বাঁশ বাংলাদেশের একটি অবহেলিত উদ্ভিদ। বাঁশ চিনেনা এমন চালাক মানুষ বাংলাদেশে অন্তত একজনও পাওয়া যাবেনা!
মূলত বাঁশের সাথে পুরো দুনিয়ার সকল মানুষই কম বেশী পরিচিত। তেলাপোকার পাখা গজানোর পরে কখনও সে নিজেকে পাখি মনে করে আকাশে উড়তে চায়।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন বাঁশ নাকি এক প্রকার ঘাস! তাই সেও কবি-সাহিত্যিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তেলাপোকার মত আকাশ ফুড়ে তাল গাছের উপরে মাথা তুলে দাড়াতে চায়।
ঘাসকুলের মাঝে বাঁশের রয়েছে সম্ভ্রান্ত শ্রেণি কিংবা উঁচু বংশের চরিত্র। তাই তাকে মানুষেরা ভুল করে কখনও গাছ বলে সম্বোধন করে। এ দেশের মানুষের কাছে বাঁশ একটি সহজলভ্য মূল্যবান সম্পদ।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর তালগাছ কবিতায় তাল বংশের কিছুটা সম্মান দিলেও; বাংলাভাষায় আর কোন কবিকে এমন পাওয়া যায় নি, যিনি একক একটি গাছকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন!
তবে ফলদার বৃক্ষের ফল ও ফুল নিয়ে অনেক কবি-সাহিত্যিক তাদের মূল্যবান রচনা লিখে গেছেন। যতীন্দ্র মোহন বাগচী তার কবিতায় বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ দেখেছেন।
এখানে বাঁশ মুখ্য বিষয় ছিলনা, কবির কাছে মুখ্য বিষয় ছিল বাঁশ পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশের চাঁদ দেখা। বিভিন্ন প্রকারের ফল-ফুলের রচনা সমৃদ্ধ কাহিনী শিশুতোষ সাহিত্যে ছড়িয়ে থাকলেও, নিরস বাঁশ কোনদিনই কবি-সাহিত্যিকের কাছে প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। যাই হোক আসল কথায় আসা যাক,
বাঁশের জীবন
বাঁশ আর মানুষের বন্ধুত্ব, বাঁশের জন্মের পরদিন থেকেই শুরু হয়। বাঁশ মানুষকে ভালবেসে সহযোগিতা করলেও মানুষের কাছে বাঁশ কোনদিন গুরুত্ব পায়নি।
কেননা বাঁশের কোন রস নাই, ফল নাই, বিচি নাই এমন কি সে সহজে ফুলও দেয়না, পাতাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়না! বড়জোর দু’একটি সন্তান জন্ম দিয়েই তার জীবনের লক্ষ্য শেষ করে।
বাংলাদেশে বহু প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায় যেমন, মূলী, মিতিয়া, ছড়ি, আইক্কা, বাইজা, বররা, মাকাল, তল্লা ইত্যাদি। এই নাম গুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের মত করে দেওয়া।
মোটা, চিকন, লম্বা, পুরুত্ব ও ভিতরের ফাঁপা অংশ মিলিয়ে বাঁশের বিভিন্ন নাম ও প্রজাতি ঠিক করা হয়। ব্যবহারের ক্ষেত্রে ও স্বাস্থ্যগত বিচারে স্বাস্থ্যবান, স্বাস্থ্যহীন, রুগ্ন, শিশু, জীবিত ও মৃত সকল বাঁশই মানুষের জন্য উপকারী।
