দুনিয়াতে তেল বাজের রকম ফের বহু বিচিত্র। এই তেল এমন এক বোতলে থাকে, যা সারা জীবন ব্যবহার করলেও শেষ হয়না; বরং তেলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। হানিফ সংকেতের ইন্টারভিয়্যুর বোকা যুবক মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলে পর, পরীক্ষক কে সুবিধেয় পেলে, তেল মালিশ করে রাজি করার অভিপ্রায়ে, পেন্টের পকেটে লুকিয়ে, সিরাজ গঞ্জের এক সিসি খাঁটি সরিষার তৈল নিয়েছিলেন!
আরো পড়তে পারেন…
- বিশ্বকাপ ফুটবল ও বাংলাদেশের বিরল অর্জন
- ঈদের দিনে বিড়ির আগুন হাওলাত! (রম্য ঘটনা)
- একটি সম্মিলিত আক্রমণ মোকাবেলা! বিব্রতকর রম্য ঘটনা
বেকুব যুবক বুঝতে পারেন নি, এই তেল সেই তেল নয়। সিসি ভর্তি তেল যতই খাটি হউক না, সরিষার তেলের চোখ ঝাঁঝাঁনো মর্দন দিয়ে কর্মকর্তাকে রাজী করানো যায় না! বরং হিতে বিপরীত হয়ে কর্তার গোস্বা বেড়ে যেতে পারে। তেল বাজের রকম ফের
মূলত অশিক্ষিত ও বে-ভুলা মানুষ কোনদিনই তেল-কাণ্ডে সফলতা অর্জন করতে পারে না। এটা বরাবরই শিক্ষিত, চৌকশ, দক্ষ উপস্থাপক ও বেজায় সুবিধাবাদী মানুষদের দখলেই থেকেছে। এ ধরনের মানুষ অহর্নিশি তক্কে তক্কে থাকে কোথায়, কখন, কিভাবে আচানক তেল মারার সুযোগ পেয়ে যাবে।
ক্ষুদ্র ও শিক্ষানবিস তৈলমর্দন কারীদের অতি প্রশংসায়, ভাবের পিচ্ছিলতার কারণে, নিজেরা নিজদের খুবই ক্ষমতাবান মনে করে। তবে সম-ভাবাপন্ন তেল-বাজ অন্য তেল-বাজকে মোটেও বরদাশত করতে পারেনা। কেননা তৈলাক্ত বাঁশ বেয়েই তেল-বাজদের উপরে উঠতে হয়। সেক্ষেত্রে নীচের দিকের তেল-বাজের সামান্য একটি খোঁচাতেই, উপরের তেল-বাজকে সড়াৎ করে মুহূর্তেই নিচে পড়ে যেতে হয়।
তেল-বাজের বহু বাংলা উপনাম আছে, সাধারণ অশিক্ষিত মানুষ এসব শব্দের অর্থ শোনা মাত্রই বুঝে ফেলে বলে, এক তেল-বাজ অন্য তেল-বাজকে ইংরেজিতেই আক্রমণ করে। যেমন, বড় তেল-বাজ Sycophant (সাইকোফ্যান্ট), চামচা Flunkey (ফ্লুনকি), মোসাহেব Flunky (ফ্লানকি), চাটুকার Toady (টোডি), তোষামোদি Fawning (ফাউনিং) ইত্যাদি নামে অভিহিত করে।
এতে করে পদের মর্যাদা ঠিক থাকে আবার প্রতিপক্ষও দেখার সুযোগ পায়, আশে পাশে মূর্খ-অশিক্ষিত কেউ নেই তো! যাক, নামে ইংরেজি হলেও ঘুরে ফিরে সবার কাজ একটিই, সেটা হল তেল-মারা কিংবা তেল-বাজি করা।
দুনিয়াতে কেউ তেল মারতে ভালবাসে। কেউ তেল নিতে ভালবাসে। কেউ আবার তেল মারার দৃশ্য উপভোগ করে তুমুল করতালি দিতে ভালবাসে। এদের মধ্য থেকেই নতুন তেল-বাজের সৃষ্টি হবে, তারা দক্ষতা অর্জন করতে, কৌশল শিখবে এবং সামনের সারির তেল-বাজ হিসেবে স্বীকৃতি নিবে।
সকল বুদ্ধিমান মানুষই যে তেল মারতে পারে এমন নয়। ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্যকে জোতার মোজায় না মোড়ানো পর্যন্ত কেউ একাজে সফল হয় না। আবার সঠিক মাত্রা ও পাত্র নির্ধারণ করতে ভুল হলে, অপাত্রে তেলের মর্দনে ফলাফল বৃথা যেতে পারে। কিংবা ইতিপূর্বের অন্যজনের মর্দন করা অবস্থানেই তেল-মারা হতে পারে। কবিরা এসব মানুষকেই মহা-বেকুব বলেছেন, প্রবাদে আছে যে,
“তেল-ওয়ালা মাথায় তেল, আ’তেলা মাথার জাত গেল”
অর্থাৎ, যে তোমার গুরুত্ব বুঝে না, মূল্যায়ন করে না তার স্তুতি গাইতে যেয়ে না।
মূলত তেল-বাজ কারো বন্ধু হয় না। কয়েকটা কারণেই তেল-বাজের উত্থান হয়।
১. কৃপা দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
২. নতুন সুযোগ হাতিয়ে নেওয়া।
৩. পুরাতন সুযোগ অব্যাহত থাকা।
৪. সঠিক তথ্য প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।
৫. নতুন শুভাকাঙ্ক্ষীর আগমন রুদ্ধ করা এবং
৬. তাকে অন্ধকারের রেখে চরম সর্বনাশ করা।
মানুষের যোগ্যতার হ্রাস ঘটলে, গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি হলে, বিশ্বাসে চিড় ধরলে, অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে না পারলে, উচ্চ মর্যাদা ও ক্ষমতার অধিকারীরাও তেল-বাজ হয়ে উঠে। সমাজ ও রাষ্ট্রে এদের সংখ্যা বেড়ে গেলে, সে জাতির সর্বনাশ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
Discussion about this post