মানুষ পৃথিবীতে শূন্য হাতেই আসে আবার শূন্য হাতেই চলে যায়। মাটির কামাই মাটিতেই রয়ে যায়। সাথে যায় শুধুমাত্র নিজ দেহ দ্বারা অর্জিত কর্ম। শান্তির আশায় আত্মহত্যা
পাপ ও মন্দ-কর্ম যাই করা হউক না কেন, তা এই দেহ নামক গাড়ীটি দিয়েই করা লাগে। এই দেহটি ঈমান, সালাত, রোজা সহ সুনির্দিষ্ট কিছু সার্ভিসের বিনিময়ে আল্লাহর নিকট থেকে ভাড়ায় নেওয়া।
ভাড়ার যেভাবে গাড়ী ড্রাইভারের নষ্ট করার অধিকার নেই সেভাবে ভাড়ায় খাটা এই দেহখানির কোন প্রকার ক্ষতি সাধনও মানুষ করতে পারে না। এমনকি তা একটি সিগারেট পানের মাধ্যমে হলেও।
জান্নাত কিংবা জাহান্নামে যাবার জন্য দুনিয়ার মাটিতে আসা জরুরী। সে কারণে দুনিয়ার জীবন অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এখানকার একটি মিনিটও খুবই দামী এবং হিসেব করেই তা ব্যবহার করতে হয়।
দুনিয়ার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে আল্লাহ তায়ালার ভাড়ার গাড়ীটি ধ্বংস করে, ওপাড়ে শান্তিতে ঘুমাবেন! এমন আশার নাম ‘ধৃষ্টতা ও প্রতারণা’। তিনি প্রতারক হিসেবেই আল্লাহর সান্নিধ্যে হাজির হবেন।
যার শুরুটা হবে জীবন্ত দেহ আগুনে ঝলসিয়ে গ্রিল করার মাধ্যমে। অনন্তকাল অশান্তি, দুর্ভোগ আর আগুনের জ্বালা সয়ে। সেখানে আফসোস করা, নতুন হিসেবে মেলাবার সুযোগ নেই।
আল্লাহ বলেছেন, যে মুমিন বান্দাহ দুনিয়াতে রোগে, শোকে কষ্ট পায়; এর বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহ গুলো মুছে দেন। এমনকি একটি ক্ষুদ্র পিপড়া কামড় দিলে যে ব্যথা পায়, তারও বিনিময় প্রদান করা হয় গুনাহ কমিয়ে দেবার মাধ্যমে।
আল্লাহ আরো বলেছেন, দুনিয়াতে যারা কষ্ট সহ্য করে, একনিষ্ঠতার সাথে ধৈর্য ধরে তাদের জন্য রয়েছে পরকালের অশেষ কল্যাণ। তাহলে কোন জিনিষটি হারানোর ক্ষোভে আত্মহত্যা করা লাগে? তাছাড়া মানুষ তো কিছুই নিয়ে দুনিয়াতে পদার্পণ করেনি, তার আবার হারাবার কি আছে?
পৃথিবীতে একজন নবী-রাসুল এমন আসেন নি, যিনি কোন না কোন ভাবে ভয়ানক পিরীত না হয়ে দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করেন নি। হাদিস শরীফে আছে, সাধারণ মানুষের ব্যথার প্রকোপ থেকে নবী-রাসুলদের ব্যথা-জ্বালার পরিমাণ দু’গুন বেশী।
পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্ট হেন অপমান, অপদস্থ, জিঘাংসা সংঘটিত হয়নি; যা নবীদের মত মহান মানুষেরা মোকাবেলা করেন নি! তবুও তারা না আল্লাহকে দোষারোপ করেছে আর না আত্মহত্যার মত নীচ, হীন, ঘৃণ্য স্বভাবের কারণ ঘটিয়েছে।
কারো সাথে অভিমান করে, গোস্বা দেখিয়ে, অপ্রাপ্তির ক্ষোভ, হারানোর ভয়, অপমানের জ্বালায়, ইজ্জত রক্ষায় আত্মহত্যা করার কোন অধিকার কোন সুস্থ মানুষের নেই। দেহ দিয়েছেন আল্লাহ, সেটা যদি দিতেই হয়, তা হতে হবে তারই নির্দেশিত পন্থায়।
যারা এই পথে চলছেন কিংবা ভাবছেন, তাদের জেনে রাখা উচিত। তার মৃত্যুতে কারো কিছু আসে যায়না। দুনিয়াতে তাকে কেউ স্মরণে রাখে না। বাড়ীর পাশের আগাছা পরিষ্কার করে গৃহ কর্তা যেভাবে ভাব নেয়। আত্মহত্যাকারীর জন্যই দুনিয়া বাসীর পক্ষ থেকে সেই একই ধরনের অনুভূতি থাকে।
অধিকন্তু সে একজন নিশ্চিত জাহান্নামী। আর জাহান্নামের অতি সাধারণ উপকরণ হল ভয়ানক দুর্গন্ধ আর আগুনের ঝলসানো। এমন জায়গায় কাউকে বসিয়ে, যিনি মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি খেয়ে মরেছেন; তাকে অনবরত অনন্তকাল ধরে, দুনিয়ার সেই কষ্ট সাথে নিয়েই ওভাবেই মৃত্যুর রিহার্সাল দিতে হবে।
মৃত্যুকালে যেভাবে সে কষ্টে ছটফট করেছিল, অনন্তকালের প্রতিটি রিহাসার্লে সেই একই অনুভূতিও রেখে দেওয়া হবে। এটাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত।
Discussion about this post