সুপ্রিয় পাঠক, জনস্বার্থের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টটির দু’টো অংশ। উপরের অংশটি ভুক্তভোগীর পোষ্ট থেকে নেওয়া এবং দ্বিতীয় অংশে রয়েছে আমার বিশ্লেষণ। আশা করি বিভ্রান্ত হবেন না। পোষ্টটি পড়ার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ। ব্যাংক লোণের ফ্ল্যাটে শান্তি ও সমৃদ্ধি
আরো পড়তে পারেন…
- রাষ্ট্রীয় সম্পদ মেরে ধনী হবার পরিণতি
- প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মূল অন্তরায়
- নিজের পায়ে দাঁড়ানো
আমি ২০১০ সালে #### (ব্যাংকের নাম প্রকাশ করলাম না) ব্যাংক থেকে ১৫ বছর মেয়াদী ২৭,৫০,০০০/- (সাতাশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ঋণ নিয়ে ৪৫ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। চুক্তি ছিল ৯.৯৯% হারে সুদ নিবে। সেই হিসাবে মাসিক কিস্তি পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৭,৫০০/- (সাতাশ হাজার পাঁচশত) টাকার মত।
পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সূদের হার বেড়ে গেল পর্যায়ক্রমে তা ১৪% পর্যন্ত এবং মাসিক কিস্তি গিয়ে ঠেকল ৩৪,০০০/- টাকায়! আমার পরিকল্পনা ছিল পাঁচ বছর পরে, এককালীন বাকী টাকাটা একত্রে নগদ পরিশোধ করে ঋণ মুক্ত হব।
যথারীতি পাঁচ বছর পরে ব্যাংকে গেলাম বকেয়ার হিসাব নিতে। ব্যাংক হিসেব করে জানাল আমার নামে এখনও ২৬,২৫,০০০/- (ছাব্বিশ লক্ষ পঁচিশ হাজার) টাকা বকেয়া আছে।
আমি তো অবাক, এটা কিভাবে হয়! কারণ আমি ইতি মধ্যে ২২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেই ফেলেছি!
কারণ জিজ্ঞেস করায় ব্যাংক বলল, “আপনার ১৫ বছরের ঋণের সুদ অগ্রিম হিসাব করে মাসিক কিস্তির সাথে ৯৫% হারে কেটে নেয়া হচ্ছে এবং গৃহ ঋণের এটাই নিয়ম”।
অর্থাৎ এই পাঁচ বছরে আমার ঋণের আসল কাটা গেছে মাত্র ৫% হারে। আমার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা। পরে নিজের বোকামি বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত নিলাম আর এই ফাঁদে পা দিব না। অন্যত্র অনেক মূল্যবান প্রপার্টি বিক্রি করে ব্যাংকের বকেয়া টাকাটা এক কালীন পরিশোধ করলাম।
অতএব বন্ধুগন, প্রয়োজনে ঋণ নিন, তবে আগে টার্মস্ কন্ডিশন গুলি ভাল করে বুঝে নিবেন। না হয় আমার মত ভুলের চরম মাশুল দিতে হবে।
**বর্তমানে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবার ক্ষেত্রে সুদের হার ১৪%, ১৩%, ১২%। সবাইকে এ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রহিল। Loan নেয়ার ক্ষেত্রে সবাই সচেতন হই, নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।
(ভুক্তভোগীর অংশটুকু এখানেই শেষ) ব্যাংক লোণের ফ্ল্যাটে শান্তি ও সমৃদ্ধি
আমার বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও উপসংহারে বিষয়টি এমন হয়,
– ২৭,৫০,০০০ (সাতাশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকাটাই প্রকৃত কর্জ।
– সুদের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৯.৯৯, হিসেব সহজের জন্য ধরুন সেটা ১০%
– তাহলে মোদ্দা কথায় মোট সুদ আসে ২,৭০,০০০ (দুই লক্ষ সত্তর হাজার টাকা)
– আসল আর সুদ একত্র করলে মোট টাকার পরিমাণ হয় ৩০,২০,০০০ (ত্রিশ লক্ষ বিশ হাজার)
– সাধারণ মানুষ সাদামাটা ভাবে সুদের হিসেবটি হয়ত ওভাবেই করে থাকবে।
– তারা ভাবতে থাকে, স্বপ্নের একটি ঘর করার জন্য ৫ বছরে তিন লক্ষ টাকা সুদ!!
– তারপরও পরিশোধ করাটা তার সক্ষমতার মধ্যে থাকবে।
কিন্তু হয়েছে টা কি?
