পারভিন ম্যাডাম ও খসরু সাহেবের আজ দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী। প্রথম বিয়ে বার্ষিকীর দিনে ঘটে যাওয়া বিপদের স্মৃতি আজো তাজা ক্ষতের মত হয়ে আছে। যাই হোক ম্যাডাম আজ অনেক ফুরফুরে। দিনটি পালনের জন্য তিনি আজ ছুটি নিয়েছেন। খসরু সাহেব দুপুরে বাসায় ফোন দিয়ে জানিয়েছেন। তার একবেলার ছুটি মিলেছে, দুপুরের দিকে বাসায় ফিরবেন। যেহেতু হাতে সময় আছে, তাই ডাক্তারখানা হয়ে ঘুরে যাবেন। এপয়েন্টমেন্ট রেডি। কয়েকদিন ধরে কাশিটা একটু কষ্ট দিচ্ছে। তাই একটি উপভোগ্য সন্ধ্যা পালন করতে একই দিনে ডাক্তার দেখানোটাকে গুরুত্ব দিলেন। পারভিন ম্যাডাম জানালেন, ফাস্টফুডের দোকান থেকে বার্গার নিয়ে তিনিও ক্লিনিকে হাজির থাকবেন, একসাথে খাবেন।
ম্যাডাম অপেক্ষায় আছেন এখনও খসরু সাহেব ক্লিনিকে পৌঁছে নাই। রাস্তার প্রতিদিনের চিত্র, বিরাট জ্যাম, তাই দেরী হল। যখনই ক্লিনিকে পৌঁছল তখনই আর হাতে সময় নেই। স্ত্রী বার্গার এগিয়ে দিতেই বললেন, আগে ডাক্তার দেখিয়ে নেই অতঃপর একসাথে খাওয়া হবে। বলেই দু’জনেই ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করলেন।
অভিজ্ঞ ডাক্তার নানা বিধ প্রশ্ন করেই, কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা দিলেন। ডাক্তারের কাছে একটি পরীক্ষার উত্তর পাওয়াটা এখনই দরকার, তাই জরুরী বিভাগে রক্ত পাঠানো হল। ব্লাড কালেকশন চেম্বারে খসরু সাহেব, বাহিরে অপেক্ষায় তার স্ত্রী। ইত্যবসরে ডাক্তার কোন এক ফোন কলের দিকে মনোনিবেশ করলেন। তিনি আরো কোথাও যেন ফোন দিলেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লিনিকে নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশের হানা। সবার শরীর অদ্ভুত পোশাক দ্বারা আবৃত। পুলিশ হুইসেল বাজিয়ে যে যেখানে যে অবস্থায় আছে সেখানেই বসে থাকার নির্দেশ দিলেন। অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায়, সবাই হতভম্ব, কি হল, কি ঘটতে যাচ্ছে? পারভিন ম্যাডামের কাছে এটা এক ধরনের পাগলামি। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, আসামী কোথায়? মেডিক্যালে কি আসামী আত্মগোপন করেছেন!
পুলিশ কর্মকর্তা ধমক দিয়ে প্রশ্ন করলেন। খসরু কে? তিনি এখন কোথায় এবং কোন কক্ষে লুকিয়ে আছেন? মুহূর্তেই পারভিন বুঝতে পারে, তার স্বামী কোথাও কোন সমস্যা বাধিয়ে এসেছে। তার মাথায় আসমান ভাঙ্গতে যাচ্ছে। তিনি তৎক্ষণাৎ ব্লাড কালেকশন কক্ষের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে বললেন, আমার স্বামী নির্দোষ, সে ভাল মানুষ, সে কোনদিন অন্যায় করতে পারেনা! পুলিশ সহজেই আসামীর মূল কক্ষ চিনে নিতে পারলেন। কড়া গলায় ধমক দিলেন, আপনার স্বামীকে আমাদের সাথে যেতে হবেই। আর আপনিও আমাদের নজরের মধ্যে থাকবেন। এটা সরকারের নির্দেশ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই, ধড়মড় করে কয়েকজন ব্যক্তি ব্লাড কালেকশন কক্ষে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই মধ্যেই তার স্বামীকে একটি বস্তার মত কভারে ঢুকিয়ে বের করে আনা হল। তিনি সজোরে চিল্লাছেন। আমার কি দোষ, আমাকে বলেন! এরেস্টের পেপার থাকলে আমাকে দেখান। আমি ঐ কোম্পানির বড় কর্মকর্তা। আমার সম্পর্কে জানতে চাইলে এখুনি ফোন করে জেনে নিন। এভাবে অপমান করবেন না। আপনারা আমার সাথে অসৌজন্য ব্যবহার করলে আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। পারভিনের চোখের সামনেই তার স্বামীকে এভাবে পতঙ্গের