দুই দিনের সিদ্ধান্তে গত ৮.৮.২০১৪ তারিখে দুই সপ্তাহের এক ঝটিকা সফরে গ্রামের বাড়ী যাওয়া হয়েছিল। বহু দিন পরে দেশে যাওয়া। আগেও একবার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, সবই ঠিক ছিল। হঠাৎ ফটিকছড়ির ভুজপুরে ছাত্রলীগের উপর হামলা হয়ে ২০০ শত গাড়ী সহ অনেক যান বাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সৌভাগ্য হউক আর দুর্ভাগ্য হউক ভুজপুর থানাটি ছিল আমারই থানা আর আমি ভূজপুর স্কুলেরই ছাত্র। ঘটনাস্থল থেকে আমাদের বাড়ী দুই মাইল হইলের দূরত্ব হইলেও, পুলিশ দশ মাইল দূরের বাসিন্দাদের গ্রেফতার করছিল গাড়ী পুড়ানোর মামলায়। প্রবাসী হলে তো কথাই ছিলনা; ‘প্রবাসীরা এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ী পৌছিবার বহু পূর্বেই পুলিশ তাহদের বাড়িতে পৌছিয়া যায়’। ফলে আমাকেও বাড়ী যেতে কঠিন ভাবে বারণ করা হয়েছিল, হতেও পারে আমিও হয়ে যেতাম গাড়ী জালানো ব্যক্তিদের অন্যতম আসামী। মাশায়াল্লাহ হাজার হাজার মানুষ জেলে গেলেও, মূল হোতারা এখনও নাকি ধরা পড়েনি!
আমার ছেলেটিও বই পড়ার পাগল, এতদিন বিদেশী বইগুলো পড়েছে। তবে বাংলা সাহিত্যের প্রতিও যাতে আগ্রহ থাকে সেই জন্য আমি তার জীবনের শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিলাম। আমার গিন্নী এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ ছিলেন বলে বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে আমার তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। গ্রামের বাড়ীতে পুরাণ সেলফের মাঝে অনেক অপরিচিত ও পুরানা বই পেয়ে সে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে একটি পুরানা বই বের করতে গিয়ে দেখা গেল বইটি কিসে যেন আটকে আছে। আমার নজর পড়াতে গিয়ে দেখি, বই গুলো বাহির থেকে সেলফে সাজানো দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে প্রায় বেশী সংখ্যক বই উইপোকা সহ আরেক ধরনের পোকা খেয়ে ফেলেছে। সেলফের একদিক থেকে খাওয়া শুরু করে অন্যদিকে শেষ করেছে।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। বহু বছরের পুরানা বই সেলফ গুলোতে সংরক্ষিত আছে। পড়ার মানুষ না থাকাতে বিগত বিশ বছরে কেউ ধরে দেখেনি! এখন যোগাযোগ মাধ্যম ভাল হয়েছে, যুগ বদলিয়েছে কিন্তু পাঠক কমেছে আরো মারাত্মক ভাবে। পুরো বাড়িতে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো বাড়ছে কিন্তু এ ধরনের দুর্লভ বই পড়ার প্রতি কারো কোন আগ্রহ নাই! তাই বই পোকা তথা