আমাদের মাথার উপরে ঘরের ছাদে যখন ফ্যান ঘুরে তখন আমরা তার বাতাস গায়ে মেখে আরাম বোধ করি কিন্তু দ্রুত ঘূর্ণায়মান পাখাগুলো পরিষ্কার দেখতে পাইনা। কখনও কি ভেবে দেখেছি ফ্যানের পাখাগুলো নিজের অক্ষের চারিদিকে সেকেন্ডে কতবার ঘুরছে কিংবা ঘণ্টায় কত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করছে? পৃথিবী যখন দোলনা
রকেটের গতি-সীমা
রকেটের গতি-সীমা যদি সেকেন্ডে ৮ কিলোমিটারের বেশী হয় তাহলে সেটি মর্ধ্যাকর্ষণ শক্তির সীমা ভেদ করে মহাকাশে যেতে পারে। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। আমরা দেখে থাকি রকেট মহাশূন্য অভিমুখে ছুটছে কিন্তু আমার দৃষ্টিশক্তি ও জ্ঞান ধারনা করতে পারে না যে, সেটি প্রতি সেকেন্ডে ৮ কিলোমিটারের বেশী পথ পরিক্রমণ করছে।
ফ্যানের গতি
প্রায় দুই ফিট লম্বা ব্লেড যুক্ত একটি ফ্যানের কথা ধরি। সেটির পাখা সেকেন্ডে ৫ বার হিসেবে ঘণ্টায় ঘুরে ১৮ হাজার বার। (৩০০ rpm হিসেবে)। সে হিসেবে এক একটি ফ্যানের পাখা ঘণ্টায় ৪১ মাইল তথা ৬৫ হাজার কিলোমিটার পথ পরিভ্রমণ করে। আরামদায়ক হাওয়া গায়ে মাখাতে মানুষ সারা জীবনে একটি পাখাকে কত কোটি মাইল ঘুরিয়েছে সে হিসেব হয়ত রাখে না! রাখা সম্ভবও নয়। কিন্তু একটি হিসেব প্রতিটি মানুষেরই জানা থাকা দরকার। পৃথিবী যখন দোলনা
আরো পড়ুন…
- চলুন বিড়াল-কুকুর থেকে শিখি
- পরিবেশের সাথে শত্রুতা
- ইউক্যালিপটাস : পরিবেশ বিপর্যয়ের যত কারণ
আমরা যে পৃথিবীতে বসবাস করি, যার মাটি-পানি-আবহাওয়া আমাদের শান্তি দেয়। এর সামান্য ভূমি দখল করার জন্য, একজন অন্য জনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে নরপতিরা। কিন্তু ভেবে দেখিনা এই পৃথিবীও কিন্তু খুব ঠুনকো ভিত্তির উপর নির্ভরে করে মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর গতিবেগ সম্পর্কে কি ধারনা আছে? চলুন হিসেবটা জেনে নেই।
পৃথিবীর গতি
পৃথিবী তার বিশাল দেহ নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ততার সহিত প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিমি গতিতে ছুটে চলছে লক্ষ বছর ধরে! দ্রুত ধাবমান রকেটের গতি ঘণ্টায় প্রায় ২৯ হাজার কিমি আর পৃথিবীর গতি ঘণ্টায় ১ লক্ষ ৮ হাজার কিলোমিটার। আমাদের সবাইকে নিয়ে পৃথিবী এভাবেই সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে অবিরত। পৃথিবী যখন দোলনা
আরো একটি হিসেবে এখনও বাকি তাই, অনুগ্রহ করে,কথার ভিতরে মনোনিবেশ করুন। পৃথিবী তার ভয়ানক গতি নিয়ে শুধু সূর্যের চারিদিকেই ঘুরছে না। ক্ষিপ্ত গতিতে খেলনা লাটিম যেভাবে তার খুঁটির উপর নির্ভর করে ঘুরে। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীও নিজের কেন্দ্রকে নির্ভর করে ঘণ্টায় ১৬০০ কিলোমিটার বেগে লাটিমের মত ঘুরছে। একটি পরীক্ষা করে দেখুন তো।
ঘূর্ণায়মান লাটিম কিংবা ফ্যানের উপরে কিছু রেখে দেখুন তো জিনিষটা এসবের উপরে সেটে বসে থাকে কিনা! যতবারই চেষ্টা করা হউক না কেন মানুষ প্রতিবারেই ব্যর্থ হবে। তাহলে একটু কল্পনার শক্তি দিয়ে চিন্তা করুন তো, কাজটি লাটিমের উপর করা না গেলেও আমরা কারো দয়ায় কিন্তু পৃথিবীর পৃষ্টে ঠিকই দাড়িয়ে আছি! চিন্তা করুন তো, কোন ধরনের ঘূর্ণনের চক্করে আমরা পৃথিবীতে বসবাস করছি! আমাদের মধ্যে যিনি শক্তিশালী, তাকে তার নিজের দুটো পায়ের উপর দাড়িয়ে চক্কর দিয়ে দেখাতে বলুন তো, সে কয় চক্করের মহাবীর! বা নিজেরাও ঘুরে দেখতে পারি, কত-চক্করের ক্ষমতা আমাদের আছে!