মত তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! এমন দৃশ্যের কল্পনা সে আধা ঘণ্টা আগেও করেনি। কি করবে বুঝে উটতে পারছিল না। স্বামীকে লিফটে ঢুকানোর শেষ সময় পারভিনের মনে পড়ল হাতে রাখা সেই বার্গারের কথা। স্বামী অভুক্ত থাকবে। এক প্রকার দৌড় দিয়ে লিফটের দরজা আটকে ধরে। এই খানার প্যাকেট সাথে রাখ, বলে প্যাকেট বাড়িয়ে ধরল। কেউ একজন ছুঁ মেরে বার্গারের প্যাকেট ছিনিয়ে নিল। আরেকজন বলল, দ্রুত কাজ সেরে নাও, এক মিনিট সময়ও বরবাদ করা যাবেনা। পারভিন নিজেও একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এভাবে অপমানের মুখোমুখি কোনদিন হয়নি। স্বামীর চেহারায় পরিষ্কার অসহায়ত্বের ছাপ। লিফটের দরজা ধরে রেখেই সে অনুনয় করে বলল, অন্তত মোবাইল ফোনটা তার কাছে দিন। কেউ একজন বলল, সেটা আপাতত লাগবে না। খসরুর একটি কথাই সে শুনতে পেল, “পারভিন ভাল থেক”।
পরদিন জাতীয় পত্রিকায় বড় হেডিং এ খবর এলো। দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান লাভ। তিনি প্রথিতযশা কোম্পানির বড় কর্মকর্তা। ঘন ঘন বিদেশ সফর করতেন। সপ্তাহ দুই আগেও তিনি চীন থেকে ঘুরে এসেছেন। এখন তিনি সরকারী হেফাজতে আছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, এই কয়দিনে তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী পারভিন একজন এনজিও কর্মকর্তা, তাকেও নিবিড় পরিচর্যার মধ্যে রাখা হয়েছে।
মুহূর্তেই সারাদেশ এই খরবে সয়লাব! সকাল দশটার মধ্যেই পুরো জাতি খসরু-পারভিন দম্পতির নাম জেনে যায়। ফেসবুকে অগণিত পোষ্ট ভাসতে থাকে। বেশীর ভাগ রিয়েক্ট আতঙ্কিত চিহ্নের! অনেক মন্তব্য-কারী এই দুই জন রোগী মারা গেলে কিভাবে, কোন স্থানে সৎকার করতে হবে সে ব্যাপারে পোষ্ট দিচ্ছেন। যাচ্ছেতাই লাইকের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে আজকের হট নিউজ এটাই। আতঙ্কিত জনগণের চোখ টিভির খবরের দিকে, দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী ধরা পড়েছে! দুপুরের মধ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রী তার কৃতিত্বের কথা জানিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত থাকতে অনুরোধ করলেন। দেশের চিকিৎসা, আধুনিক হাসপাতাল ও যন্ত্রপাতির ভূয়সী প্রশংসা করলেন।
চারিদিকে আয়নায়েরা একটি বিরাট কক্ষের এককোণে পারভিনের ঠাঁই হয়েছে। সেখানে একটি সিট আছে, শরীরে যন্ত্রপাতি লাগানো, পাশেই টয়লেট। ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে নেই। কখনও বেশী ঠাণ্ডা, কখনও বা গরম, এক দমবন্ধ করা পরিবেশ। এটা কি রোগের ধরণ পরীক্ষার জন্য না কি এসি মেশিন খারাপ বুঝতে পারছে না। কাউকে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ নেই। আতঙ্কিত কিছু ব্যক্তি চোখে রাজ্যের ভয় নিয়ে কাচের দেওয়ালের বাহিরে থেকে রোগীকে দেখে যায়। তাদের মধ্যে কে ডাক্তার, কে নার্স বুঝার উপায় নেই। কয়েকবার চিল্লায়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়েছে। ভাগ্যিস সাথে কলম ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্য কোন কাগজ নেই। কুড়িয়ে পাওয়া একটি চিরকুটে লিখে, তার মোবাইল ফোনটা তাকে দেবার জন্য অনুরোধ করল। আবদার প্রত্যাখ্যাত হল। দেওয়ালের ওপাশ থেকে তাকে শান্ত থাকা ও ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে বিপদ মুক্ত হওয়া অবধি এভাবে থাকতে বলা হল।
