে পার নি। তুমি দাঁড়াও আগে আমি তোমাকে দুটি কোপ দেই!”
কণ্ঠ শুনে মনে হল তিনি একজন বুড়ি। ভাবলাম পাগলীর খপ্পরে পড়েছি মনে হয়। আমি খালা, চাচী ডেকে তার সুদৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। কৌতূহলের বিষয় হলো অতি নিকট থেকেই বুড়ির সাথে কথা হচ্ছিল কিন্তু তার অবস্থান নির্ণয় করতে পারছিলাম না।
তাহের ততক্ষণে নিচে চলে গেছে। সে ইঙ্গিত দিয়ে বলল, কথা না বাড়িয়ে দ্রুত চলে আসতে। মনে হল, বুড়ি ওঁত পাতার সুযোগ খুঁজছে, পাহাড় থেকে নামার সময়, অজ্ঞাত স্থান থেকেই যেন আমাকে যুতসই কোপ দিতে পারে।
তাহেরের ইঙ্গিত পেয়ে দ্রুত রাস্তায় নেমে এলাম। শিকার হাত-ছাড়া হতে দেখে বুড়ি চিৎকার করে উঠল। তোমরা কে কোথায় আছ? মামুন ডাকাতকে পাওয়া গেছে। তোমাদের কাছে যার যা আছে তাই নিয়ে এগিয়ে এসো।
বুড়ির এমন ঘোষণাকে পাত্তা দিলাম না। কেননা মানুষ আমাদের কাছে আসলে তো বুঝতে পারবে, আসল ব্যাপার কি। এই অঞ্চলের অবস্থান আমাদের গ্রাম থেকে দুরে হলেও, আমরা উভয়েই মোটামুটি পরিচিত ব্যক্তি।
আশে পাশে আত্মীয় স্বজনের খামার বাড়ি আছে। সমস্যা দেখা দিল কম বয়সী ছেলে-পুলো গুলোকে নিয়ে। ওরা যেন ডাকাত ধরার জন্য বহুদিন ধরে তক্কে তক্কে ছিল। বুড়ির ডাক শুনে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে দলে দলে ধাবিত হচ্ছিল আমাদের লক্ষ্য করে।
সারা বিলে শোর উঠল। মানুষজন মাছ ধরা ছেড়ে দিয়ে ডাকাত ধরতে মনোযোগী হল! আশে পাশের টিলাগুলো থেকেও মাতম উঠল। চারিদিকের মানুষ সজাগ হল, যার যা আছে সেটা নিয়ে ডাকাত নিধনে বের হল।
হাতে সময় খুব কম। প্রতি মুহূর্তে জিন্দেগীর আশা ক্ষীণ হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য দোকান পর্যন্ত পৌছা। কিন্তু অতটুকু পৌছা সম্ভব হবে কিনা তাই ভাবছি। দৌড়ে পালানো যাবেনা এতে মানুষের সন্দেহ ঘনীভূত হবে।
তাই দোকান পর্যন্ত স্বাভাবিক গতিতে হেটেই পৌছার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু পিছনের ক্ষিপ্ত মানুষগুলো তো ধাবমান হয়ে আসছে। এদের কোন এক বেকুব যদি প্রশ্ন করার আগেই আঘাত করে বসে। তাহলে তো নিশ্চিত মৃত্যু।
দোকান-পাট থেকেও মানুষ বের হয়ে আমাদের অপেক্ষায়। আমরা তাদের মধ্য থেকে লক্ষ্য করছি, একজন দাড়ি-টুপি ধারী মানুষের উপস্থিতি। যিনি এলাকার মসজিদের ইমাম এবং তিনি আমাদের পরিচিত।
আল্লাহর এমন বিপদ থেকে কাছে সাহায্য চাচ্ছি আর দোয়া পড়ছি। ঠিক এই সময়েই অতীতের এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা মানস-পটে ভেসে উঠল।
