ওভেন এখন আভিজাত্যের প্রতীক। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ওভেনের ব্যবহার বাড়ছে। শখের চাহিদা গুলোর মধ্যে ফ্রিজের পরেই ওভেনের স্থান। অপ্রচলিত জিনিষ বলে অনেক শিক্ষিত মানুষেরাও ওভেনের ব্যবহার জানেনা। এ ব্যাপারে ধারণা নেই কথাটি বলাটা লজ্জার মনে করে, জানতে আগ্রহী হবার পরও কারো কাছে প্রশ্ন করেনা, এমন মানুষও কম নয়। তার মধ্যে আবার বাজারে আছে কয়েক প্রকারের ওভেন। কোন ওভেনের কি কাজ কিংবা কোন কাজের জন্য কেমন ওভেন চাই, এটা নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়। নানাবিধ ওভেনের পরিচিতি
হয়ত অনেক ভাবতে পারেন আমি সমাজ ও সামাজিকতা নিয়ে লিখে থাকি, তাই বলে কি ওভেন নিয়েও লিখতে হবে? মূলত ওভেন সমস্যাটিও ভবিষ্যতে একটি সামাজিক সমস্যায় রূপ নিবে, তাই আজকের পোষ্ট। কিভাবে হবে সেটা এই সংক্রান্ত পোষ্ট পড়লেই অনেকের কাছে পরিষ্কার হবে। মূলত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং নানাবিধ বিষয় অধ্যয়নের আলোকে এই পোষ্ট সাজানো হয়েছে। পোষ্টটি ঠিক সেই প্রবাদ বাক্যের মতই সাজানো হয়েছে, ‘কলাও বেচা হবে, রথও দেখা যাবে’।
আরো পড়তে পারেন…
- মারুলা ফল প্রকৃতিকে করে পাগল
- শিক্ষা ও সমাজ : সেরা স্কুলে গেলেই সেরা ছাত্র হওয়া যাবে?
- প্রফুল্লতা অর্জনে ‘আতর বিলাস’ ও বিদঘুটে অভিজ্ঞতা অর্জন
ওভেনের প্রকৃত বাংলা অর্থ হল চুলা বা তন্দুর। প্রাচীন কাল থেকেই বেকারিতে বিস্কুট-কেক বানানোর জন্য বিশেষায়িত যে বৃহদাকার চুলা বানানো হয়; সেই তন্দুর থেকেই আধুনিক ওভেনের ধারণাটি সৃষ্টি হয়েছে। মাটি দিয়ে বানানো এসব তন্দুরেরও বহু ধরন রয়েছে, যার চাহিদা আধুনিক জমানাতেও কার্যকর। বেকারির তন্দুরে লাকড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে গরম করা হয়, পরে আগুন বন্ধ করে অর্জিত গরম হাওয়ার মধ্যে কেক-বিস্কুটের খামি ঢুকিয়ে রাখা হলে, এক পর্যায়ে তা ফুলে-ফেঁপে খাওয়ার উপযোগী হয়। তন্দুর লাকড়ি কিংবা গ্যাস দিয়েও গরম করা যায়। রুটি বানানোর তন্দুরে সার্বক্ষণিক আগুন জ্বালাতে হয়। তাজা আগুনের ঝলকানিতে রুটি ফুলে উঠে। আগুনের তেজ যত, রুটির পরিমাণও তত বাড়ে।
