নাতী-নাতনীদের প্রতি নানা-নানী যতটা আপন, দাদা-দাদী ততটা নয় কেন? এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। ফুফুদের প্রতি অতি আন্তরিকতাকেও অনেক নাতিরা নিজেদের প্রতি অবিচার মনে করে। নানী দাদী’র আদরের ভিন্নতা
কিন্তু নানা বাড়ীর মজার কাহিনী বলতে গিয়ে, অনেকে বুক ফুলিয়ে ফেলে কিন্তু বুঝতে চেষ্টা করেনা যে, তাদের মা অন্য কারো ফুফু হয়। সেই ফুফুকে তারা কদর করেছিল বলেই, নানা বাড়ীর মজাটা ষোল কলায় পূর্ণ হয়েছিল।
যাই হোক, নাতীদের প্রতি দাদী আর নানীকে শুধু আদর-সোহাগের মানদণ্ডে বিচার করলে, দাদা-দাদীকে অনেক কঠোর মনে হতে পারে। তার বাস্তব কারণ আছে।
দাদীরা নাতীদের শাসন করে করে আদরের সাথে। পিটায়, ধমক দেয়, পড়ায় মন দিতে বলে, কষ্ট সহিষ্ণু বানায়; স্বীয় সমাজে অন্যের সাথে টিকে থাকতে লড়াই শিক্ষা দেয়। দয়া-মায়াকে উৎরে নাতিদের লড়াকু বানায় এবং প্রয়োজনে দাদা-দাদীরাও লড়ে।
এ কারণে কখনও মনে হয়, দাদা-দাদীরা যেন অনেক রূঢ় প্রকৃতির! মূলত রূঢ় ওদের হতেই হয় কেননা সময় শেষে দাদার সমুদয় সম্পদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী নাতীরাই হয়।
দাদা না মরলে তাদের পিতাও এসবের মালিক হতে পারে না। সামাজিক এই নীতির কারণেই দাবী করে যে, “দাদার বাড়ী যাচ্ছি”।
নানীদের ভূমিকা দাদীর মত হয়না। প্রতিটি মা-বাবা তার কন্যাকে আদর সোহাগ ও নিরাপত্তা দিয়ে বড় করে। তারা ভাবে তিলে তিলে বড় করে তোলা তাদের প্রিয় কন্যাটি একদিন তাদের হাতছাড়া হবে।
তাই যতদিন কাছে থাকে, ততদিন আদর-সোহাগের কমতি দেখায় না। পরবর্তীতেও পিতা-মাতার এই চরিত্র তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া নাতী-নাতীদের দিকেও ঝুঁকে পড়ে। কন্যার সন্তানদের চরিত্রের অনেকগুলো দিক, তাদের মায়ের মত হবার কারণে, নানা-নানী তাদের বয়স্ক কন্যাকে এই শিশুদের মধ্যে খুঁজে পায়।
ফলে নাতীরাও সে ধরনের নির্ভেজাল আদর পায়, যা তাদের মা শিশুকালে পেয়ে থাকতেন।
নগদ আদরের বিষয়টি সদা চোখে পড়ে বলে এটিই সদা মনে থাকে। এই আদরের স্বীকৃতির জন্যই নাতীরা বলে ‘নানা বাড়ী যাচ্ছি’। কিন্তু নানা-নানীর সম্পদের ভাগীদার নাতিরা ঠিক দাদা-দাদীর মত হয়না।
অধিকন্তু দাদা-দাদীর কড়া শাসন, ফুফুদের সন্তানদের প্রতি বিশেষ নজরের কারণে তারা ভাবে এরা মনে হয় আদরই করতে জানেনা কিংবা অন্তরে দুষমনি আছে! কিন্তু দাদা-দাদীর মৃত্যুর পরে তাদের রেখে যাওয়া সম্পদ যদি নাতিদের না হত, তখনই বুঝা যেত পৃথিবীতে কার আদরের গুরুত্ব কত?
ফাইনালি নানা-নানীর ক্ষেত্রে ওরাই সেরা আর দাদা-দাদীর ক্ষেত্রে এরাই সেরা। নাতীদের দায়িত্ব হল ওদের প্রশংসা করে, সেবা যত্ন করে স্নেহ ও সমীহ আদায় করা।
পিতা-মাতার কাজ হল এসব মুরুব্বী ও ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে সর্বদা উত্তম ও উচ্চ ধারণা দেওয়া। সন্তান যদি আদর না পায়, তাকেই এই দায়িত্ব দেওয়া যে, তুমি তা আদায় করো।
আদর কিভাবে আদায় করতে হয় সে ব্যাপারে তাদের সজাগ করে তোলা। চেষ্টা করলেই এটি পাওয়া যায় কেননা “রক্তের টান অনেক বড়”।
Discussion about this post