– ৫ বছরের কিস্তি (৬০ মাস) মেয়াদে পরিশোধ কিস্তি পরিশোধের পরিকল্পনা ছিল।
– শুরুতে মাসিক কিস্তি ছিল ২৭,৫০০ টাকা করে কেননা সুদের পরিমাণ ৯.৯৯% হারে।
– ৫ বছরে প্রদেয় কিস্তির পরিমাণ হবার কথা ছিল ১৬,৫০,০০০ (ষোল লক্ষ পঞ্চাশ হাজার)
– কিন্তু মাঝপথে ব্যাংকের সুদ বাড়তে থাকে যা ১৪% শতাংশে গিয়ে থামে।
– এতে করে মাসিক কিস্তির টাকাটা ফুলে-ফেঁপে ২৭,৫০০ থেকে ৩৪,০০০ হয়ে যায়।
– এভাবে দিলেও ৫ বছরে ২০,৪০,০০০ (বিশ লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকা হওয়ার কথা।
– কিন্তু নানাবিধ চার্জ, এটা-ওটা মিলিয়ে তিনি দিলেন ২২,০০,০০০ (বাইশ লক্ষ) টাকা।
– এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বাকি টাকাটা একত্রে পরিশোধ করবেন
তিনি ব্যাংকে গিয়ে জানলেন যে,
– তার এখনও ২৬,২৫,০০০ টাকা বাকি আছে!
– নিশ্চয়ই মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়বে, মাথা চক্কর দিয়ে উঠবে।
– অতঃপর চক্কর বন্ধ হবার পরে যা জানলেন, তার হকিকত নিম্নরূপ।
– ২৭,৫০০ টাকার যে কিস্তি দিয়েছিলেন সে টাকাকে ব্যাংক দু’ভাগে ভাগ করেছে
– এই টাকার ৫% তথা ১৩৭৫ টাকা কর্জ শোধ বাবদ আর বাকিটা ব্যাংকের লাভের ঘরে!
– আর ৩৪,০০০ হাজারের কিস্তি থেকে মাত্র ১৭০০ টাকার কর্জ পরিশোধ করেছেন।
– অর্থাৎ ৬০ মাস ধরে ৩৪ হাজার টাকার কিস্তি শোধ করার পরে, প্রকৃত শোধের পরিমাণ মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকা
– ওদিকে নিজের পকেটের ২২ লাখ টাকাটা ব্যাংকের খরচের জন্য ব্যয় হয়েছে!
একটি বাড়ি সুখ, স্বপ্ন ও শান্তি
প্রকৃতই সুখ ও শান্তি আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ বলেছেন, সুদে রয়েছে অকল্যাণ আর ক্ষতি। আল্লাহ আরো বলেছেন, “তোমরা ব্যয় কর সেখান থেকে, যা তোমাদের রিজিক দেওয়া হয়েছে”। সে হিসেবে অগ্রিম কর্জ করে ঘর করার টাকাটি রিজিকের মধ্যে ধার্য হয় না, যতক্ষণ না তা হাতে উপস্থিত থাকে। টাকাটা হাতে থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে যত সহজ হয়, কর্জের মাধ্যমে করতে গেলে অনিশ্চিত সমস্যার ঝুঁকি থাকে।
দিন শেষে সে ঘরে শান্তি আসবে কিনা, নিজের থাকা হবে কিনা সে প্রশ্ন তো রয়েই যায়। ওমর (রা) তার সন্তানের ইদের জামার টাকাটিও কর্জ হিসেবে পায় নাই এই মর্মে যে, আগামী মাসে তিনি বাঁচবেন কিনা এই অজুহাতে! যাক, আজকের বিষয় সেটি নয়।
উপরে ব্যাংকের কর্জের যে হিসেবটি দেওয়া হয়েছে। ইসলামী অর্থনীতি ও সুদি অর্থ ব্যবস্থার কথা তুলে, অনুগ্রহ করে কোন কটূক্তি করবেন না। তিনি খোলামেলা ভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন বলেই আমরা তার অন্তঃ-নিহিত কথাগুলো জানতে পেরেছি। সে জন্য তাঁর প্রতি রইল সমবেদনা ও ধন্যবাদ।
তিনি চরম লোকসান দিয়েই সুদের অপকারিতা বুঝতে পেরেছেন এবং জনস্বার্থে তা প্রকাশ করেছেন। আগামীকাল বাঁচবে কিনা, টাকার প্রবাহ গতিশীল রবে কিনা, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। তাই জীবনের লম্বা পরিকল্পনার ভুল পদক্ষেপে একজন চৌকশ মানুষকে পর্যদূস্ত করে দিতে পারে।
আর আমাদের সবার উচিত কোন চুক্তি করা হলে যেন, বিস্তারিত পড়ে নেই, জেনে নেই। প্রয়োজনে জানাশোনা মানুষের সাহায্য নেই। চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে নেই, কোথাও দস্তখত করতে নেই; এমনকি তা যদি হয় নিজের সন্তানও।
Discussion about this post