পরনির্ভর ব্যক্তি কখনও কোন সময়েই সচ্ছলতা ও সমৃদ্ধির সন্ধান পায়না। এই অভ্যাস তাকে ধীরে ধীরে ভিক্ষা-মুখী করে ফেলে। হয়ত দীনহীন ভিক্ষুকের মত করুণার চাহনি দিয়ে হাত পাতে না।
তবে যাদের পরনির্ভরতা আছে তারা অনেকটা ভদ্র ভিক্ষুকের মত হয়ে যায়; অনেক সময় তারা পেশাদারী ভিক্ষুকের চেয়েও বেশী বিরক্তিকর হয়ে উঠে। সারাজীবনে ওরা কারো কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারে না এবং জীবনভর পাওয়ার মানসিকতার কারণে, ওদেরও যে কাউকে দিতে হয়, এমন ধারণা তাদের বৈশিষ্ট্য থেকেই হারিয়ে যায়।
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা) ইসলাম গ্রহণ করার অপরাধে, মক্কার স্বজনদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে মদিনায় হিজরত করলেন। রাসুল (সা) তাঁকে মদিনারই স্থায়ী বাসিন্দা ও সাহাবী “সা’দ ইবনে আর-রাবিয়াহ (রাঃ) এর সাথে বন্ধুত্ব বানিয়ে দেন।
ঘটনাস্থলেই সা’দ (রা) তাঁকে বললেন, মদিনায় আমার দুটি প্রসিদ্ধ খেজুর বাগান আছে এবং সাথে আছে দু’জন স্ত্রী। আপনি আমার দুই স্ত্রীর যাকে সুন্দর লাগে বলুন তাকে তালাক দিয়ে দেই এবং যে বাগানটি পছন্দ করেন সেটি আপনাকে উপহার দেই।
এমন অপ্রত্যাশিত সংবাদে হয়ত একজন পরনির্ভর ব্যক্তির লোভের খায়েশ বহুগুণ বেড়ে যেত কিন্তু আব্দুর রহমান (রা) বললেন ভিন্ন কথা,
”তোমার পরিবার আর সম্পদের উপর আল্লাহ’র রহমত বর্ষিত হোক, তুমি বরং আমাকে তোমাদের বাজারের পথটা দেখিয়ে দাও।”
তিনি আল্লাহর রাসুল (সা) এর মহান সাহাবী। মক্কার জীবনে প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ও নামকরা ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি কারো কাছে দায়বদ্ধ না হয়ে সেদিনই ইয়াসরীবের ‘কায়নুকা’ বাজারে পাইকারি ঘি ও পনির কিনে খুচরা বিক্রি করে লাভের অর্থ দিয়ে অসচ্ছলতা দুর করেন এবং অল্পদিন পরেই তিনি বিয়ে করেন!
তিনি কখনও ভাবেন নি যে, মক্কায় তার কত বড় ব্যবসা ছিল আর আজকে তিনি অজানা অখ্যাত ‘কায়ুনুকা’ বাজারের রাস্তায় দাড়িয়ে ঘি বিক্রি করছেন। তিনি আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছিলেন এবং সম্ভাব্য সকল পথে নিজের রিজিকের তালাশ করেছেন। গরীব ধনী হয় তবে পরনির্ভর নয়
পরবর্তীতে তিনি ঘোড়া ও ঘোড়ার জিনের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থকড়ির মালিক হয়ে যান। শেষ সময়ে তাঁর এত সম্পদ রাজি হয়েছিল যার হিসেব করার মত মানুষ পাওয়া যেত না। যুদ্ধে দান করার আহবান আসলে ওনার দান করার ধরণ দেখে ঈর্ষান্বিত কিছু মানুষ বলাবলি করত, অচিরেই ইনি অহংকারীত্বে আক্রান্ত হবেন।
এমন সম্পদশালী মানুষটি এত সম্পদ কি করবেন দিশেহারা হয়ে, মদিনায় পণ্য আসার আগেই তা দান করে দিতেন। একদা পাঁচ থেকে সাতশত উটের বিশাল একটি মালবাহী বাণিজ্য কাফেলা মদিনায় পৌঁছে। আয়েশা (রা) তাঁকে দোয়া করেন। তিনি সমুদয় মালামাল উটসহ মানুষকে দান করে দেন।
তার মানে ভাগ্য লুকিয়ে থাকে শ্রমের মধ্যে। বর্তমান সময়ে অনেক যুবক লেখাপড়া করেও, বিরাট ব্যবসা ফাদানোর জন্য পিতা, ভ্রাতা কিংবা আত্মীয় থেকে ধার কর্জ পায়নি বলে দোষারোপ করে সময় কাটায়। একেবারেই অনভিজ্ঞ মানুষ ব্যাংক লোন নিয়ে পরিবারকে পথে বসায়। মূলত যিনি কাজ জানেনা তার হাতে কোটি টাকা থাকলেও, তিনি কখনও সফল হতে পারবেন না।
আর যিনি কাজ জানেন তিনি সামান্য টাকাতেই নিজের ভাগ্য গড়তে পারেন। এক্ষেত্র আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা) জীবন-দর্শন মুসলিম যুবকদের অন্যতম আদর্শ। তাই চলুন কাজ করি, যেটা পাই সেটাই করি। কাজের মধ্যে সম্মান না খুঁজে বরং কাজের মধ্যেই ভাগ্য খুঁজি, কাজ নিয়েই বেঁচে থাকি। তবুও যেন পরনির্ভরশীল না হই, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে নেই।
Discussion about this post