১৯৮৮ সালে নাজির হাট বাজারে এক অপরাহ্ণে জনতা ব্যাংকে সর্বহারা দলের সশস্ত্র ডাকাতি হয়েছিল। সে সব ডাকাতদের কিভাবে মানুষ পিটিয়ে ভর্তা বানিয়েছিল, সেটা নিজ চোখে দেখেছি।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে, পলায়নপর এক ডাকাতের পথরোধ করেছিলাম। সে সন্তানের দোহাই দিয়ে ইহজনমের জন্য মাফ চেয়েছিল। মানুষটিকে কোথাও দেখেছি মনে হল হল।
তার চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া চলে এসেছিল। আমি সরে দাঁড়িয়ে তাকে পালানোর একটি রাস্তা দেখিয়ে দেই। কোন কারণে সে আমার দেখানো পথে না গিয়ে আরেটি পথ ধরেছিল! সে পথের সামনে ছিল খোলা বিল, পথিমধ্যে কাদার মধ্যে আটকে গিয়েছিল।
উন্মুক্ত জনতার এক ব্যক্তি কুড়াল হাতে দৌড়ে এসে সজোরে তার কোমর বরাবর আঘাত করে। পচা কাষ্ঠে কুড়ালের কোপ পড়লে যেমন শব্দ হয়, তেমনি একটি শব্দ হল!
পুরো কোমর দু’ভাগ হয়ে গেল! কুড়ালের পরবর্তী আঘাতটি তার মাথা বরাবর। এক আঘাতেই মাথাটি পাকা বেলের মত ফেটে গেল! মগজ ছিটকে বেড়িয়ে যায়, একটি চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে রগের সাথে লটকে রইল!
মনে মনে ভাবছি, আমরা কারা পরিচয় দেবার যদি সুযোগ না ঘটে, তাহলে আমাদের পরিণতিও সেই ডাকাতের চেয়ে ভিন্ন কিছু হবে না!
এমন চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তে নতুন করে কোন কিছু ভাবতে পারছি না। তবে দু’জনই সিদ্ধান্ত নিলাম, মাথা ঠাণ্ডা রেখে এগুতে হবে।
দোকান-পাটের সামনের মানুষগুলো আমাদের কোন আক্রমণ করেনি। তবে তারা ক্ষিপ্ত এবং চিল্লায়ে আমাদের জিজ্ঞাসা করছিল।
তাহেরই উত্তর দিল, দোকানে চলুন সেখানেই পরিচয় দেই। দোকানে ঢুকাতে কিছু সুবিধা হলে, আক্রমণ এলে সামনে দিক থেকেই আসবে, তিন দিকে কিছুটা নিরাপদ থাকবে।
ততক্ষণে বিলের মানুষ ও আশের পাশের মানুষেরা যার যা আছে তাই নিয়ে হাজির। তারাই বেশী উন্মাদ! এ যেন একদল বন্য কুকুরের মাঝখানে পড়া। এই কুকুর-দল আক্রান্ত প্রাণীকে ঘিরে ধরে, অন্তত একটি কুকুর কামড় বসাতে চেষ্টা করে।
কামড় দিলে আক্রান্ত প্রাণী সেদিকে মনোনিবেশ করে। মুহূর্তেই বাকী কুকুর একসাথে একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে সে আর রক্ষা পায় না।
আমাদের বিষয়টিও প্রায় দেখতে সে ধরনের হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ একজন আঘাত শুরু করলে বাকিরাও শুরু করবে।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের শান্ত চেহারা-সুরত দেখে কিছু মানুষদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়। তারা হয়ত ভাবতে শুরু করেছে ডাকাতের আচরণ কিংবা চেহারা এমনতো হবার তো হবার কথা নয়।
ফলে তারা আগে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার চিন্তা করে। অনুমান করলাম সেখানে কোন শিক্ষিত ব্যক্তি নেই। দুর্ভাগ্যক্রমে এখানে হাশেম হুজুরকেও দেখা গেল না।