সূর্যের পরিস্থিতি
আমাদের পৃথিবীর যিনি মা, তিনি হলেন সূর্য! না তিনিও বসে নেই। সে তার সকল সন্তানাদি নিয়ে নিজের গ্যালাক্সির মধ্যে পাগলিনীর মত সেকেন্ডে ২০০ কিলোমিটার বেগে ঘুরছে! চিন্তা করা যায় কেমনতর ভয়ঙ্কর ঘূর্ণন প্রক্রিয়া! সামান্য হের ফের হলেই সবকিছুই মুহূর্তে পাউডার হয়ে যাবে।
পৃথিবী কিংবা সূর্য কোন একটি বস্তু যদি এক সেকেন্ডের জন্য থমকে দাঁড়ায়। তাহলে দুনিয়ার বুকে বাস করা দাম্ভিক, মূর্খ, সহায়-অসহায় সহ সবাই তাদের সহায় সম্পদ নিয়ে ‘মা’ শব্দ উচ্চারণে আগেই মহাশূন্যে তুলার আঁশের মত ছিটকে পড়বে! এই শক্তির বিপরীতে মানুষের ক্ষমতা, দাম্ভিকতা, চাতুর্যতার পরিমাণ খুবই নগণ্য।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,
“তিনিই তো সৃষ্টি করেছেন, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বানিয়েছেন দোলনা স্বরূপ এবং তৈরি করে দিয়েছেন রাস্তা। যাতে তোমাদের গন্তব্য-স্থলের পথ খুঁজে পাও”
সূরা আয-যুখরফ-১০
পৃথিবীকে মানুষের জন্য বড় অনুগ্রহ করেই, দোলনার মত বানিয়েছেন এবং তার বুকে চলার জন্য রাস্তা করে দিয়েছেন’! কোন রসি কিংবা বন্ধন ছাড়াই আল্লাহ এই পৃথিবীকে প্রচণ্ড গতিতে সদা ঘুরাচ্ছেন। এটা বুঝার জন্য, চলুন নিজের চিন্তাকে একটু ভিন্ন-দিকে ধাবিত করি। ক্ষুদ্র পিঁপড়াকে গোলাকার বলের উপরে কদাচিৎ আমরা হাটতে দেখেছি! পিপড়া কিন্তু কখনও গোলাকার বলের পিট থেকে ছিটকে পড়েনা!
বিশ্বাস করুন, পুরো মানবজাতি সহ সকল সৃষ্টি, অবিকল পিপড়ার মত, পৃথিবীর বুকে পা লাগিয়ে মাথাকে নিচের দিকে উল্টো করেই লটকায়ে হাঁটছি, দৌড়চ্ছি, ঘুমচ্ছি আর দুনিয়ার অঘটন ঘটাচ্ছি! যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুণ্ঠনে ব্যস্ত হয়ে গর্ব, অহংকার আর দাম্ভিকতায় হেটে চলছি!
যে কোন মুহূর্তে টলটলায়মান এই ভু-গোলক থেকে আমরা ছিটকে পড়তে পারি কিন্তু মানুষ তা উপলব্ধি করেনা। কেননা মানুষ নিজেকে ও তার স্রষ্টাকে চিনার ক্ষেত্রে বড় উদাসীন ও অকৃতজ্ঞ। তারা নিজের দেহের দিকে তাকিয়ে গর্ব ও অহংকারের সহিত বলে, সে সৃষ্টির সেরা জীব! মানুষের নগণ্য ও সীমাবদ্ধ জ্ঞানের দিকে লক্ষ্য করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,
“মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বুঝে না”
সূরা-আলগাফির / আল-মুমিন-৫৭
Discussion about this post