ইতিহাসের পরিসংখ্যান বলে PR পদ্ধতির নির্বাচন হলে বাংলাদেশে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবার সম্ভাবনা খুবই কম। বাঙ্গালী লোভী ও বিশ্বাসঘাতক প্রকৃতির জাতি। যারা সংসদের যায়, তারা এসব লোভীদেরই সন্তান।
ফলে তাদের চরিত্রে বাপ-দাদার ঐতিহ্যই প্রবাহিত হয়। ফলে জাতির উপকারে সংসদের লোভনীয় সুবিধাকে পদদলীত করবে এমন বেকুব অন্তত বাঙ্গালী নয়। বরং দলীয় আদর্শ, নীতি ও নেতার প্রতি চরম অসৌজন্য দেখিয়ে, দলীয় ফোরামের নিষেধ অমান্য করে, সদলবলে সংসদে যোগ দেবার নজীর আছে।
১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। প্রতিবার ৩০০ জন করে সর্বমোট ৩৬০০ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছে। জাতীর অধিকার ও গুরুত্ব রক্ষায় সংসদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগী এমপির সংখ্যা খুবই নগণ্য।
সেটার তালিকা দেখলেই বুঝবেন যে, PR প্রথায় যদি নির্বাচন হয় এবং সেই পার্লামেন্ট ঝুলন্ত হবে, এই সত্য আমাদের মত লোভী জাতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আগে দেখে নেই কতজন সাংসদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন, PR পদ্ধতি
- ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সাংসদ, ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি তারিখে বাকশাল প্রবর্তন করার প্রতিবাদে জাতীর আখাঙ্কাকে সম্মান জানিয়ে এম এ জি ওসমানী ও ব্যরীস্টার মইনুল হোসেন পদত্যাগ করেন।
- ১৯৮৬ সালের ৭ মে তারিখের সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ১০ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়। এরশাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় পরের বছর ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বের শুরুতে জামায়াতে ১০ জন এবং স্বতন্ত্র ২ জন পদত্যাগ করে।
- ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ৬২ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়। এই মাসে পদত্যাগ হবে, পরের মাসে হবে, পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে সুটকেসে রাখা হয়েছে। যে কোন মুহূর্তে জমা করে সরকারের পতন ঘটানো হবে! এসব বলতে বলতে ৫ বছর সময় পার করেছে।
- ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ৬ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সেই সরকারের সুযোগ সুবিধা ৪ বছর ভোগ করার পরে, দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চাপে ২০২২ সালের ১১ ই ডিসেম্বর ৬ জনই পদত্যাগ করেন। যদিও রুমিন ফারহানা ১ জন অতিরিক্ত মহিলা আসন থেকে এসেছিলেন। ৬ জন পদত্যাগ করলে তিনি গুরুত্বহীন হয়ে যায়। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব থাকেনা। তদুপরি ৭ জন এমপি ধরা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারী তারিখে একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হয়। যে সরকারের বয়স ছিল ৪৫ দিনেরও কম। যেটা ৩০শে মার্চ ১৯৯৬ সালে বিলুপ্ত ঘোষণা হয়। এমন ঠুনকো সংসদ থেকেও কেউ পদত্যাগ করার কথা চিন্তা করেনি। PR পদ্ধতি
অধিকন্তু ১৯৯১ সালের ৫ বছর পার করা, আওয়ামীলীগ এমপি নজিবুল বশর ভাণ্ডারী এই ৪৫ দিনের লোভ সামলাতে না পেরে, বিএনপিতে যোগ দেন এবং সেই ৪৫ সুযোগ গ্রহণ করেন।
আরো উদাহরণ আছে, স্পেশালী এই কথাটি নোট করার কারণ হল, ব্যক্তি বিদ্বেষের জন্যে নয়। শুরুতে যে বলেছিলাম বাঙ্গালী লোভী ও বিশ্বাসঘাতক সেটার দৃশ্যমান উদাহরণ দেবার জন্যেই উল্লেখ করা।
তাহলে ৩৬০০ জন নির্বাচিত সাংসদের বিপরীতে বিগত ৫০ বছরে কতজন সাংসদ স্বেচ্ছায় জাতীয় কিংবা দলীয় প্রয়োজনে পদত্যাগ করেছে,
- ২ জন – ১৯৭৫ সালে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী সাংসদ
- ১০ জন – ১৯৮৭ সালে জামায়াতে ইসলামীর সাংসদ
- ২ জন – ১৯৮৭ সালে স্বতন্ত্র
- ৭ জন – ২০২২ সালে বিএনপির সাংসদ
৫০ বছরে ৩৬০০ জনের মধ্য থেকে সর্বসাকুল্যে মাত্র ২১ জন সাংসদের হদিস পেয়েছি, যারা লোভ ত্যাগ করে, সাংসদ থেকে পদত্যাগ করার দৃষ্টান্ত দেখাতে পেরেছে। PR পদ্ধতি
উপসংহার
আমাদের দেশে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা কম। সরকারী দল লোভ লাগালে, সুবিধা দিলে, দুর্নীতি না করলে কিংবা উৎপীড়ন না করলে, ছোট দলগুলো সামান্য লাভের বিনিময়েই সরকারকে অব্যাহত সমর্থন দিবে। অন্তত এই বিষয়টি আমাদের জাতীর চরিত্রে প্রমাণিত হয়েছে উপরের ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে।
চিন্তা করে দেখুন, একটি ইসলামী দল আরেকটি চরম ইসলাম বিরোধী দলকে প্রয়োজনে ২০০ বছর ক্ষমতায় ধরে রাখতে আগ্রহী। যদি তারা তাদের ন্যায্য হিস্যা প্রদান করে। সুতরাং PR পদ্ধতি আমাদের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের চরিত্রকে একটি ফর্মে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। রাজনীতির গুনগত মান বাড়াবে।
(পুরানো ইতিহাসের তথ্য ঘেঁটে এসব উদ্ধার করা হয়েছে। ২১ জনের যে তালিকা দিয়েছি তাতে হয়ত আরো দুই একজন এদিক ওদিক হতে পারে। যুক্তির খাতিরে যদি সংখ্যাটি ডবল করি, তারপরও রেকর্ড সন্তোষজনক নয়। পরবর্তীতে আরো আপডেট তথ্য পাওয়া গেলে, চেক করে এখানে সন্নিবেশিত করা হবে। যে কারো সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করা হবে)
Discussion about this post