জীবিত ও মৃত, উভয় বাঁশের দেহ দিয়েই মানবজাতি নিজের মত করে উপকার সেরে নেয়। মানব জীবনের সর্বাবস্থায় যে বাঁশ এত উপকারী, সে বাঁশ এখনও বাংলাদেশের অর্থকড়ি সম্পদের মধ্যে গণ্য হয়নি, এটা বাঁশের প্রতি একটি রাষ্ট্রীয় অবহেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
বাংলাদেশের সর্বত্র কম-বেশী বাঁশ উৎপন্ন হলেও; চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকাতেই বাঁশের উৎপাত বেশী! এই সমস্যা লাঘবে মানব সন্তানও কম যায়না! তারাও শিশু বাঁশকে এক কোপে কেটে, ভাজি-ভর্তা বানিয়ে দাঁতে চিবিয়ে খায় আর গোস্বা হজম করে।
মানব জীবনে বাঁশের উপকারীতা
মানুষের সাথে লড়াই করে যে সমস্ত বাঁশ কিশোর বয়স অবধি পৌঁছে যায়। সে শক্ত হবার আগে মানুষ তাকে ঝুড়ি, কুলা, চালুন, পাটি, বাড়ি-ঘরের বেড়া, হাত পাখা, মাদুর, লাই, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম, ঘরের নিত্য ব্যবহার্য জিনিষ তৈরি করে।
সেভাবে বাঁশের যৌবন কাল হল সবচেয়ে দামী কাল! তখন বাঁশ দিয়ে ঘর, বেড়া, চাল, কনক্রিটের গাঁথুনি, শক্ত মাচা সহ যাবতীয় কাজে ব্যবহার হয়।
বৃদ্ধ হবার কারণে বাঁশের কদর ও সম্মান কখনও কমে না বরং তখনও মানব জীবনে তার গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা অপরিসীম থাকে। তখন বাঁশ দিয়ে পানি আটকানোর বেড়া, দালানে উঠার মই, মারামারি করার জন্য সূচালো অস্ত্র, ভার বহন করার জন্য ‘ভারী’ হিসেবে যথেষ্ট ব্যবহৃত হয়।
বাঁশের শাখা প্রশাখা কিংবা আস্তা বাঁশটাই উন্নত কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাঁশের শাখা-প্রশাখা কাগজের কলে পাঠাতে না পারলেও এসব ক্ষুদ্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের জন্য বড় প্রয়োজনীয় উপকরণ।
যাদের পুকুর আছে তারা বাঁশের প্রত্যঙ্গ পুকুরে ফেলে রাখে। ফলে চোর আর জাল ফেলে মাছ চুরি করতে পারেনা। ওদিকে বাঁশের গায়ে লেগে থাকা পিচ্ছিল নোংরা মাছের খুব পছন্দ। তা দিয়েই অলস মাছ সকাল-বিকাল-সন্ধ্যার নাস্তা সেরে নেয়।
বাঁশ এমন এক সম্মানিত ঘাস, যা পানিতে ফেললে পানি কখনও দুষিত হয়না বরং মাছ, শামুক, ঝিনুকের উপকার হয়। তাদের বংশ বিস্তারে সহায়ক হয়।
পুকুরের তলানিতে সেঁটে থাকা শামুক, ঝিনুক এই কর্দমাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে উঠেই বর্ষার নতুন পানির স্বাদ গ্রহণ করে।
পুকুর নেই বলে বাঁশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করতে না পেরে অনেক মানুষ হতাশায় আছে! না, না, এমন কোন খবর কখনও শোনা যায়নি। তারাও নিশ্চিন্তে মনের সুখে ভিন্ন কাজে বাঁশের অঙ্গ ব্যবহার করতে পারে।
তারা বাঁশের ছিপা নিজেদের ক্ষেতে-খামারে মাটিতে গেঁথে দিতে পারে আর ওদিকে সিম, বরবটি, করলা সহ সমুদয় লতা-গুল্ম বাঁশের চিকন শরীর বেয়ে উপরে উঠতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে!
