ধর্না ধরা কথাটির সাথে আমরা কম-বেশী সবাই পরিচিত। কিছু মানুষের জীবনে ধর্না ধরাটা স্থায়ী খাসিয়তে পরিণত হয়। ধর্না ধরে জীবন ধারণ করে এমন মানুষেদের হয়ত আপনারা আশে পাশেই দেখে থাকবেন। নিকটজনদের মাঝেও অনেকে ধর্না ধরে জীবন ধারণ করে।
ধর্নার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় আছে তা হয়ত অনেক মানুষই জানেনা। বাস্তব জীবনে ধর্না অনেক কাজে লাগে। কিন্তু অনেকেই জানেনা ধর্না জিনিষটা কি। গ্রামীণ জীবনে মহিলারা ঢেঁকি চালাতে গিয়ে, পায়ের বল যাতে যথাযথ প্রয়োগ হয়, সে কারণে বল পাবার জন্যে, হাত দিয়ে একটি বাঁশ ধরে রাখে। এই বাঁশের নাম ‘ধর্না’।
আবার নিশ্চয়ই আমরা অনেকে সাঁকো দেখেছি! সাঁকো পার হবার জন্যে পায়ের পাটাতন হলে চলেনা। সাথে হাতে ধরার জন্যে আরেকটি বাঁশের দরকার হয়। সেটার উপর নির্ভর করেই মানুষ বিপদজনক সাঁকোটি সহজে পার হতে পারে। হাতে ধরা এই বাঁশের নাম কিন্তু ‘ধর্না’।
তাহলে প্রশ্ন এসে যায়, ঢেঁকি কিংবা সাঁকোর এই ধর্নার সাথে, মানুষের ধর্না ধরার মিল কোথায়? চিন্তা করলে দেখবেন, আলবত মিল আছে।
মানুষ যখন সাঁকো পার হতে থাকে, তখন সাঁকোর টাল-মাটাল চরিত্র মানুষকে কিছুটা অসহায় করে রাখে। ফলে মানুষটি তখন অন্যের সহানুভূতি পাবার জন্যে মিনতি করে।
অতঃপর সাঁকোটি পার হয়ে গেলে, সে দম্ভ করে। আরে ধ্যাত এটা একটা কষ্টকর যাত্রা হলো নাকি! জীবনে কত সাঁকো পারি দিয়েছি, আর আজকে মামুলী সাঁকোকে ভয় পাব নাকি।
ধর্না ধরা মানুষগুলো জীবনে কোন অবস্থাতেই স্বাবলম্বী হতে পারেনা। তারা কস্মিন-কালেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। তারা সদা অসহায় চেহারায়, আত্মীয় স্বজনের কাছে হাত পাততে থাকে। নানাবিধ ছুতো বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেবার কৌশল বাড়ায়।

আবার যখন কেউ তাদের সাদাকা-যাকাত কিংবা অন্যভাবে সাহায্য করে তখন তারা ঘি কিনে বেগুন ফ্রাই খায়! অর্থাৎ সখের জিনিষ কিনে অন্যের সাথে আভিজাত্যের লড়াইয়ে লিপ্ত হয়।
এসব মানুষ একেবারেই ভুলে যায় যে, এই টাকাটা অন্যের নিকট থেকে ধর্না ধরে আনা হয়েছে। আজকের সৌখিন চরিত্র দেখে অন্য সময় সাহায্য না ও মিলতে পারে। এতটুকু বিবেচ্য বোধ ওদের চরিত্র থেকে হারিয়ে যায়।
“তবুও তাদের ব্যক্তি জীবনে কাউকে ধর্না বানিয়ে ধরে চলতে পছন্দ করে। যার কারণে এমন মানুষের চরিত্র সাঁকোর সেই ধর্না ধরা মানুষের মত হয় বলেই, চরিত্রটিকে ধর্না ধরা বলা হয়”
Discussion about this post