বাহ্যিক রূপে নম্র মানুষ ও বেকুপ মানুষের দৃশ্যমান কোন বড় তফাৎ নেই। তাই নম্রতাকে অনেকেই বেকুবী মনে করে। নম্র স্বভাবের মানুষকে অনেকেই unsmart ভাবে! দুনিয়াতে খুব কম সংখ্যক মহিলারাই বিনম্র স্বভাবের স্বামীদের পছন্দ করে। বরং তাদের কাছে, ঘুষ খোর, ফড়িয়া, ধান্ধাবাজি করে নগদ উপার্জন বেশী করতে পারে এমন পুরুষদের কদর বেশী! কিন্তু উপরোক্ত চরিত্র একজন বিনম্র মানুষ অর্জন করতে পারে না। তাই এটাকে অনেকে অযোগ্যতা-অদক্ষতা মনে করেন! এমনকি বিনম্র মানুষকে এসবের উৎস মুখে বসিয়ে দিলেও; সে, না নিজের জন্য কিছু নেয়, না অন্যকে পাইয়ে দেয়।
বিনম্র মানুষের মৌলিক গুনাবলী অনেক প্রখর হয়। তারা আস্তাবান ও ধৈর্যশীল হয়। বিপদে বিচলিত হয়না বরং মুসিবত মোকাবেলায় বেশ পারঙ্গম হয়! এমন মানুষ ওয়াদা খেলাপ করেনা। তাদের দ্বারা আত্মীয়-অনাত্বীয় সবাই উপকৃত হয়। পিতা-মাতা তো সবচেয়ে বেশী উপকৃত হয় তার বিনম্র স্বভাবের সন্তানের দ্বারাই। গর্ব-অহঙ্কার মুক্ত জীবন তাদের পছন্দ। গরীব-দুঃখি মানুষেরা তাদেরকে বন্ধু মনে করে। তারা কারো উপকার করতে না পারলেও কখনও কারো অপকার করেনা। বিপদে হতাশ হয়ে পড়েনা। প্রয়োজনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপের মাধ্যমে সামনে আগাতে বদ্ধপরিকর থাকে। সৎ ভাবে জীবন পরিচালনায় তারা খুবই আগ্রহী হয়। যার কারনে তাদের জীবনে সহসা সম্বৃদ্ধি আসে না। বৈষয়িক সম্বৃদ্ধি না আসলেও তারা ব্যক্তি জীবনে শান্ত, উদার ও সুখী জীবন যাপন করে। তারা খারাপ আচরণের জবাব ভাল দ্বারা দিয়ে থাকে। প্রয়োজনে কটু কথা শুনে সে স্থান ত্যাগ করে। বিনম্রতার এই দিকটিকেই অনেকে বেকুবী মনে করে থাকে। স্ত্রী-দের চোখে পুরুষের এই গুনটি নির্বোধ-কাপুরুষতার লক্ষণ! তাই তাকে বেকুব, নিরীহ, গোবেচরা বলে স্বামীর মনে জেদ তুলতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে তাদের চরিত্রে জেদ করার কোন বালাই থাকেনা! স্বামী-স্ত্রী যার কাছেই থাকুক; বিনম্রতার গুন সুখী সংসার নির্মাণের অন্যতম উপাদান। তারা কথার পিটে কথা বলেনা। স্ত্রীর রাগের সময় স্বামী উত্তেজিত হয়না। স্ত্রী এমন হলে, সংসারে রাগা-রাগির কারণ ঘটেনা। পরিবেশ শান্ত হলে বুঝাতে চেষ্টা করে। সুখে-দুঃখে স্বামীর এই চরিত্র সকল স্ত্রীদের কাছে খুব পছন্দ। ফলে বিনম্র স্বামীদের এই স্বভাব-চরিত্র সুখময় সংসার বিনির্মার্ণে বেশী কাজে আসে।
রহমত নামক গুন থেকেই বিনম্রতার সৃষ্টি হয়।