উই পোকা ও গুণ পোকারা এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে। বর্তমানে ছেলেমেয়েরা শুধু স্কুলের বইও কম পড়ে, তারা পড়ে পরীক্ষা পাশের গাইড বই, টিভি দেখে আর ফ্যাসবুকে মত্ত হয়। পরীক্ষার শেষে দলে দলে এ প্লাস পায় আর নামকরা স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে বাপের টাকা খরচ করে। বাহ্যিক কোন বিদ্যা নাই, কোন মেধা নাই, প্রতিভার কোন বিকাশ নাই। ‘গ্রন্থ গত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন’। আগে এটির অর্থ বুঝতাম এখন প্যাকটিক্যালি বুঝি।
আগামী কালই শহরে চলে যেতে হবে। তাই রাত্রেই বসে গেলাম বই বাছাইয়ে। চারিদিকে বন্যার থৈ থৈ করছিল! ঘরের পিছনেই সীমানা প্রাচীরে পানির ঢেউ ধাক্কা মারছিল। সেই পানিতে ঘুণে ধরা তিন বস্তা বই ফেললাম! প্রতিটি বই দেখছি আর কলিজায় টান পড়ছে, প্রতিটি বইয়ে আমার একটি করে কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আরো যত বই টান দেই, দেখি ভিতরে ভিতরে ফাঁপা। অসহ্য বেদনা মনে চাপা দিয়ে বই দেখা বন্ধ করলাম। বুঝতে পারলাম বই যত দেখব, পানিতে ফেলার বস্তার সংখ্যাও বাড়তে থাকবে।
খবর নিয়ে দেখলাম এলাকায় বিগত বিশ বছরে প্রচুর শিক্ষিত মানুষ বেড়েছে কিন্তু প্রতিভাবান মানুষ সৃষ্টি হয়নি। গ্রামে গ্রামে ডিশ সংস্কৃতিতে সয়লাব হয়েছে, তার মাঝে যোগ হয়েছে ফ্যাস বুক। ফলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, প্রভাষক সহ গুরুত্বপূর্ণ কোন পদেই এলাকার ছাত্ররা তেমন একটা ভাল করেনি। সবাই তাদের ব্যর্থতা গুলো স্কুল-কলেজের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে! অথচ আমার সমবয়সী আমারই গ্রামের স্কুলের বহু ছাত্র বর্তমানে সরকারী স্কুল, সরকারী কলেজ সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব ছাত্র তখনই তৈরি হয়েছিল, যখন আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি, রাস্তা পাকা হয়নি। স্কুল ছিল মাটির তৈরি দালানে এবং একজন শিক্ষক ব্যতীত কারো ‘বিএড’ ডিগ্রী ছিলনা। প্রায় সবার পিতা-মাতাই ছিল অশিক্ষিত, আয়ের একমাত্র পথ ছিল কৃষি।
বর্তমানে প্রায় ছাত্র-ছাত্রীদের পিতা-মাতা শিক্ষিত কিন্তু মেধা-মননশীলতায় তারা মূর্খ অভিভাবক! তারা না পিতা হিসেবে কিছু করতে পেরেছে না একজন সৃষ্টিশীল সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছে! তাদের সকল সন্তানগুলো একটি চাকরীর আশায় লেখাপড়া করছে, আর একজন উৎকৃষ্ট চাকর হবার মনোবৃত্তি নিয়ে প্রতিনিয়ত লড়ছে!