পারভিন ভাবে, রোগশোকে আক্রান্ত হলে শত্রু পর্যন্ত মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র হয়ে যায়। আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা বাড়ে কিন্তু তাকে এমন একটি রোগের সন্দেহে আটকানো হয়েছে, যার কারণে সবাই আতঙ্কিত। এই কয়দিনে তার খবর নেবার জন্য কেউ আসেনি। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীর কোন খবর নিতে পারেনি। সে বাইরের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছে। অফিসের কলিগদের অনুভূতি, বন্ধু-বান্ধব সহ সর্বোপরি প্রতিবেশীদের কেমন ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। বিরাট একাকীত্ব তাকে গ্রাস করেছে। ভাবছে বিশাল মহাবিশ্বে, সেই মনে হয় সবচেয়ে বড় দুর্ভাগা। ঘরে মিষ্টি এনে রেখেছিল। কেক, বাদাম, আইসক্রিম সহ নানাবিধ উপকরণ স্বামী ও প্রতিবেশীদের নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার সাতে উপভোগ করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কিসের মধ্যে হঠাৎ করে কি ঘটে গেল। বুঝতেই পারছেনা, এটা কি দুঃস্বপ্ন না কি বাস্তব। জানালার কাচে ধাক্কা খাওয়া বাতাসের হু হু ধ্বনী যেন অন্য জগতের হাতছানি দিচ্ছে।
স্বামীর কথা ভাবে, এখন সে কি অবস্থায় আছে। ঝড়ের তাণ্ডবের মত মুহূর্তে দু’জন আলাদা হয়ে গেল। সে এক দুঃস্বপ্নের প্রতিধ্বনি। তার হৃদয় মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। এই ঘর তো জেলের চেয়েও ভয়ঙ্কর! একাকী, নিঃসঙ্গতার এক মিনিট সময় কাটানো বাহিরের দশ ঘণ্টার চেয়েও বেশী কষ্টের। সে যেন এক মহাকালের সাক্ষী, এখানে কতদিন ধরে আছে মনে করতে পারছেনা। কাচের জানালার ছোট ছিদ্র দিয়ে হাত বের করে, প্রতিদিন রক্ত নেওয়া হচ্ছে, এটাই তার চিকিৎসা। সে জানতে পারছে না, আসলে তার কি হয়েছে? কেন তাকে এভাবে প্রাণীদের মত খাঁচায় বন্ধী করা হয়েছে। খাঁচার প্রাণীরা তো আরো ভাল থাকে। এখানে চিল্লালে নিজের কথা নিজের কানে ফিরে আসে। এই দুঃচিন্তা আর কত। মনে হয় হৃদয়ে তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে কিন্তু বলবে কাকে? দেখাবে কাকে? কেউ খবর নিতে আসেনি। যারা আসে তারা দুষমনের মত ব্যবহার করে।
এমন ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গতার ওজন পারভিন আর বহন করতে পারেনা। বিশাল ঘরটিকে সে কবরের সাতে সাদৃশ্য করে। সে কোনদিন কবরের ভিতরের দৃশ্য দেখেনি। ভাবতে থাকে তা নিশ্চয়ই এ ধরনের একাকী নিঃসঙ্গতায় ভরা থাকবে। আরো ভাবে, পৃথিবীর কোথাও কেউ না থাকলে সে কি একাকীই হয়ে যায়। শুনেছে সকল অবস্থাতেই আল্লাহর সাহায্য মিলে। আল্লাহকে কোনদিন ডাকা হয়নি। গরজ বোধ করেনি। সে বুঝতে পেরেছে তার এমন একটি ভয়ানক রোগ হয়েছে, যা পারমানবিক বোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাই যে কোন মুহূর্তে প্রাণত্যাগ করতে পারে। সময় হিসেব করে চলে, এই মুহূর্তের প্রতিটি নিঃশ্বাস খুবই দামী। বাহিরে হাজারো বন্ধু বান্ধব, সহচর আছে কিন্তু কেউ জানবে না, তাদের পারভিন কি দুঃসহ অবজ্ঞা নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করেছে। পত্রিকায় লেখা হবে, চিকিৎসার কোন ত্রুটি ছিলনা, হাজারো চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি পরলোক গমন করেছেন।
