রঙধনুর সাত রং কিন্তু সেখানে খয়েরী বর্ণের কোন রঙ নেই। তবে এই বর্ণ সৃষ্টি করতে পারে এমন একটি গাছ আছে যার নাম ‘খয়ের’। এই খয়ের গাছ থেকেই খয়েরী রংয়ের উৎপত্তি। অতীত কালে খয়েরী বর্ণের পোশাক বানাতে এই খয়ের গাছ থেকেই রং সংগ্রহ করে কাজ সারানো হত। এছাড়াও খয়ের গাছের আরো কিছু কৌতূহল-উদ্দীপক পরিচিতি আছে। খয়েরী গাছের ইতিকথা
আরো পড়তে পারেন…
- কালোজিরা : নিয়ত করে খেলে যে বিচি রোগ সাড়ায়
- জনহিতকর ব্যাঙের ছাতা মাশরুম যখন বিরক্তকর
- স্ন্যাক লিলি Snake lily দেখতে অপূর্ব
পানের উপরে চুন মাখিয়ে, সুপারি ছিটিয়ে, খয়ের মিশিয়ে, মনের সুখে পান চিবায় পান প্রেমী। পানের উপরে খয়েরী বর্ণের প্রলেপ দেওয়া তরলের নাম ‘খয়ের’। যা খয়ের নামক গাছ থেকেই সৃষ্টি হয়। পান খায় অথচ খয়ের চিনে না, এমন বেকুব পান বিলাসী মানুষ হয়ত আমাদের দেশে পাওয়া যাবেনা। খয়েরের ঘ্রাণ সুখকর ও আমুদে ভাব এনে দেয়। যারা পান খায় না এমন ব্যক্তিদের কাছেও খয়েরের ঘ্রাণ ভাল লাগবে।
বাজারে কত ধরনের পানের সাজ আছে তার হিসেবে মেলানো ভার। তবে কম-বেশী প্রায় সকল পানের সাজেই খয়েরের উপস্থিতি দেখা যাবেই। খয়ের মুখ লাল করে, মুখে ঘ্রাণ এনে দেয় এবং মুখের বাজে দুর্গন্ধ দূর করে। যাদের সাদা পাতা খাওয়ার বদ অভ্যাস আছে, তারা খয়ের যোগে পান খেয়ে, সাদা পাতার অভ্যাস দূর করতে চেষ্টা করে। মূলত খয়ের একটি ঔষধি গাছ। প্রাচীন কাল থেকেই এটার ব্যবহার চলে আসছে।
বাংলায় যাকে খয়ের বলা হয়; আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দিতে তাকে ‘কাথ’ হিসেবে চেনা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় Catechu. মাঝারী প্রকৃতির গাছ। পাতা, বাকল দেখতে অনেকটা তেঁতুল গাছের মত। কাঠের ভিতরের অংশ রক্ত বর্ণ। কাঠ চিরানো হলে ভিতরের শাস দেখে মনে হবে কেউ যেন ঠাসাঠাসি করে খয়ের ঢুকিয়ে রেখেছে। রাজশাহী অঞ্চলে খয়ের গাছ জন্মে এবং খয়ের বানানোর পেশাজীবী মানুষও সেখানে আছে।
পরিপক্ব গাছ কেটে ছোট্ট ছোট্ট টুকরায় বিভক্ত করে ডেকচিতে ভরে চুলায় সিদ্ধ করা হয়। একপর্যায়ে কাঠের নির্যাস সিদ্ধ গরম পানিতে ছড়িয়ে পরে। পরে সে পানিকে পুনঃ পুনঃ জ্বাল দিয়ে পানি শূন্য করে তলানি আকারে খয়েরের স্তর পরে। সেটাই পরবর্তীতে ব্যবহার হয়। খয়েরী গাছের ইতিকথা
আগের যুগে সাদা কাপড়কে খয়ের গাছের সাথে সিদ্ধ করে খয়েরী বর্ণের পোশাক তৈরি করা হত। পরবর্তীতে কিভাবে ঘ্রাণ যুক্ত খয়েরের সাথে পানের আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টি হল তার ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে খয়ের ঔষধি গাছ হিসেবে ইউনানি তথা গ্রীক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।
প্রাচীন কাল থেকেই দাঁতের মাড়ির ক্ষয়, দাঁতের গোরা থেকে রক্ত পড়া, মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। হয়ত এই গুনের কারণে খয়েরকে পানের সাথে খাওয়ার নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছিল। শুরুতে পানের ব্যবহারও মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধক হিসেবে চালু হয়েছিল।
ভেষজ চিকিৎসায় খয়ের গুড়ো সিফিলিস, গনোরিয়া, অধিক রজঃস্রাব ও শ্বেতস্রাবের জন্য চিকিৎসার পথ্য হিসেবে দেওয়া হত। তাছাড়া খয়ের নারী যৌবনকে দীর্ঘস্থায়ী তথা সবল ও সুঠাম রাখে বলে ইউনানি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইতে উল্লেখ আছে। অধিকন্তু অল্পমাত্রার খয়ের খাবার ফলে যৌন সম্ভোগের ক্ষমতা বাড়ে কিন্তু অধিক ব্যবহারে পুরুষত্ব হানি ঘটে বলে সাবধান করা হয়েছে!
এক সময় বুড়ো মানুষেরাই পানের সাথে খয়ের খেত। বয়সের এক পর্যায়ে দাঁত ও মাড়ি সংক্রান্ত রোগ দেখা দিত। যার কারণে তাদের খয়ের খাওয়ার প্রয়োজন পড়ত। বর্তমান কালে অল্প বয়স্করাও সৌখিনতার বসে পানের সাথে লাগিয়ে খয়ের খায়! অন্যের দেখাদেখি অভ্যাস ক্ষতির কারণ হয়। সে হিসেবে অল্প বয়স্কদেরও হুশিয়ার থাকা উচিত।
Discussion about this post