কলেজের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে দুজন শিক্ষক ছিলেন। একজন সারাজীবন প্রথম বিভাগ ব্যতীত কোনদিন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হন নাই। এমন ঝলমল কৃতিত্বের অধিকারী স্যার স্বাভাবিক ভাবেই ডিপার্টমেন্টের প্রধান হন। কিন্তু তার ক্লাসের পড়া, তিনি ব্যতীত কোন ছাত্ররা বুঝত না। ছাত্রদের পড়া বুঝানোর দুর্বলতা ছিল প্রকট। কেউ পড়া বুঝে নি এমন কথা প্রকাশ করাও ছিল বিপদের। কোন ছাত্রকে প্রশ্ন করতেন বুঝেছ? যদি বলা হয় বুঝি নি। তখন তিনি বলতেন কি বুঝ নি সেটাই ব্যাখ্যা কর। এই ব্যাখা হত আরো কঠিন, অগত্যা ক্লাশ থেকে বের করে দিত। প্রকৃত কথা হল, ছাত্ররা হাজিরার জন্যই ওনার ক্লাসে আসতেন। মেধা বনাম বাকশক্তি
আরেকজন শিক্ষক ছিলেন যার ক্যারিয়ারে কোন একটি তৃতীয় বিভাগ ছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন বুঝাতে পারঙ্গম। তিনি যা বুঝেন তা সহজেই ছাত্রদের গিলিয়ে দিতে পারতেন। ফলে তার ক্লাসের উপস্থিতি বরাবরই সরব থাকত। তিনি প্রাইভেট পড়াতেন। ছাত্ররা তার বাসার সামনে লাইন ধরে রাখত। তিনি ছাত্রদের বিনয়ের সাথে বলতেন, সব বিষয়ই প্রাইভেট পড়তে হবে কেন? অন্য কোথাও দেখ! তবুও ছাত্র-ছাত্রীদের পীড়াপীড়ির কারণে তাকে পড়াতেই হত।
ডিপার্টমেন্টের প্রধানের বাসাটা ছিল তার বাসার সাথে লাগোয়া। তিনি হাতে একটি তসবিহ নিয়ে ঘরে বসে থাকতেন। তার সামনে দিয়েই ছাত্ররা, ওনার ক্লাসেরই পড়ানো বিষয়ে অন্য সারের বাসায় যেত প্রাইভেট পড়তে! অথচ তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড ছাত্র। প্রখর মেধাবী বলেই তো, তিনি এমন পদে আসীন হয়েছেন।
অগত্যা তিনি হোমিওপ্যাথি বিদ্যা অর্জন করে, একটি দোকান খুলে বসেন। কেমিস্ট্রির মানুষ হোমিওপ্যাথি মানে সোনায় সোহাগা হওয়া। কিন্তু সেখানেও তথৈবচ। এলাকার অখ্যাত হোমিওপ্যাথি যুবকের দোকানে যে লাইন, স্যারের দোকানে তেমন নেই। কেননা তিনি লেখা পড়ায় মেধাবী বটে কিন্তু মানুষের মন বুঝার মত মেধা তার ছিল না। রোগীরা ঔষধের পাশাপাশি ডাক্তারের ব্যবহারের গুরুত্বটাও দিয়ে থাকে।
কথাগুলো একারণে বলা হল। বর্তমান যুগে পিতা মাতারা ভেবে থাকেন, মার্কশিটে সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়াই বুঝি সর্বোচ্চ মেধাবী হবার অন্যতম হাতিয়ার। সামাজিক হবার গুরুত্ব বুঝে না। যদিও আমাদের দেশের ব্যবস্থার মধ্যেও দেখা যায়, মেধাবী বাছাইয়ের অন্যতম মাধ্যম হল সর্বোচ্চ নাম্বার অর্জন করা। কেউ সুযোগ বুঝে নকল করে বেশী নাম্বার তুলে ফেলতে পারলে যেন জগত তারই। এমন মেধা যতই আলোকিত হউক না কেন, বিকশিত হবার জন্য পথে পথে ধাক্কা খায়।
পাশ্চাত্য বিশ্বে এভাবে মেধাবী বাছাই করা হয়না। অনেকগুলো বিষয় যাচাই বাছাই করা হয়, তারমধ্যে একটি হল বাকশক্তি। শুধুমাত্র বাকশক্তি না থাকার কারণে আমাদের যে শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছিলেন, যদ্বারা দীর্ঘ-বছর তার কোন ছাত্রই আশানুরূপ উপকৃত হয়নি। এমনকি চরম মেধাবী হওয়া স্বত্বতেও বাস্তব জীবনেও তিনি পিছিয়ে পড়েছিলেন। তার হয়ত রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়েছে কিন্তু শিক্ষার্থী ও শিক্ষার ক্ষতি হয়েছে ঢের বেশী।
Discussion about this post