একজন প্রশ্ন করেছেন, বিয়েতে কাজী ও কাবিনের দরকার কি? ঝটপট উত্তরটা লিখে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পরে দেখি প্রশ্নটা ছোট হলেও আমাদের জন্য জানাটা দরকারি। তাই আলাদা একটি পোষ্টে বিষয়টি শেয়ার করলাম। এটি প্রশ্নকর্তার জন্য সংক্ষিপ্ত উত্তর, বিস্তারিত বহু কথা পোষ্টে লিখা হয় নি। বিয়ে এবং কাজী ও কাবিন
বিয়ের জন্য অন্যতম শর্ত হল উভয়পক্ষ রাজি থাকা, মোহরানা ঠিক করা এবং অন্তত দু’জন পুরুষ সাক্ষী রাখা; এটাই ইসলামের ন্যুনতম দাবী। আগের যুগে সাক্ষী দিয়েই বিয়ে হয়ে যেত। মোহরানার কথা বার্তাও মুখে মুখেই সমাধা হত। যেহেতু ওসব নগদে হয়ে যেত, তাই পরবর্তীতে এগুলো আর নিয়ে লম্বা ঝামেলা হত না।
তারপরও তো ঘাপলার উদ্ভব হতে পারে। কারো তালাক দেওয়া কিংবা নেবার প্রবণতা হতে পারে। তখন মোহরানার অর্থের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এই বিষয়টিকে লিখিত দলিল আকারে রূপ দিতে গিয়ে জন্ম হয়েছে কাবিনের! যেহেতু কাবিন নামক কাগজের জন্ম হয়েছে ইসলাম পরবর্তী যুগে। সেহেতু কাবিন নামক দালিলিক কাগজ বানানো ছাড়া কেউ বিয়ে করলে সেটি সরকারী আদেশের ব্যত্যয় হবে বটে কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিয়েটা সঠিক বলেই বিবেচিত হবে।
মানুষ মরণশীল! আর সাক্ষীগনও আজীবন বেঁচে থাকেনা। স্বামী-স্ত্রীর সংসারের কোন এক পর্যায়ে ঝামেলা বাধলে, সাক্ষীর অভাবে সমস্যা সমাধানে ঝামেলা হয়। এক্ষেত্রে দলীল হতে পারে উত্তম পন্থা। সাক্ষীদের অবর্তমানে দলীলগুলো তখন কথা বলবে। এটা সেই দলীল যাকে আমরা কাবিন বলি। এই কাবিনের সংখ্যা একটি কন্যা, একটি স্বামী এবং আরেকটি কাজির বালামের সাথে সংযুক্ত থাকে।
বর্তমানে কাবিন খুবই জরুরী একটি দলীল। বিদেশে পরিবার নিয়ে যেতে হলে এই কাবিন টাকেও বিদেশ মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে সত্যায়িত করতে হয়। কেননা স্বামী-স্ত্রী বিদেশে চলে গেলেও, ঝগড়াঝাঁটি দেশে থেকে যায়, বিষয়টি এমন নয়। তখন বিদেশেও কাবিন দরকারি ও জরুরী বিষয় হয়ে উঠে। বিয়ে এবং কাজী ও কাবিন
মামলা আদালতে গড়ালে কাবিনের অভাবে মামলাটি মরে যেতে পারে। কাবিনখানা কোথায় রাখা হয়েছে, একটি সুখী দম্পতির ঘরে এটা বিষয় নয়। তাদের অনেকে এটা সাথেও রাখে না, মনেও থাকেনা। কিন্তু গণ্ডগোল বেধে গেলে, ঘটনা আদালতে গেলে, মামলা-মোকদ্দমায় ফায়সালার জন্য কাবিন জরুরী হয়ে উঠে। কাবীন নামক দলীল ছাড়া সঠিক বিচার বিঘ্ন হতে থাকে।
এটি পারিবারিক সমস্যা হলেও, ধর্মীয় বিষয়াদিও এতে জড়িত থাকে। যা সমাধা করা তদানিন্তন ব্রিটিশ বিচারকদের জন্য বিব্রতকর হত। এমন সমস্যা সমাধানে ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের মধ্য থেকে বাছাই করে, ধর্মীয় জ্ঞানে প্রাজ্ঞ আবার সবার কাছে সম্মানিত একজনকে নিয়োগ দিত। যার জন্য একটি সরকারী পোষ্ট সৃষ্টি করে, যার নাম কাজী।
ফলে ব্রিটিশের আদালতে মামলা আসার বহু আগে, এই কাজিরাই পারিবারিক বৈঠকের মাধ্যমে ঝামেলা মিটিয়ে দিতেন। সেজন্যই তারা ‘কাজি’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটি ব্রিটিশ সরকারের জন্যও সুবিধা হয়। মুসলমানেরা নিজেরা নিজেদের ধর্মীয় বিরোধের অনেকটা মিটিয়ে নিতে পারে। যদিও বর্তমানে অনেক কাজিরা মামলা সমাধান তো দূরের কথা বরং অতিরিক্ত ঘাঁটাঘাটি করে মামলাকে আরো জটিল করে তুলে।
ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের জন্য কাজী পদের মত এমন আরো কিছু সরকারী পদ সৃষ্টি করে। যেগুলো উত্তরাধিকারী আইনের ঝামেলা সহ নানাবিধ সামাজিক ও ধর্মীয় সমস্যাকে কমিয়ে আনবে এবং ব্রিটিশ আদালতের কাজকে কমিয়ে রাখবে। দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলা ব্যতীত, মুসলমানেরা যাতে নিজেদের সামাজিক সমস্যাগুলো নিজেদের ধর্মীয় বিধান মতে ফায়সালা করতে পারে, সেজন্য এক প্রকার ধর্মীয় পণ্ডিত তথা মৌলভী সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফলে সরকারী কাজের সাহায্যকারী ও সমাজের গ্রহণযোগ্য মৌলভী সৃষ্টির জন্য নতুন একটি মাদ্রাসা ও তার সিলেবাস প্রণয়ন করেন। যাকে বলা হয় ‘আলীয়া মাদ্রাসা’। যা আজো সরকারী মাদ্রাসা হিসেবে চালু আছে। তাই এই মাদ্রাসা থেকে সরকারী চাকুরীতে ঢুকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। আর বেসরকারি মাদ্রাসা গুলো কওমি মাদ্রাসা তথা ‘জাতীয় মাদ্রাসা’, আরো সরল বাংলায় সাধারণ জনগণের মাদ্রাসা হিসেবে পরিগণিত হয়। এই দুই ধরনের মাদ্রাসা সিষ্টেম আজো আমাদের দেশে বিদ্যমান আছে।
Discussion about this post