মূলত বিনম্র মানুষ আল্লাহর স্পেশাল সৃষ্টি। রাসুল (সা) বলেছেন, “আল্লাহ তার কোন বান্দাকে রহম করার ইচ্ছা করেছেন তো, তার চরিত্রকে বিনম্রতার গুনাবলী দিয়ে ভড়িয়ে দেন”। ফলে তিনি সবার প্রতি দয়ালু হয়ে উঠে। বিনম্রতা মানব জীবনে এমন একটি গুন, যার প্রভাবে, ব্যক্তি ধনী হলেও যেমন জগতের উন্নতি হয়, দরিদ্র হলেও সমাজের উপকার হয়। এসব ব্যক্তির হাতে শুধু মানবতা নয়, গাছ পালা, প্রাণীকুল সহ সমগ্র সৃষ্টিকুল উপকৃত হয়। রাসুল (সা) বলেছেন, ‘জান্নাতে ঘুরাফেরায় ব্যস্ত আমি এমন অনেক মানুষকে দেখেছি, যারা দুনিয়ার জীবনে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিষ সরিয়ে রাখত’। গরীব হলেও, বিনম্র মানুষের ক্ষুদ্র কাজকেও আল্লাহ মহামূল্যের বিনিময়ে প্রতিদান দিয়ে থাকেন এবং দুনিয়াতে মানব উপকারে কাজে লাগায়।
বিনম্র মানুষ তকদিরের উপর যথেষ্ট আস্তাশীল হয়। লক্ষ্যে পৌছার জন্য ভাঁওতাবাজী বাদ দিয়ে স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার কারণে তারা যথেষ্ট ধৈর্যশীল হয়ে উঠে। মানব জীবনের জন্য বিনম্রতা কতবড় স্বর্গীয় গুন, তা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই ঘোষনা করেছেন এভাবে, “রাসুল (সা) কে সৃষ্টি করেছেন, বিনম্রতার সর্বোত্তম গুনাবলী দিয়ে”।
তাই স্বীয় সন্তান দ্বারা যদি কোন পিতা-মাতা উপকৃত হতে চায়, তাহলে তাদের অন্যতম দায়িত্ব শিশুদেরকে বিনম্রতার গুনাবলী পাইয়ে দেওয়া। বহুটাকা ব্যয়ে পৃথিবীর দামী স্কুলে পড়ালেই শিশুরা বিনয়ী -বিনম্র হয়ে উঠেনা। এটা অর্জনের জন্য ঘর হল তার আদর্শ বিদ্যালয় এবং পিতা-মাতাই হল তার প্রধান শিক্ষক। বিনম্র সন্তানের উপকার প্রথমেই পিতা-মাতা পেয়ে থাকেন। পিতা-মাতা ছাড়াও দাদা-দাদী, চাচা-চাচীরাও এ কাজের শিক্ষক। আল্লাহ বলেছেন, নীচের হাতের চেয়ে উপরের হাত উত্তম। তাই বিনম্রতা অনুশীলন করাতে, ঘর থেকে যেন কোন ভিখ প্রার্থী বিফল মনোরথে ফেরত না যায়। ভিক্ষা দিতে না পারলেও যেন, উত্তম কথা দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেই। প্রতি দিন দুই টাকা করে হলেও যেন, ভিক্ষা দিয়ে উপকারের অভ্যাস করাতে চেষ্টিত হই। শুক্রবারে মসজিদে যাবার কালে শিশুর পকেটে দশটি টাকা ঢুকিয়ে দিন। মসজিদ থেকে ফেরত আসলে খবর নিন সে টাকা কি করেছে এবং তার অনুভূতি কি? বিকলাঙ্গ মানুষ দেখলে শিশুকে প্রশ্ন করুন যদি তোমার এ দশা হত! কেমন লাগত? এটা বলে তার মনের মণি কোঠায় আঘাত দিন! তার বিবেকবোধ বাড়তে থাকবে, দয়া-মায়ার প্রভাব বাড়বে, সর্বদা দেবার মানসিকতা সৃষ্টি হবে এবং দান করার অভ্যাস গড়ে উঠবে। দেবার এই অভ্যাসে পৃথিবীতে কেউ গরীব হয়না। এটা আল্লাহর কাজ, তিনি এ কাজ খুব পছন্দ করেন। তাই তিনি এই ব্যক্তির হাতকে সদা বরকত দিয়ে ভড়িয়ে দিবেন। সন্তানের এই অভ্যাসে জগত বাসির উপকার তো হবে বটেই, শুরুতে উপকৃত হবে তার পিতা-মাতা। এটা দেখেই পিতা-মাতার অন্তরাত্মা প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। তাছাড়া, পিতা-মাতা মরে গেলেও, দুনিয়াবী জীবনের পুত্রের এই অনুদানের হিস্যা, কবরে শুয়ে পেতে থাকবে।
Discussion about this post