ইসবগুলের ভুষি কথাটি কম-বেশী সবার কাছেই পরিচিত শব্দ। অতি চালাক মানুষের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, শব্দটি মূলত ‘ইউসুফ-গুল’ হবে। অশিক্ষার কারণে মানুষ ভুল করে ইশবগুল বলে থাকে। এই ধারণাটি বিলকুল ভ্রান্ত। আবার অনেকেই অবগত নয় যে, এই ইসবগুল কি গাছ থেকে আসে নাকি কৃত্রিমভাবে বানানো হয়! কার্যকর ঔষধি হিসেবে সর্বত্রই এটি সমাদৃত। বাজারে প্যাকেট আকারে এটি পাওয়া যায়। ইসবগুলের ভুষি, রোগের মুখে ঘুষি
আরো পড়তে পারেন…
- পাটের চমকপ্রদ ব্যবহার
- পাঁদেরা লতা যখন গন্ধভাদুলি
- মহান গান্ধী পোকার সাথে পরিচয় হয়েছিল কি
ইসবগুল শব্দটি ফার্সি ‘ইসফা-গোল’ শব্দ থেকে সৃষ্ট। ইংরেজিতে Psyllium Husk (সিলিয়াম হাস্ক), বৈজ্ঞানিক নাম Plantago Ovata. ইসবগুল শব্দটি ফার্সি হলেও ইংরেজিতে ভাষাতেও Isabgul হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়। অবিকল ধানের গুচ্ছের মত ইসবগুল উদ্ভিদের জন্ম হয়। এক গুচ্ছ থেকে অনেকগুলো কাণ্ড বের হয় এবং কাণ্ডের মাথায় মোচার সৃষ্টি হয়। পরিণত বয়সে এই মোচা থেকেই শুকনো পাপড়ি আলাদা হয়ে ঝরে পরে। এটিই মূলত ইসবগুলের মূল ব্যবহার্য অংশ। ফার্সিতে ‘ইসফা’ শব্দের অর্থ ঘোড়া আর ‘গুল’ অর্থ ফুল অথবা কান। ইসবগুলের ভুষির পাপড়ি গুলো ক্ষুদ্র কিন্তু দেখতে অনেকটা ঘোড়ার কানের মত বলেই এটাকে ইসবগুল তথা ঘোড়ার কান বলা হয়।
ইসবগুল এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের সর্বত্রই বহুল পরিচিত ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে সমাদৃত। ইউনানি চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এটির সুনাম সুখ্যাতি এভাবে সর্বত্র ছড়িয়েছে। এবং এটি সবমহলে পরিচিত কিছু রোগের পথ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইসবগুলে দু’ধরনের আঁশ থাকে। একটি দ্রবণীয় অন্যটি অদ্রবণীয়। উভয়টিই মানুষের কল্যাণে কাজে আসে। অদ্রবণীয় ভুষির প্রভাবে পেটের মল মিলিত হয়ে শক্ত হতে পারেনা। তাই কোষ্ঠ কাঠিন্য তথা শক্ত পায়খানাকে নরম করার কাজে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শুরুতে ইসবগুলের এই উপকারী গুনের কারণেই জন মানুষের নিত্য নৈমিত্তিক পথ্যে পরিণত হয়।
রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে ডাক্তারেরা আঁশ যুক্ত খাবার ফল-সবজি খেতে বলে। আর আশ-নির্ভর খাদ্যের মধ্যে ইসবগুলের স্থান হল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। যার কারণে ইসবগুল রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে আনে এবং মানুষকে হৃদরোগ থেকে বাঁচায়।
ইসবগুল অন্ত্রের ভিতরের দেওয়াল ঘষে মেঝে তরতরে করে তুলতে পারে। এর ফলে মিউকাস জমতে বাধা দেয়, আমাশয় প্রতিরোধ করে। পাকস্থলীর বর্জ্য নিষ্কাশন ও হজম প্রক্রিয়াকে সহজতর করে তুলে।
পেটের এসিডটির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ সৃষ্টি করে ও দেহের ওজন কমাতে থাকে। ইসবগুলের অদ্রবণীয় ভুষির কল্যাণে ক্লোন ক্যানসার সৃষ্টি হতে বাধা দেয়, ডায়রিয়া ও পাকস্থলীর ইনফেকশন সারিয়ে তুলে।
ইদানীং কালে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ইসবগুলের ভুষির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। চিকিৎসকেরা ডায়াবেটিস রোগীদের এটা খেতে পরামর্শ দিতে থাকে। এটির স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধহীন। অন্যে খাদ্যের সাথে মিলে সে খাদ্যের স্বাদ ধারণ করে।
বর্তমান মানব সভ্যতাকে বিষিয়ে তুলেছে যে কয়টি রোগ, তার সবটার মোকাবেলা করতে পারে যে উদ্ভিদ, তার নাম ‘ইসবগুল’। তাই নিয়মিত ইসবগুলের ভূষি খান আর রোগের মুখে ঘুষি দাবান।
এটির কয়েকটি প্রজাতি আছে। বাংলাদেশেও এই ধরনের কাছাকাছি উদ্ভিদ আছে। তবে জানা নেই যে, এগুলোর কার্যক্ষমতা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের আদি উদ্ভিদের মত কিনা।
Discussion about this post