নিজেদের ঘরের মাটির চুলাকেও কখনও ওভেন হিসেবে কাজে লাগানো হয়। লাকড়ির চুলায় রান্না হয়ে গেলে পর, অবশিষ্ট জ্বলন্ত কয়লার প্রভাবে সেটা গরমে অনেকক্ষণ তেতে থাকে। অতঃপর সেই চুলায় মাছ-মুরগীর টুকরো লোহার শিকে ঢুকিয়ে রাখলে, দারুণ মচমচে হয়ে উঠে। আবহমান বাংলার প্রতিটি জনপদে প্রাচীন কাল থেকেই এই পদ্ধতি চালু ছিল। এই ধরনের আরেকটি বৃহদাকায় উষ্ণ চুলা বানানো হয়, বাণিজ্যিক ভাবে দৈ বানানোর জন্য। আবার কবর খননের মত মাটি খুঁড়ে, সেটাতে লাকড়ি ও কয়লা পাথর জ্বালিয়ে, গরু-ছাগলের গোশতের বড় টুকরায় মসল্লা মাখিয়ে, কলা পাতায় কিংবা এলুমিনিয়াম ফয়েল (Aluminium foil paper) পেপার জড়িয়ে সেই কবর সদৃশ চুলায় ঢুকিয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়। পরবর্তী দিন সেটা তোলা হয়। আরব দেশের সামাজিক রীতিতে এই খাদ্যের চাহিদা ব্যাপক।
এখানে যতগুলো খাদ্য প্রণালীর কথা বলা হল সব গুলোতেই তন্দুরের ব্যবহার আছে। এই তন্দুরকে ইংরেজিতে বলা হয় Oven. খাদ্যের ধরন ও সমাজ-প্রকৃতি ভেদে তন্দুর তথা Oven এর প্রকারভেদেও পার্থক্য সূচিত হয়েছে। যেমনটি রয়েছে প্রাচীন পদ্ধতির তন্দুরের মধ্যে। ফলে এক এক ধরনের কাজকে সামনে নিয়ে ভিন্ন ধরনের আধুনিক Oven এর অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। বাজারে পাওয়া আধুনিক Oven গুলো মূলত তিন প্রকার। যথা,
১. ইলেকট্রিক ওভেন – Electric Oven
২. গ্যাসীয় ওভেন – Gas Oven
৩. মাইক্রোওয়েভ ওভেন – Microwave Oven
ইলেকট্রিক ওভেন ও গ্যাসীয় ওভেনের দুটোর কাজ প্রায় একই। এই দুটো ওভেন তাপ (Heat) বাড়িয়ে কাজ করে কিন্তু ভিন্নতা রয়েছে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে। এটি ভিতরে তাপমাত্রা (Temparature) বাড়িয়ে কাজ করে। সেই বিবেচনায় Oven মূলত দুই প্রকারের। তাপীয় ওভেন ও মাইক্রোওয়েভ ওভেন।
– ইলেকট্রিক ওভেন (Electric Oven)
এটি দেখতে ভিতরে ফাঁপা প্রকৃতির একটি বাক্সের মত। বাক্সটি অনেক তাপমাত্রা ধারণ করার ক্ষমতা সম্পন্ন। এই বাক্সের ভিতরে কায়দা করে বৈদ্যুতিক কয়েল (Electric coil) প্যাঁচানো থাকে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে সেই কয়েল যখন গরম হয়ে উঠে, তখন ওভেনের ভিতরের পরিবেশ ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়। সেই উত্তপ্ত পরিবেশে মানুষ নিজের কাজ সেরে নেয়। অর্থাৎ এই ওভেনটি গরম হয় বিদ্যুতের দ্বারা। এটা টেবিলের উপরেই বসানো যায়।
– গ্যাস ওভেন (Gas Oven)