তাহেরই কথা তুলে জানাল; সে একজন ডাক্তার, আমি একজন মাষ্টার। মসজিদের ঈমাম আবুল হাশেম আমাদেরই বন্ধু।
তার কাছেই এসেছি, পারলে একটু তাকে ডেকে আনেন। আরো জানানো হল, আমরা কোন ছোট খাট মানুষ নই। আমাদের মেরে ফেললে আপনাদের কেউ তো বাঁচবে না।
কেননা, বর্তমানে আশে পাশের কয়েক ইউনিয়নে যারা মেম্বার চেয়ারম্যান আছে তাদের অনেকেই আমাদের চেনেন।
তারপরও ঘাড় ত্যাড়া একজন বলল প্রমাণ কি? তাহের তার ভিজিটিং কার্ড, মেডিক্যাল প্যাড বের করে দেখাল। আমি গলায় ঝুলানো, কোম্পানির দেওয়া ছবিযুক্ত আইডি কার্ড দেখালাম।
এমন জিনিষ তারা প্রথম দেখেছে বলে মনে হল। নিজেরা পড়তে না পারলেও এটার একটা আলাদা বিশেষত্ব আছে বলে ধারণা করল।
তারা এখন অনেকটা শান্ত, মাঠে বসেই আমাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছিল।
ততক্ষণে বুকে বল ও মনে সাহস ফিরে এসেছে। বলা হল, খবরদার! তোমাদের কেউ যেন গায়ে হাত না তুলে। এক পাগল বুড়ির কথার উপর ভিত্তি করে তোমরা নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে এগিয়ে এসেছ।
এতে সবার জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আন তো। তোমরা কি সেই ডাকাতকে দেখেছ? একজন বলল, সেই বুড়ি তো দেখেছে! জানালাম, প্যান্ট পড়া মানুষ দেখলেই বুঝি বুড়ি কাউকে ডাকাত ঠাওরায়।
তোমরাও কি তাই ভাব। এই এলাকায় প্যান্ট পরা মানুষ আসে না?
তাহের বলল, আবুল হাশেমকে ডেকে পাঠাও। একজন জানাল আছরের নামাজের পরপরই সে চলে গেছে। এই মসজিদে আছর নামার নামাজ পড়ল এমন পরিকল্পনা আমাদের ছিল।
কিন্তু ঘটনার কারণে নামাজের সময় গত হয়েছে বেশ আগেই। সকল মানুষদের আগ্রহ আমাদের কেন্দ্র করেই। ব্যাগ থেকে টুপি বের করা মাত্রই মানুষদের মধ্যে ধারণার পরিবর্তন হতে শুরু করল।
ডাকাতেরা অন্তত নামাজ পড়ে না। সাথে টুপি রাখে না। ব্যাগগুলো দোকানীরা কাছে রেখেই মসজিদে গেলাম। উদ্দেশ্য কৌতূহলীরা যেন আমাদের ব্যাগে কি আছে তা উঁকি মেরে দেখতে পারে।
নারায়নহাট ইউনিয়নের ধামার খিলের প্রায় তিন মাইল উত্তরের এই জনবসতির নাম কি ছিল আজো জানিনা। ১৯৯২ সালের শীতকালে সংঘটিত এমন ঘটনায় আমরা দু’জন হয়ত এতদিনে ৩০ বছরের পুরানো ইতিহাসের অংশ হয়ে যেতাম।
তবে হুজুগে বাঙ্গালী যে দেশের সর্বত্রই বসবাস করে, তা এই ঘটনা থেকে আরো পরিষ্কার হলো। এরা যেমন অন্যের দেখাদেখিতে গণ্ডগোলে যোগ দেয়; অন্যের দেখাদেখিতে ভাল কাজও করে। আবার হুজুগে পড়ে চিন্তা-ভাবনা ব্যতিরেকে গণপিটুনিতেও জড়িয়ে পড়ে।
মূলত বাংলাদেশে যত গণপিটুনির ঘটনা ঘটে সম্ভবত তার অধিকাংশ নিরপরাধ মানুষ। যারা জানেনা কোন অপরাধে সে নিহত হয়েছে।
Discussion about this post