মানব সভ্যতার ইতিহাসে পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। মানুষ কবে থেকে পোশাক পড়া শুরু করেছে, পোশাক পড়ার কেনই বা প্রয়োজন হয়েছে? পোশাকের জন্ম কি শুধু লজ্জা নিবারণের জন্য? নাকি পরিবেশের আর্দ্রতা-উষ্ণতা থেকে বাচার জন্য? বিজ্ঞানীরা এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে বেগ পেতে হচ্ছে। মানব জীবনে পোশাক এলো কবে
আরো পড়ুন…
- পৃথিবী যখন দোলনা
- পরিবেশের সাথে শত্রুতা
- চলুন বিড়াল-কুকুর থেকে শিখি
Oxford Academic এর Molecular Biology and Evolution চ্যাপ্টার থেকে একটি থিউরি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ৪০ থেকে ৫০ হাজার বছর পূর্ব থেকেই মানুষের জীবনে পোশাকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল।
উকুনের DNA টেস্ট ও গবেষণার ফলাফল থেকে তারা আরেকটি নতুন তথ্য পায়, ফলে সিদ্ধান্তকে আরেকটু পরিবর্তন করে বলছেন যে, মূলত ৮৩ থেকে ১৭০ হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ পোশাকের ব্যবহার কিংবা প্রয়োজনীয়তা শুরু করেছিল! কেননা এই সময়ের আগেই মানুষ তাদের দেহের ঘন লোম হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে মানব দেহে বিচরণকারী উকুনের টিকে থাকার জন্য, পোশাকের সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হতে থাকে। DNA পরীক্ষার মধ্যে বিজ্ঞানীরা এমন আলামত পেয়েছেন।
দুনিয়ার জীবনে পোশাক শুধু মানুষেই পড়ে থাকে। পৃথিবীতে বিচরণ কারী অন্য কোন প্রাণীর পোশাক পড়ার দরকার হয়না। মানুষের দৃশ্যমান জ্ঞান থেকেও অনুমিত হয় যে, পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য, অন্য কোন প্রাণীর আদৌ পোশাকের দরকার হবে কিনা? যদিও বিজ্ঞানীরা “নিয়ান্ডারথাল” নামে বিলুপ্ত হওয়া, অনেকটা মানুষের মত দেখতে একটি প্রাণীর দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছে; যাদের খাসিয়ত ছিল প্রায় মানুষের মতই! যদিও তারা পৃথিবী থেকে প্রায় ১৭০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। (সুযোগ হলে এ বিষয়ে কোন একটি লিখা আলাদাভাবে লিখা হবে ইনশায়াল্লাহ)
যাই হউক, কালের বিবর্তনে বর্তমান পর্যন্ত এসে, মানুষ পোশাকের ব্যবহার শিখেছে কিন্তু এ ধরনের কাছাকাছি উদাহরণ অন্য কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে নেই! বিবর্তনের কথাই হল, প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য যা দরকার,একসময় তার জন্য যুতসই একটি উপায় তার শারীরিক কাঠামোর মধ্যেই সৃষ্টি হয়ে যাবে। উপরোক্ত গবেষণার আলোকে আমরা দেখতে পাই, মানুষের ক্ষেত্রে তেমন বিকল্প কাঠামো সৃষ্টি না হয়ে বরং মানুষের বুদ্ধি প্রয়োগের ভিন্ন মাত্রা শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীতে তারা কাপড় পড়াই শুরু করেছে! কিন্তু হুবহু এমন কিংবা কাছাকাছি আরেকটি একটি ঘটনা অন্য কোন প্রাণীর ক্ষেত্রেই ঘটেনি! এটা থেকে প্রমাণিত হল, পৃথিবীতে মানুষ সত্যিই এক ব্যতিক্রমী সৃষ্টি।
মানুষকে যদি পৃথিবীতে সৃষ্ট অন্য প্রাণীদের সাথে তুলনা করা হয়। তাহলে দেখা যায়, মানুষের কিছু বিষয় অন্য প্রাণীদের সাথে মিলে না। যেমন প্রকৃতির সাথে মিলে থাকার জন্য, মানুষের দেহে ঘন-লম্বা লোমের দরকার হবে। চামড়ার বৈশিষ্ট্য বর্তমানের মত হওয়া চলবে না বরং কিছুটা পুরু হতে হবে। নতুবা ব্যাঙ, গিরগিটি, শিং মাছের মত লোম বিহীন প্রাণীদের মত ভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতার দরকার হবে কিন্তু তার কোনটাই হয়নি! উল্টো মাঝপথে মানুষ বুদ্ধি খাটিয়ে পোশাকের ব্যবহার শিখে এবং দিনে দিনে নতুনত্ব এনে আবিষ্কারকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে! এই পর্যন্ত প্রমাণিত তথ্য মতে সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগের একটি পোষাক পাওয়া গিয়েছে, যা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওয়েব পেইজে আছে।
পোশাক নিয়ে বিজ্ঞানের ধারণা এমন হলেও, ইসলাম ধর্মে মানুষের পোশাক সম্পর্কে পুরোপুরি ভিন্ন ধারণা দেওয়া হয়েছে। যা আরেকটি অধ্যায়ে শেষ করতে সচেষ্ট হব ইনশায়াল্লাহ।
Discussion about this post