এই ওভেন দেখতে ঠিক ইলেকট্রিক ওভেনের মত। বৈদ্যুতিক কন্ট্রোল সুইচ তেমন থাকেনা, থাকলে দাম বেড়ে যাবে। কেননা এটার নামই তো গ্যাস ওভেন। এটা হল ইলেকট্রিক ওভেনের বিকল্প। তবে এগুলোর আকৃতি বড় হয়। এর পেটের ভিতরে গ্যাস দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। আগুনের তাপে ওভেনের ভিতর ধীরে ধীরে গরম হয়। এ ধরনের ওভেন গুলো ঠিক ইলেকট্রিক ওভেনের মতই গরম হয়ে উঠে। টেবিলের উপরে বসানো যায় এমন গ্যাস ওভেন আছে তবে পর্যাপ্ত নয়। কিছু গ্যাস ওভেন দেওয়ালে লটকানো যায়। বেশীর ভাগ গ্যাস ওভেন আয়তনে বড় ও ভারী। গ্যাস লাইন কিংবা গ্যাস বোতল থেকে সংযোগ দেওয়া যায়। তাই কেনার আগে শতভাগ নিশ্চিত হওয়াটা জরুরী। বহু সংখ্যক গ্যাস ওভেনেই রন্ধন পাত্র তথা Cooker সুবিধা থাকে।
– রন্ধন পাত্র (কুকার-Cooker)
লেখার এই অনুচ্ছেদের সাথে ওভেনের কোন সম্পর্ক নেই। কথাগুলো জানলে কিছু পাঠকের বিভ্রান্তি দূর হবে। নতুবা নতুন প্রশ্ন মাথায় ঘিজ ঘিজ করতে থাকবে। সেটা নিরসনের জন্যই লেখা। যখন ওভেনের সাথে লিখা থাকবে Electric Oven & Cooker কিংবা Gas Oven & Cooker তাহলে বুঝতে হবে সেটি আকারে বড় হবে এবং এটা দিয়ে ভাত-তরকারী রান্নার কাজটাও হয়ে যাবে। এর পেটের ভেতরে ওভেনের কাজ ও উপরে রান্নার কাজ চলবে। সঙ্গত কারণে এগুলো বড় ও ভারী হয়, প্রায় ফ্রিজের মত জায়গা দখল করে, তবে উচ্চতায় টেবিলের মত। তাই মাটিতে বসাতে হয়, কোন অবস্থাতেই টেবিলের উপর রাখা যায়না। রান্না ঘরে প্রয়োজনীয় জায়গা আছে কিনা আগেই যাচাই করে এই ওভেন কিনতে হয়।
– মাইক্রোওয়েভ ওভেন (Microwave Oven)
মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভিতরের একটি নির্দিষ্ট স্থানের বাতাসের অণুগুলিকে সংক্ষিপ্ত সময়ে ভয়ানক ভাবে কম্পন ঘটানো হয়। ভয়ানক কম্পনের ফলে উপস্থিত অণুগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, ফলে সৃষ্টি হয় প্রবল কৃত্রিম তাপমাত্রার। মুহূর্তেই রক্ষিত খাদ্য বস্তু গরম হয়ে উঠে। এটা হল মেশিনের আভ্যন্তরীণ কাঠামোর কথা, যা ব্যবহার কারী না জানলেও সমস্যা নেই কিন্তু ব্যবহার কারীকে এর গরমের ধরণ ও কোন জিনিষ গরম করা উচিত-অনুচিত তা জানাটা জরুরী। এটাও টেবিলের উপরে বসানো যায়। আকারে অন্য দুটো ওভেনের চেয়ে ছোট কিন্তু ওজনে ভারী।
যেহেতু কম বিদ্যুৎ খরচে সহসা রক্ষিত বস্তু গরম হয়ে উঠে, তাই এটা সবার পছন্দের মধ্যে অন্যতম। এই ওভেন মূলত কোন কিছু সহসা গরম করার কাজে বেশী ব্যবহৃত হয়। আগুনের চুলায় বাসী তরকারী দিলে টগবগিয়ে ফুটে উঠে এবং সেটা পরিশুদ্ধ হয়। মাইক্রোওয়েভ ওভেনেও বাসি তরকারী ঢুকিয়ে দিলে চুলার মত টগবগিয়ে উঠবে, তারপরও সেই তরকারী কিন্তু পরিশুদ্ধ হয়না, বাসিই থেকে যায়! এটাই হল এই ওভেনের সর্বোচ্চ ব্যতিক্রম দিক। যা অধিক সংখ্যক ব্যবহার কারীর চোখ কে ফাঁকি দেয়।
Discussion about this post