ফাঁকতালে লতা আর বাঁশের প্রত্যঙ্গের জঞ্জালের ফাঁকে ঢুকে ঘুঘু, বুলবুলি, টুনটুনি তাদের সংসারের বংশ ধরে রাখার দায়িত্বটুকু পালন করে নেয়।
বাঁশ ব্যবহারের জন্য যদি কারো ক্ষেত-খামারও না থাকে, তাহলে গোস্বা করে চুলোর আগুনে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। আগুন, বাঁশের সান্নিধ্য পেলে খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠে।
রাজনীতির মাঠে বাঁশের ব্যবহার
রাজনীতিবিদেরা যেভাবে রাজনীতির মাঠ গরম করে নিজের ফায়দা তুলে নেয়, সেভাবে চালাক মানুষেরা আগুনের উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের জন্য চা বানায়, ভাত-তরকারী রান্নার কাজটিও সেরে নেয়।
তাছাড়া এই বাঁশ নিপুণ-দক্ষ কারিগরের হাতে পড়লে বাঁশকে আর পানিতে-আগুনে আত্মাহুতি দিয়ে হয়না। মৃত বাঁশের গোড়ালি দিয়ে কলম রাখার পাত্র, সিগারেটের ছাইদানি, নূনদানি, পানদানি, চুনদানি বানিয়ে ধনী-বিত্তশালী ব্যক্তিদের শো কেসে স্থান করে দিতে পারে।
তাছাড়া বাঁশ যদি না থাকত, তাহলে চারু শিল্প ও কারুকলা বসে যেত। হিন্দুরা পূজার জন্য প্রতিমা বানাতে ঝামেলায় পড়ত। বাঁশের অভাবে ঘটা করে বাঙ্গালী সংস্কৃতি প্রদর্শনে ব্যাঘাত ঘটত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার চৌকশ ছাত্ররা কখনও বৈশাখী মেলার ভুত, পেঁচা, ময়ূর বানিয়ে রোড শো করার কথা চিন্তাই করতে পারত না!
বাঁশের গুণ, গুরুত্ব ও ব্যবহারের কথা রাত-দিন লিখে শেষ করা যাবে না। হিরোইন, আফিম, গাঁজা, তামাক এসব গুল্ম থেকে উৎপন্ন হলেও, এসবের চাষ ও সংরক্ষণ অবৈধ, অপরাধ।
সেই বিচারে বাঁশ কোন অবৈধ উদ্ভিদ নয়। তবে বাঁশের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে কদাচিৎ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনও বাঁশকেও অস্থায়ী ভাবে অবৈধ বলে থাকে কিন্তু স্থায়ী ব্যবহারের মাঝে বাঁশের মেলা কদর!
ঔষধ হিসেবে বাঁশ
যেমন, বাঁশ দিয়ে কবিরাজেরা বংশলোচন ঔষধ তৈরি করে। বাঁশ দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ লিখতে শিখে। বাঁশের বেত দিয়ে পিটিয়ে গাধা মার্কা ছাত্রকে মানুষ বানানো হয়।
সেভাবে জীন ভুত তাড়াতে বৈদ্যরা বাঁশের ছিপা ব্যবহার করে। বাঁশের তাজা পাতা সিদ্ধ করে গাভীর দুধ বাড়ানোর খাদ্য তৈরি করে। বাঁশের শলা দিয়ে কাবাব পোড়ানো, আলু সিদ্ধ, পিঠা সিদ্ধ, দাঁতের খিলাল সহ হাজারো কাজে ব্যবহার হয়।
মিছিল-মিটিংয়ে বাঁশের ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। প্ল্যাকার্ড বহন, ব্যানার টাঙ্গানো, সামিয়ানার খুঁটি হিসেবে বাঁশের ব্যবহার যথেষ্ট। সমাবেশে হামলা হলে কিংবা অপরের সমাবেশ পণ্ড করতে হলে প্ল্যাকার্ডের বাঁশ খুবই কাজে আসে।
তাইতে অনেক পণ্ডিত বুদ্ধিজীবী কলেজ-ভার্সিটিতে বাঁশ চাষ ও সংরক্ষণ করার জন্য জোড় তাগাদা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হলে দা, ছুরি, তলোয়ারের পিছনে না দৌড়ে হাতের কাছে পাওয়া বাঁশ নিয়েই হামলা করতে পারবে।
