ঘরে মেহমান হিসেবে খালা আর ফুফু হল সবচেয়ে কাছের আত্মীয়। ওদের আগমনে ঘরের পরিবেশ পরিস্থিতি বদলে যায়। মা-বাবা দু’জনেরই ব্যস্ততা বেড়ে যায় এবং সন্তানেরা কিছুটা স্বাধীনতা বোধ করে। ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। মেহমান যখন খালা আর ফুফু
আরো পড়তে পারেন…
- শিশুদের চরিত্র অনুধাবন ও পিতা-মাতার দায়িত্ববোধ
- মানব শিশুর জন্মগত বৈশিষ্ট্য তার চলার পথ রচনা করে।
- উপকারী সন্তানের বাবা-মা হতে চাইলে, তাকে প্রতিদান শিক্ষা দিন
অনেকেই বলে থাকেন, কোন কোন সংসারে খালারা যতটুকু আদর যত্ন পায় ফুফুরা ততটুকু পায় না। কথাটি সর্বত্রই সত্য না হলেও, কদাচিৎ এমন চিত্র দেখা যায়। তার পিছনে কাজ করে কয়েকটি উপাদান।
সকল খালারই মায়ের বোন। আর ঘরে মেহমানদারীই প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে গৃহিণীর মর্জির উপর। কেননা কষ্টের বেশীর ভাগ ধকল তার উপর দিয়েই যায়। একজন গৃহিণী কার জন্য কতটা ধকল সহ্য করবে, সেটা তাই ইচ্ছে ও আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে।
সঙ্গত কারণে খালাম্মারা বাড়ীতে আসলে বোন অতি আন্তরিক হয়। সেই সুবাদে তারা খাতির যত্ন একটু বেশী পায়। খালাদের কাছে বোনের শ্বশুর বাড়ীর সবই নূতন। তাই তাদের সব বিষয় নিয়েই জানতে আগ্রহ থাকে। আন্তরিকতা বাড়ার এটা ব্ড় উপায় হল, কারো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হওয়া। বোনের শ্বশুর বাড়ির কাহিনী অন্য বোনকে বলতে পারা, খাতির যত্ন পাবার মূল কারণ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এমন মেহমানদের নিয়ে ঘরের কর্তারও কোন অনাগ্রহ থাকে না। সুতরাং খালাদের আগমনে ঘরে কোন বিরূপ পরিস্থিতি থাকে না।
ফুফুরা হল বাপের বোন। তারা মেহমান হিসেবে ভাইয়ের ঘরে আসলেও গৃহকর্তার পক্ষে গৃহিণীর মত খাতির যত্ন করতে পারেন না। অনেক গৃহিণী স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়েই তার বোনদের যত্ন করে। বোনেরাও বুঝে নেয়, এই আপ্যায়নে আন্তরিকতা নেই। এই বিষয়টাকেই মানুষ বেশী উপস্থাপন করে। মেহমান যখন খালা আর ফুফু
ঘর-বাড়ির কোন পরিবর্তন দেখলে ফুফুরা মন্তব্য করে। হায়! গাছটা কেটে ফেলতে পারলে! ওখানে বসে আমার মা বিকাল বেলায় বিশ্রাম নিত, আমিও ছোটকালে খেলতাম! কথাটি উপমা। কিন্তু এমন প্রতিটি কথার ভিতরে গৃহিণীরা কটূক্তির গন্ধ পায়। এর ফলে আন্তরিকতার ভাবটা শক্ত হয় না। মূলত কোন গৃহিণীই তার সংসারে কেউ উপযাচক হয়ে কথা বলুক, ওটা বরদাশত করেনা।
ফুফুদের সাথে পৈত্রিক সম্পত্তির হক স্বামীর সাথে জড়িয়ে থাকে। সম্পদ পিতার হলেও, বোনের সম্পদ ফিরিয়ে দেবার সময়, ভাইয়ের স্ত্রীরা এমনটি ভাবার সুযোগ পায় যে, স্বামীর বোনটি একটি বড় ছিনতাই কারী! এই কারণে সম্পর্ক ঢিলে থাকে। প্রকারান্তরে এধরণের স্বার্থ-গত ঘটনা খালাদের সাথে থাকেনা।
একটি মানব শিশুর দেহে ফুফুর রক্ত যত, খালার রক্তও তত। তাই তাদের সাথে আন্তরিক হবার ক্ষেত্রে খালাত ভাই আর ফুফাতো ভাইয়ের মধ্যে বড় কোন তফাৎ থাকে না। তফাৎ তৈরি হয় পিতা-মাতার আচরণের কারণে।
খালা হল মায়ের আদরের প্রতিভূ আর ফুফু হল পিতার শাসনের প্রতিভূ। খালাদের পক্ষ হতে সকল নির্দেশনায় বোনপোর প্রতি আদর-সোহাগ জড়িয়ে থাকে। ফুফুদের নির্দেশনায় জড়িয়ে থাকে শাসন আর উপদেশ। ফুফুরা মাঝে মধ্যে ঠোঁটকাটা মানুষের মত ভাইয়ের শিশুদের দোষগুলো ধরে বসে। দৃশ্যত এটা সমালোচনার মতো দেখায় বলে, অনেক মা এটা পছন্দ করে না কিন্তু শিশুদের ভুল ত্রুটি পর্যালোচনার জন্য এটা অনেক বেশী কার্যকরী।
সর্বোপরি খালা ফুফু বলে কোন কথা নয়। প্রত্যেকে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সম্মানীয়। আর ফুফুরা স্বামীর বাড়ী চলে যাবার পর ভাইয়ের সংসারে বেশী নাক না গলিয়ে বরং ভাইয়ের স্ত্রীর বোন হয়ে যাওয়া সবচেয়ে উত্তম। প্রশংসা ও শ্রদ্ধা করলে আজীবন বোনের চেয়েও ফুফুর মর্যাদা বেশী হয়ে উঠে, এমন বহু সংসারও বর্তমানে অনেক আছে।
Discussion about this post