বাংলাদেশের বামপন্থীদের একটি সার্বজনীন চরিত্র আছে। তারা দাবী করে যে, বুদ্ধি-ভিত্তিক ও চিন্তাশীলতার দিকে তারা খুবই মেধাবী। হ্যাঁ, তাদের সাথে অবশ্যই কিছু মেধাবী ছাত্র থাকে। এদেরকেই তারা সামনের সাড়িতে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করে। তবুও চিন্তা-চেতনায় তারা চরম একদেশদর্শী, তারা শুধু নিজেদেরকেই জানে অন্যদেরকে নয়। তাদের ধারণা, তারাই সবচেয়ে বেশী বুদ্ধিমান এবং তারাই সঠিক! এর বাহিরে যারা আছে সবাই বেঠিক এবং নির্বোধ! বাংলাদেশের বামপন্থী ও ইসলাম
আরো পড়তে পারেন….
- বামপন্থার নেতিবাচকতা ও ইসলাম
- ওয়ায়েজিনদের বয়স কেমন হওয়া উচিত
- রাসুল (সা) মাটির তৈরি মানুষ, অপবাদ, অপমান না সম্মান?
বামপন্থী আদর্শের অন্যতম প্রধান শত্রু হল পূঁজি-পতি শ্রেণী। বামপন্থিদের সংগ্রাম পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে। পুঁজিবাদ বলে যে কথাটি প্রচলিত সে কথার উদ্ভাবক হলেন, বামপন্থার অন্যতম দার্শনিক Karl Marx. তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ Das Kapital ইংরেজিতে Capital বইতে পূঁজি ও পুঁজিবাদ সম্পর্কে ধারণা ও করণীয় বাৎলিয়েছেন। যদি ধরা হয়, একজন বামপন্থি সারা জীবনে মাত্র একটি বই পড়েছে। তাহলে সেই একটি বইয়ের নাম হবে Das Kapital. অর্থাৎ এটাকে বামপন্থিদের বাইবেল বলা যায়।
মূল আলোচনার বিষয় বই নিয়ে নয়। বইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এই কারণে তাদের আদর্শ ও চিন্তা সম্পর্কে ধারণা পাবার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের বামপন্থীদের কাছে পুঁজিবাদ কখনও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেনি। তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম ও ধার্মিক মানুষদেরকেই তাদের দুষমন বানিয়ে কাজ করে চলছে।
কৌতূহলের বিষয় হল, যে সব বামপন্থি ইসলাম ধর্মের বিরোধিতায় আদাজল খেয়ে নামে তাদের কাছে এই ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান আছে ভাসা ভাসা। তারা ইসলাম ধর্মকে চিন্তা করে, অষ্টাদশ শতাব্দীর খ্রিষ্টান ধর্মের মত করে এবং তা কার্ল মার্কসের ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়েই! অথচ যুক্তির কথা ছিল, তারা যার বিরোধিতা করবে, তার সম্পর্কে পরিপূর্ণ না হলেও অন্তত সম্যক জ্ঞান রাখবে।
ফলে বামপন্থিরা ধর্ম বিদ্বেষ নিয়ে যে সব কথা বলে, তার সাথে বাংলাদেশের ধার্মিক মানুষদের চিন্তা অভিরুচি সম্পর্কে খাপ খায়না। তারা অহর্নিশি নিজেদের ধর্ম বিদ্বেষী হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে, নিজেদের রক্ষার্থে পুঁজিপতিদের চাদরে আশ্রয় নিয়ে বসে। পরিণতিতে তার নিজের মত জ্ঞানী মানুষ জগত সংসারে না পাবার কারণে, ব্যক্তিজীবনেও একাকী হয়ে পড়ে।
পক্ষান্তরে ইসলাম পন্থিরা কিন্তু বামপন্থিদের সমস্যা ও দুর্বলতাগুলো কোথায় তা পয়েন্টে পয়েন্টে পরিমাপ করতে পারে এবং তারই আলোকে তারা জন মানুষের সামনে কথা বলে। মানুষ উভয়ের চরিত্র সামনে দেখতে পায় এবং ইসলাম পন্থিদের কথাকেই বিশ্বাস করে। মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী নব্বইয়ের দশকে প্রতিটি ওয়াজ মাহফিলে বামপন্থিদের ভুল চিন্তা-বিশ্বাস নিয়ে কথা বলতেন। এই এক আলেমের ওয়াজের ফলেই ষাটের দশকের গৌরবময় খ্যাতি সম্পন্ন বামপন্থিদের অবস্থান নব্বইয়ের দশকে মিয়ম্রাণ হয়ে পড়ে। উপায়হীন বামপন্থিরা এর মোকাবেলায় ব্যর্থ হত ফলে সাঈদীকে গালাগালি, কটু-মন্তব্যের মাধ্যমে উত্তর দিত।
বামপন্থিদের দাবী অনুযায়ী তাদের সাথে আছে একটি মেধাবী সম্প্রদায়। তারপরও তাদের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সমাজ ও কৃষ্টির কোন সম্পর্ক নেই! তারা দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আগবাড়ায়ে সংগ্রাম করে। তারা সংখ্যায় মুষ্টিমেয় হলেও, তাদের কর্মকাণ্ড মিডিয়া কভারেজ পায়। তবুও তারা গন-মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারে না। তার একটাই কারণ তাদের চরম ধর্ম বিদ্বেষ পড়ুন ইসলাম বিদ্বেষের কারণে।
কালের চক্করে পড়ে বামপন্থিরা কখনও আওয়ামীলীগে, কখনও বিএনপিতে, কখনও জাতীয় পার্টির রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে তাদের সাথে মিশে গেছে। তবে তারা যেখানেই যাক না কেন, নীতি আদর্শকে চরমভাবে জলাঞ্জলি দিতে পারলেও, একটি জায়গাতে এসে মৃত্যুর আগের মুহূর্তেও তারা বিদ্বেষ ও ঘৃণা ত্যাগ করতে পারে না। সেটা হল ইসলাম ধর্ম ও ধার্মিকতার প্রশ্নে।
বহু দলে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের বহু বামপন্থি নিজেরাই পুঁজিপতিতে পরিণত হয়েছে কিন্তু ইসলাম ধর্মের প্রশ্নে তারা সবাই একই বৃত্তে প্রোথিত। ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি আসক্ত এই জনপদে বামপন্থিরা একশত বছর ধরে কাজ করলেও, মানুষের অন্তরে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে নিতে পারে নি। কারণ তারা যাকে শত্রু বানিয়েছে তার সম্পর্কেই কোন জ্ঞান নেই।
Discussion about this post