ফলে যেভাবে নিহতের সংখ্যা কমবে সেভাবে ছাত্ররাও সহজে নিজেদের উত্তেজনা প্রশমিত করতে পারবে।
মানব জীবনের অন্তিম যাত্রার, শেষ উপকরণটির নাম হল বাঁশ। শিশুকালে বাঁশের দোলনা দিয়ে শুরু করে, মরণ কালে লাশ কবরে রাখার পর, দুনিয়ার জীবনের শেষ ছাদখানা নির্মিত হয় বাঁশ দিয়ে।
চিতায় লাশ জ্বালানোর সময়, তাড়াতাড়ি ছহি সালামতে লাশকে ছাই বানাতে বাঁশের গুঁতোর বিকল্প নাই। বন্যার পানিতে যখন দেশ সয়লাব তখন নৌকা থাকুক, ভেলা থাকুক, বড় পাতিলে চড়ে কেউ ভাসতে থাকুক কিন্তু একটি বাঁশ না থাকলে সবই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
একটি বাঁশের অভাবে, সে সময় হাজারো মানুষের সাহায্যের ধ্বনি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। বেওয়ারিশ লাশ ও দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির শেষ বস্ত্রটি বানানো হয় বাঁশের তৈরি চাটাই দিয়ে।
শিক্ষার অবদানে বাঁশ
দেশের অতীতের সকল প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বিচারপতি, সেনাপতি থেকে শুরু করে ছাপোষা কেরানী পর্যন্ত সকলেই তৈলাক্ত বাঁশে বানরের বেয়ে উঠা-নামার অংক কষেই শিক্ষিত হয়েছেন।
বাঁশ কোন ফলজ বৃক্ষ নয়, ফুলের জন্য তার কোন সুনাম-সুখ্যাতি নাই। হাজারো নাই’য়ের মাঝেও বাঁশ মানুষের জন্য খুবই দরকারি উদ্ভিদ। প্রচুর বাঁশের উৎপত্তিস্থল হওয়াতে চন্দ্রঘোনায় কাগজের কল প্রতিষ্ঠিত হয়।
কাগজ হিসেবে বাঁশের কাগজ সেরা; সুন্দর, উজ্জ্বল ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। বাঁশ সর্বদা কাটতে হয়, যদি রীতিমত কাটা না হয়, হাজারো বাঁশের জন্ম হয়ে মাটি শক্ত ভাবে চিপে যায়, মাটিতে পুষ্টি থাকেনা ফলে বাঁশে ফুল চলে আসে; এতে বাঁশ বাগান ধ্বংস হয়ে যায়।
বাঁশ নিজের গোরা থেকে সরাসরি বাচ্চার জন্ম দেয়। মানুষ অন্যান্য গাছের বাচ্চাকে সহজে আদর করতে পারলেও বাঁশের বাচ্চার গায়ে হাত দিলে খবর আছে! শিশু বাঁশের লক্ষ লক্ষ খাড়া লোম, মানুষের দেহে অনায়াসে বিদ্ধ হয়। ডাক্তারের বাপের সাধ্য নাই, সে লোম থেকে রোগীকে উদ্ধার করে।
তাই তো বনের বানরদের কোন কাজ না থাকলে বাঁশ বনে গিয়ে, শিশু বাঁশ নিয়ে বাঁদরামি আর ফাজলামো করে দিন কাটায়। পরে কয়েক সপ্তাহ বসে বসে শরীর থেকে তা পরিষ্কার করার আশায় গা চুলকায়।
বাঁশে যখন ফুল আসে, তখন কৃষকদের মাথায় হাত পড়ে, তারা দুর্ভিক্ষের আশঙ্ক্ষায় দুঃচিন্তা গ্রস্থ হয়ে পড়ে। বাঁশে ফুল আসা মানে, সে বনের বাঁশের গোষ্ঠী সমূলে ধ্বংস হওয়া। তারপরের বছর থেকে আর কোনদিন সে বনে বাঁশ জন্মাবে না।
তাজ্জবের কথা! কৃষকের দুঃচিন্তা কিন্তু বাঁশের অস্তিত্ব বিলীন নিয়ে নয়! দুঃচিন্তা অন্য খানে। বাঁশের ফুলের গন্ধে সকল বয়সের ইঁদুরের দেহে নতুন করে নব যৌবনের জোয়ার আসে। বালিকা, বৃদ্ধা, শিশু, বন্ধ্যা প্রকৃতির সকল ইঁদুরের অসম্ভব প্রকারের প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে যায়, আর পুরুষ ইঁদুরের হয় পোয়াবারো।