আমার ছেলেটিও বই পড়ার পাগল, এতদিন বিদেশী বইগুলো পড়েছে। তবে বাংলা সাহিত্যের প্রতিও যাতে আগ্রহ থাকে সেই জন্য আমি তার জীবনের শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিলাম। আমার গিন্নী এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ ছিলেন বলে বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে আমার তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। গ্রামের বাড়ীতে পুরাণ সেলফের মাঝে অনেক অপরিচিত ও পুরানা বই পেয়ে সে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে একটি পুরানা বই বের করতে গিয়ে দেখা গেল বইটি কিসে যেন আটকে আছে। আমার নজর পড়াতে গিয়ে দেখি, বই গুলো বাহির থেকে সেলফে সাজানো দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে প্রায় বেশী সংখ্যক বই উইপোকা সহ আরেক ধরনের পোকা খেয়ে ফেলেছে। সেলফের একদিক থেকে খাওয়া শুরু করে অন্যদিকে শেষ করেছে।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। বহু বছরের পুরানা বই সেলফ গুলোতে সংরক্ষিত আছে। পড়ার মানুষ না থাকাতে বিগত বিশ বছরে কেউ ধরে দেখেনি! এখন যোগাযোগ মাধ্যম ভাল হয়েছে, যুগ বদলিয়েছে কিন্তু পাঠক কমেছে আরো মারাত্মক ভাবে। পুরো বাড়িতে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো বাড়ছে কিন্তু এ ধরনের দুর্লভ বই পড়ার প্রতি কারো কোন আগ্রহ নাই! তাই বই পোকা তথা উই পোকা ও গুণ পোকারা এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে। বর্তমানে ছেলেমেয়েরা শুধু স্কুলের বইও কম পড়ে, তারা পড়ে পরীক্ষা পাশের গাইড বই, টিভি দেখে আর ফ্যাসবুকে মত্ত হয়। পরীক্ষার শেষে দলে দলে এ প্লাস পায় আর নামকরা স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে বাপের টাকা খরচ করে। বাহ্যিক কোন বিদ্যা নাই, কোন মেধা নাই, প্রতিভার কোন বিকাশ নাই। ‘গ্রন্থ গত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন’। আগে এটির অর্থ বুঝতাম এখন প্যাকটিক্যালি বুঝি।
আগামী কালই শহরে চলে যেতে হবে। তাই রাত্রেই বসে গেলাম বই বাছাইয়ে। চারিদিকে বন্যার থৈ থৈ করছিল! ঘরের পিছনেই সীমানা প্রাচীরে পানির ঢেউ ধাক্কা মারছিল। সেই পানিতে ঘুণে ধরা তিন বস্তা বই ফেললাম! প্রতিটি বই দেখছি আর কলিজায় টান পড়ছে, প্রতিটি বইয়ে আমার একটি করে কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আরো যত বই টান দেই, দেখি ভিতরে ভিতরে ফাঁপা। অসহ্য বেদনা মনে চাপা দিয়ে বই দেখা বন্ধ করলাম। বুঝতে পারলাম বই যত দেখব, পানিতে ফেলার বস্তার সংখ্যাও বাড়তে থাকবে।
খবর নিয়ে দেখলাম এলাকায় বিগত বিশ বছরে প্রচুর শিক্ষিত মানুষ বেড়েছে কিন্তু প্রতিভাবান মানুষ সৃষ্টি হয়নি। গ্রামে গ্রামে ডিশ সংস্কৃতিতে সয়লাব হয়েছে, তার মাঝে যোগ হয়েছে ফ্যাস বুক। ফলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, প্রভাষক সহ গুরুত্বপূর্ণ কোন পদেই এলাকার ছাত্ররা তেমন একটা ভাল করেনি। সবাই তাদের ব্যর্থতা গুলো স্কুল-কলেজের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে! অথচ আমার সমবয়সী আমারই গ্রামের স্কুলের বহু ছাত্র বর্তমানে সরকারী স্কুল, সরকারী কলেজ সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব ছাত্র তখনই তৈরি হয়েছিল, যখন আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি, রাস্তা পাকা হয়নি। স্কুল ছিল মাটির তৈরি দালানে এবং একজন শিক্ষক ব্যতীত কারো ‘বিএড’ ডিগ্রী ছিলনা। প্রায় সবার পিতা-মাতাই ছিল অশিক্ষিত, আয়ের একমাত্র পথ ছিল কৃষি।
বর্তমানে প্রায় ছাত্র-ছাত্রীদের পিতা-মাতা শিক্ষিত কিন্তু মেধা-মননশীলতায় তারা মূর্খ অভিভাবক! তারা না পিতা হিসেবে কিছু করতে পেরেছে না একজন সৃষ্টিশীল সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছে! তাদের সকল সন্তানগুলো একটি চাকরীর আশায় লেখাপড়া করছে, আর একজন উৎকৃষ্ট চাকর হবার মনোবৃত্তি নিয়ে প্রতিনিয়ত লড়ছে!
Discussion about this post