সে ভাবে, পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম নিঃসঙ্গতার স্থান হল কবর। হাসপাতালের এই কক্ষটিতেও কবরের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, সুমসাম নীরবতা, ইচ্ছে করে যেন বাতাসের সাথে কথা কয়। বাহিরের জীবনে একটু সময়ের অভাবে, কত বন্ধু সময় পায়নি। এখন তার অনেক অনেক সময় কিন্তু চরম একাকী। একবার চিল্লায়ে উঠেছিল, বাহির থেকে কেউ কেউ দেখে গেছে। না এখনও মরে নি। তাহলে কার সাথে কথা বলবে? কাকে শোনাবে মনের কথাগুলো! হ্যাঁ একটি বিকল্প তৈরি হয়েছে। আল্লাহই একমাত্র ভরসা। কিন্তু তাকে কিভাবে ডাকতে হয়, কখনও শোনা হয়নি। তারপরও বসে পড়ে মাটিতে। হু হু করে হৃদয় ভাঙ্গা কান্না চলে আসে। শাড়ীর আচলে চোখ ভিজে। শুধু একটি কথাই সে বলতে পারছিল, আল্লাহ তুমি আমায় ক্ষমা করো। তোমায় কখনও ডাকি নি, আমায় ক্ষমা করো। আমার অবজ্ঞা, অবহেলাকে তুমি মার্জনা কর। আমি মারা গেলে তুমি আমাকে অপরাধী করোনা। আমার স্বামীকে ক্ষমা করো, জগতের সকল মানুষকে ক্ষমা করো। আরেকবার বাহিরের আলো বাতাস নেবার সুযোগ পেলে কখনও ভুলে যাব না। পারভিন অনুভব করতে পারল এই কথার মধ্যে ভিন্ন ধরনের এক প্রাণশক্তি আছে। সারা জীবনে এমন অনুভূতি কখনও পায়নি।
তিন দিন পরে ডাক্তারের দল এসে হাসি মুখে তাকে সম্ভাষণ জানাল। করোনা ভাইরাসের আক্রমণে দুই দিনে আগেই তার প্রিয়তম স্বামী দুনিয়ার সান্নিধ্য ত্যাগ করেছে। সে কারণে তাকেও নিবিড় পরিচর্যার জন্য হাসপাতালে রাখা হয়। নানা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, সে এই মহামারি ব্যাধি থেকে মুক্ত। তবে সাবধানে থাকতে হবে। হয়নি বলে যে হবেনা, সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেনা। সারা দেশের মানুষ তার নাম জেনে গেছে। পুরো দেশে এই রোগ নিয়ে মহাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বামীকে হারিয়ে অঝোর ধারায় কান্না করছিল। তার সুখে-দুঃখের সাথী। মনে পড়ছে বহু করুন চমৎকার স্মৃতির কথা। মনে পড়ছে ঘটা করে দ্বিতীয় বিয়ে বার্ষিকী পালন করবে বলে বিরাট প্রস্তুতি নিয়েছিল। ঘরে সবই প্রস্তুত শুধু সময়ের অপেক্ষা। বাইরের দুনিয়া এখনও আগের মতন, শুধু তার পরীক্ষিত বন্ধুটি বেচে নেই। কেউ জানেনা তার দেহ কোথায় লুকানো হয়েছে। কিন্তু তার দশ দিনের জেল জীবন দশ বছরের শিক্ষা দিয়েছে, তাকে অন্য এক মানুষ বানিয়ে ছেড়েছে। ট্যাক্সিতে করে একাকী তার বাসায় পৌঁছে। বাড়ী ওয়ালী দূরে থেকে তাকে আসতে দেখেই উৎকণ্ঠিত হয়ে চিৎকার দিল, দয়া করে আমার বাসায় ঢুকবেন না। বাড়ী ওয়ালীর চিল্লানীতে সবাই জেনে গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সেই ম্যাডাম সাক্ষাৎ মৃত্যু দুহ হয়ে এলাকায় এসে গেছেন। পুরো মহল্লায় মাতম। মরে গেলে ভালই হত, না মরে নতুন বিপদ বাড়াল। পারভিন এদের সবাইকে চিনে, কয়েকদিন আগেও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ছিল। এদের কারো বোধশক্তি নেই। এদের কেউ একজন আক্রান্ত হলে বুঝত। মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মরার চেয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মরা অনেক ভাল। অনেক সম্মানের।
পঞ্চম তলার সকল ভাড়াটিয়ারা ইতিমধ্যে পালিয়েছে, কেননা এই ফ্লোরেই তার বাসা। ঘরের তালা ভাঙ্গা, হয়ত চোরের মনেও মৃত্যু আতঙ্ক ভর করেছিল, তাই কিছু ধরে নি। ভিতরে সবই আগের মত আছে, টেবিলে রেখে যাওয়া কেক শুকিয়ে কিছুটা ইঁদুরের খাবার হয়েছে। কেকের সাদা-কালো ক্রিমগুলো গলে সারা টেবিলে একাকার হয়ে আছে। পারভিন ভাবে যথাসময়ে মারা গেলে তার দেহের গোশতগুলো এতদিনে পচে-গলে এই কদাকার ক্রিমের মত হয়ে যেত।
একটি কাল্পনিক চিন্তার আলোকে গল্পটি রচিত
Discussion about this post