সে বছর অগণিত ইঁদুরের জন্ম হবে, ইঁদুরের দল পাশের অঞ্চলেও সয়লাব হবে, বাংলায় যাবে বলে “ইঁদুর বন্যা”। এই ইঁদুর কৃষকের ফসলের মাঠ ও বাড়ীর সম্পদের সর্বনাশ করবে। ধনী চাষিকে গরীব বানিয়ে ছাড়বে।
এত কিছুর মাঝেও ইঁদুরের এই সর্বনাশে দীর্ঘমেয়াদী উপকার ও আছে। ইঁদুরের বিশ্রামের সময়ে বাঁশ বাগানের, বাঁশের পরিত্যক্ত গোরা গুলো কাটতে থাকবে, মাটিতে গর্ত করে, মাটিকে ঝুরঝুর করবে। কয়েক বছরের বৃষ্টির পর মাটি আবারো উর্বর ও নরম হবে।
ইঁদুরের মাধ্যমে ঝুরঝুরে হওয়া মাটিতে, নতুন করে আবার বাঁশ বাগানের জন্ম হবে।
এতো গেল দৃশ্যমান বাঁশের কথা। আমাদের সমাজে অদৃশ্য বাঁশের ব্যবহারও কিন্তু কম নয়। কেউ কাউকে অতিমাত্রায় প্রশংসা করলে সে ব্যক্তিকে বন্ধুরা প্রশ্ন করে, তিনি কি প্রশংসা করল, নাকি বাঁশ দিল?
রাজনীতির মাঠে ময়দানে এধরনের প্রকাশ্য বাঁশ থেরাপি চলছে বহুকাল ধরেই। সবাই একে অপরকে প্রশংসার বাঁশ, উত্তেজনার বাঁশ, গোস্বার বাঁশ দিয়েই চলছেন।
যাকে বাঁশ দেয়া হল তার কাছে তো খারাপ লাগবেই, অধিকন্তু যিনি বাঁশ দিয়েছেন তাকেও প্রশ্ন করা হয় আপনি যে বাঁশ দিয়েছেন তা’কি গিরা যুক্ত, নাকি মসৃণ?
এই প্রশ্ন সুখের আশায় করা হয় না। বরং বাঁশ দেওয়ার পরিমাণ ও মাত্রাটা অনুধাবন করার জন্যই। বাঁশ দেওয়া, বাঁশ খাওয়া বাংলাদেশে বিব্রতকর হলেও; আরব দেশে বাঁশ দিলে কিন্তু সম্মান ও মর্যাদা দুটোই বাড়ে।
বাঁশের উপসংহার
কোন ইঞ্জিনিয়ারকে ‘বাশ ইঞ্জিনিয়ার’ বলা হলে তিন খুবই খুশী হন। কেননা বাশ এখানে সম্মানের উপাধি। সরকারী কাজে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, কাজ হাসিল করতে চাইলে ‘বাশ থেরাপি’ আরব দেশে দারুণ কার্যকর।
মানব জীবনের শুরুতে প্রথম সুর-বাদ্য ছিল বাঁশের সৃষ্টি। তাই বাঁশির প্রতি তন্ময়তা সকল যুগে সকল জাতিতেই অনেক প্রবল।
কথায় আছে বাঁশের তৈরি বাঁশির সুরে নাকি জ্বীন, পরী, সাপ পর্যন্ত ঘর ছাড়ে। তবে মর্তের বহু মানুষ যে বাঁশির সূরে ঘর ছেড়েছে তার প্রমাণ তো অহরহ আছে।
ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া আর পল্লী-গানের প্রধান যন্ত্রের নাম বাঁশের বাঁশি। হিন্দুরা বলেন, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তো বাঁশের বাঁশির সূর দিয়েই বৃন্দাবনকে মাতিয়ে রাখতেন।
ইহুদীদের চিন্তা মতে মানব জাতির মা হাওয়া (আ) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন এই বাঁশের বাঁশির সুর দিয়েই। এই বাঁশ মানব জাতিকে যেভাবে ধাক্কা দিয়ে লটিকিয়ে রেখেছে সেভাবে বাঁশের বাঁশির সুর দিয়েই মানব জাতিকে ভুলিয়ে রেখেছে।
তাই বাঁশ কোন সাধারণ সৃষ্টি নয়। মহান আল্লাহর এক ব্যতিক্রম ধর্মী পরীক্ষা।
Discussion about this post