একটি ছেলের আবেগ ঘন পোষ্ট নজরে পড়েছিল। তারা নাকি তাদের মাকে বাবার কাছে ফিরিয়ে এনেছেন। ঘটনা হল, চাকুরীজীবী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সদ্ভাব ও বনিবনা হতো না। ফলে উভয়ের সম্মতিতে তাদের তালাক হয়ে যায়। সে সংসারে সন্তানাদি ছিল। পরবর্তীতে ভদ্র মহিলা অন্যত্র বিয়ে করেন। সেখানে বার বছর সংসার করার পরে সেই স্বামীটিও মারা যায়। দৃষ্টান্তকর একটি হিল্লা বিয়ে
ওদিকে আগের ঘরে রেখে যাওয়া সন্তানেরা লেখা-পড়া ও কাজের কারণে বাহিরে থাকে। সেখানে একজন সৎ মা এসেছিলেন কিন্তু সন্তানাদি না হবার কারণে তিনিও চলে যান। ফলে ভদ্রলোক একাকী হয়ে পড়েন এবং সন্তানেরা পিতার একাকীত্ব নিয়ে ভাবতে থাকেন। তারা তাদের বিধবা মাকে গিয়ে বুঝিয়ে, পুরানো স্বামীর কাছে ফিরিয়ে আনেন। এতে করে তারা সবাই খুশী। মূলত ইসলাম প্রদত্ত হিল্লা বিয়ের এটাই হল উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
‘হিল্লা’ শব্দটি আরবি যার অর্থ উপায়, গতি, ব্যবস্থা, আশ্রয় কিংবা অবলম্বন। হিল্লা শব্দটি আরবি ‘হালা’ থেকে এসেছে যার অর্থ বৈধতা দেওয়া বা বৈধকরণ। সেই হিল্লা বিয়ের ধরনটি কেমন, তা উপরেই উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের দেশে কিছু মানুষ রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দেয়। অতঃপর পরবর্তীতে আফসোস করে, রাগের মাথায় কেন এমন কাজ করল? সেই ব্যক্তি কিংবা পরিবারের প্রতি দরদী হয়ে, কেউ কেউ হিল্লা বিয়ের পদ্ধতিকে এডজাষ্ট করতে নামে। সে জন্য দরকার ইসলামী নীতির পরিবর্তন, যা সম্ভব নয়। তবে ভুল ব্যাখ্যা তো দেয়া সম্ভব, সেটাই ফেরেববাজ মানুষ গ্রহণ করে। কিভাবে?
শিশুদের মিছেমিছি খেলার মত করে, তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে কোন এক পুরুষ সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সেই মহিলাকে মিছেমিছি বিয়ে করবে। লক্ষ্য মহান আল্লাহকে একটু ধোঁকায় ফেলানো! অতঃপর সেই নববধূকে আবারো তালাক দেওয়া হবে এবং সেই পুরানো মাথার চাঁদি গরম স্বামীকে আবারো বিয়ে করে সুখে দিন কাটাবে।
মূলত এটা আল্লাহর সাথে সুস্পষ্ট প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। যারা এই কাণ্ড ঘটায়, কাজি সহ যারা সাক্ষী থাকে, মিষ্টি খায় এরা সবাই প্রতারক। সবাইকে এই পাপের ভাগি হতে হবে। কারো সাথে বিয়ে হলে, সেটার পূর্ণতা ঘটে দৈহিক মিলনের মাধ্যমে। এই কাজ ব্যতীত স্ত্রী তালাক দিয়ে, হিল্লা কর্ম সম্পাদন করা আরেকটি প্রতারণা। তাছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা ব্যক্তিটি যদি তালাক না দেয়, তাকেও সেটা জোড় জবরদস্তি করা যাবেনা। সেটা আরো বড় অপরাধ।
কথা হল, সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন একজন ভদ্রলোক কোনদিন এমন ইতরামির মাধ্যমে হিল্লা বিয়ের কাজ করতে পারে না। এটা যেমন পুরুষের জন্য অমর্যাদাকর, নারীর জন্যও অপমানকর। কিছু মানুষ নিজে গোঁয়াতুর্মি, গাদ্দারী, হঠকারী, স্ত্রীকে শিক্ষা দিতে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যতার সাথে স্বীয় ঠোঁট কম্পনের আগেই তালাক দেবার জন্য মুখিয়ে থাকে। তেমন উদ্বর্ত উদ্বর্ত, উন্মত্ত কাপুরুষের জন্য শরীয়তের আইন পরিবর্তন করতেও কিছু মানুষ একটুও ভাবে না! এসব মানুষের জন্য ইসলামের একটি বিকল্প বিধানকে কদাকার করা হয়।
দরিদ্রতা, অভাব, অসন্তোষ, চাহিদা পূরণ সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের দেশের সমাজ। কিছু মানুষ এসবের দুঃচিন্তায় সদা হতশা গ্রস্থ থাকে। কখনও মেজাজ তিরিক্ষি হয়। স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হলে চরম গোস্বা হয়ে স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে বসে। ভিন্ন দিকে এসব মানুষের কাছে ধর্মের জ্ঞানও তেমন একটা থাকেনা। মাথা ঠাণ্ডা হলে আবার আফসোস করে। এই ফাঁকে কিছু দুষ্ট মানুষ ঢুকে পড়ে। তারাই বিষয়টিকে লম্বা করে। প্রকৃতই আগে যদি তালাকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারে, তাহলে হিল্লা বিয়েরও দরকার হবেনা। এজন্য করনীয় হল, শহরের মহল্লা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রদ্ধাভাজন আলেম নিয়ে পরামর্শক কমিটি বানিয়ে রাখা। যার স্বেচ্ছায় এমন জনহিতকর কাজটির আঞ্জাম দিবে। এমন কেউ দায়িত্ব নিলে, সমাজের সুস্থতা আরো সবল হবে।
Discussion about this post