তৃণভোজী পুরুষ প্রাণী, যেমন গরু, ছাগল, মহিষ, ঘোড়া, ভেড়া, হরিণ কিংবা জিরাফ জেব্রা; স্ত্রী প্রাণীর মূত্রের বা যৌনাঙ্গের ঘ্রাণ নিয়ে নাক ও ঠোঁট উল্টিয়ে এক ধরনের অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দেখায়।
মানুষের সমালোচনার চোখে বিষয়টি দেখতে যেন, “এহ হে! কি বিতি-কিচ্ছিরী গন্ধরে বাবা” এর মত বিষয়! না, তারা গন্ধের কারণে নাক-মুখ কুঁচকায় না!
মূলত মুখ বাঁকানো বা কুঁচকানোটা কোনো বিরক্তি বা নোংরা গন্ধের প্রতিক্রিয়া নয়। এটা বরং মাদি প্রাণীর শারীরিক আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য জানার জন্যেই নর প্রাণীর প্রতি মহান আল্লাহ প্রদত্ত একটি বৈশিষ্ট্যের প্রতিক্রিয়া!
- এই কাজের মূল উদ্দেশ্য, স্ত্রী প্রাণীটির যৌন অবস্থা বা প্রজনন ক্ষমতা (estrous status) যাচাই করা। এতে করে নির্দিষ্ট প্রাণী ব্যতীত, গড় পড়তা সকল মাদী প্রাণী, নর প্রাণীর দ্বারা উৎপীড়িত হয়না।
- এই পদ্ধতিতে পুরুষ প্রাণী, মাদি প্রাণীর বয়স ও সন্তান ধারণের সক্ষমতাও যাচাই করে নেয়। ফলে প্রাণীদের মধ্যে শিশু ধর্ষণ কিংবা বৃদ্ধা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনা।
- পুরুষ প্রাণীদের মধ্যে এমন আচরণ শুধু তৃণভোজীরা নয় বহু স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন বিড়াল, কুকুর, শৃগাল, নেকড়ে, বাঘ-সিংহ, হাতি সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
তাহলে নাক উল্টানোর রহস্য কি?
প্রাণীদের উপরের ঠোঁটের নীচে এবং দাঁতের মাড়ির উপরে ঘ্রাণ সংবেদনশীল অঙ্গ থাকে। যাকে ‘ভোমেরোনাসাল অর্গান’ বা ‘জেকবসন’স অর্গান’ (Jacobson’s Organ) বলা হয়। যেটা ঠোটের আবরণের নীচে সদা বন্ধ থাকে। যখন নর প্রাণীদের ব্যক্তিগত বিশেষ প্রয়োজনে ল্যাবরেটরি টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। তখন মাদি প্রাণীর পাছায় ঠোঁট ও দাঁত ঘষে কিছু নমুনা Sample লাগায় এবং ঠোঁট উল্টিয়ে, দাঁত বের করে; নাকের ঘ্রাণের সাথে মাদি প্রাণীর প্রাপ্ত নমুনা তথা ফেরোমনের ঘ্রাণ যুক্ত করে শ্বাস নেয়। তখন তারা বিষয়টি নির্ধারণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয়, ফ্লেমেন প্রতিক্রিয়া বা Flehmen Rresponse.
প্রাণীদের এই জৈবিক প্রতিক্রিয়া হাজার-লাখো বছর ধরে। যখন বিজ্ঞানের তত্ত্ব সৃষ্টি হয়নি। মহান আল্লাহ তার একটি নির্ধারিত পন্থা ও পদ্ধতিতে প্রাণী সমাজের মধ্যেও একটি অদৃশ্য শৃঙ্খলা বজায় রেখেছেন। যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
পরিবর্তন শুধু মানুষের মধ্যেই আছে কেননা মানুষকে এ বিষয়ে কিছুটা নড়া-চড়ার জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। মানুষের মধ্যে কেউ এটাকে কখনও ভাল কাজে লাগায় কেউ বিপদজনক কাজে লাগায়।
Discussion about this post