
মৌমাছির হুল নিয়ে প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি পৃথিবীর বহু দেশে আছে। এটার লাভ-লোকসান নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। একদা আমার দুই বাহুতে ৫০টি বেশী মৌমাছি হুল ফুঠেয়েছিল! জ্বর হয়েছিল, প্যারাসিটামল খেয়ে সুস্থ হয়েছি। ২০ বছরের একজন তরুণ-যুবকের দেহে হুলের কোন যৈবিক উপকার হয়েছিল কিনা, আজো নির্ণয় পারি নি! যাক, মৌমাছির হুলে কি কি রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত আছে, সেটাই তুলে ধরা হল এই অধ্যায়ে।
মৌমাছির হুলের (বিষের) প্রধান রাসায়নিক উপাদানসমূহ:
মৌমাছির বিষের বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রোটিন এবং পেপটাইড (Peptides), কিছু এনজাইম ও অন্যান্য জৈব যৌগ থাকে। প্রোটিন, পেটটাইড ও নানা এনজাইম, মানব দেহের উপকারে আসে। এই পয়েন্ট থেকেই হুল বিষয়ে গবেষণা করার আগ্রহ গবেষকদের মনে জেগেছে।
১. মেলিটিন (Melittin): মৌমাছির বিষের প্রায় 40%−60% অংশ। এটিই হুল ফোটার পর তীব্র ব্যথা ও জ্বালার জন্য দায়ী।
২. মিথানোয়িক অ্যাসিড (Methanoic Acid) বা ফর্মিক অ্যাসিড (Formic Acid): এটি মৌমাছির হুলের একটি অম্লীয় উপাদান যা জ্বালা-যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।
৩. ফসফোলাইপেজ এ২ (Phospholipase A2 – PLA2): এটি একটি এনজাইম, যা দেহ কোষের আবরণকে ধ্বংস করে, ফলে হুল সহজে মাংসপেশিতে ঢুকে যায় এবং ব্যথা ও প্রদাহ সৃষ্টি করে।
৪. অ্যাপামিন (Apamin): এটি একটি ছোট নিউরোটক্সিন পেপটাইড। গবেষণায় এর প্রদাহ-বিরোধী এবং ব্যথানাশক (Pain-relieving) বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। কৌতূহলের বিষয় এর চরিত্র পুরো উল্টো। হুল যদি মাংসপেশি থেকে বের করা হয়, তাহলে সহসা ব্যথা কমে যায়।
হুল যতক্ষণ লেগে থাকবে, ততক্ষণ ব্যথা করবে। একবার আমি ৮ ঘণ্টার বেশী সময় পর্যন্ত ফুটে থাকা হুল বের করিনি। ৮ ঘণ্টা ধরে ব্যথা অব্যাহত ছিল!
৫. অ্যাডোলাপিন (Adolapin): এটিও একটি পেপটাইড যার প্রদাহ-বিরোধী, বাত-বিরোধী (Anti-rheumatic) এবং ব্যথানাশক (Analgesic) প্রভাব রয়েছে।
৬. হিস্টামিন (Histamine): এটি রক্তনালীকে প্রসারিত করে এবং কৈশিক নালী থেকে তরল বের করে আনে, যার ফলে লালভাব, চুলকানি ও ফোলাভাব দেখা যায়। ফলে কিছুটা এলার্জি ভাব দেখা দিতে পারে।
মৌমাছির হুল নিয়ে যেসব গবেষণা চলছে,
- মৌমাছির হুলের মেলিটিন, অ্যাপামিন, এবং অ্যাডোলাপিন-এ চিকিৎসার উপযোগী গুণাবলী রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন।
- এপিথেরাপি (Apitherapy): এটি একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে বাত (Arthritis), জয়েন্টের ব্যথা এবং প্রদাহজনিত অন্যান্য রোগ সারাতে মৌমাছির হুল সরাসরি ফোটানো হয় অথবা এর বিষ ব্যবহার করা হয়। এটি রক্ত চলাচল উন্নত করতে এবং ব্যথা ও প্রদাহ নিরাময়ে সহায়ক হতে পারে।
- ক্যান্সার গবেষণা: মেলিটিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে এবং অ্যাপোপটোটিক কোষের মৃত্যু ঘটাতে কার্যকর বলে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে।
নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব: কিছু গবেষণায় পারকিনসন’স (Parkinson’s) এবং অ্যালজাইমার’স (Alzheimer’s) এর মতো স্নায়ুজনিত রোগ (Neurological conditions) চিকিৎসায় এর উপাদানগুলোর সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা চলছে।
চীনের একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হল, আকুপাংচার। বর্তমান দুনিয়ায় ফিজিও থেরাপিতে আকুপাংচার একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কৌতুহলের বিষয় হল, মৌমাছির হুলের এই চিকিৎসা অনেকটা আকুপাংচারের মতই। অধিকন্তু এই হুলে রয়েছে বহু উপকারী রাসায়নিক উপাদান যা আকুপাংচারের সুঁইয়ে নেই।
তাই বলে, কৌতূহলে এটা কারো উপরে প্রয়োগ করতে নেই। কেননা এই হুলে হঠাৎ মাত্রার এলার্জি বেড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। যাদের এলার্জিতে ফুসফুস আক্রান্ত হয়, এমন ব্যক্তিরা অল্প সময়ের মধ্যে মারাও যেতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনও কোন অবস্থাতেই এই পরীক্ষা করা অনুচিত।
Discussion about this post