হিন্দু ধর্মে নারীর কোন সম্মান ও মর্যাদাই নাই, সতীদাহের মত নির্মম-নিষ্ঠুর অমানবিক প্রথা হিন্দুধর্মের আবিষ্কার। কোন নারী সৌভাগ্যক্রমে স্বামীর জ্বলন্ত চিতা থেকে রেহাই পেলে, তাকে পদে পদে এমন তিরস্কার করা হত, সে নারী বাঁচার চেয়ে মরণ যন্ত্রণাকে উত্তম বিবেচনা করত।
বহু বিয়ে হিন্দু সমাজে নিষিদ্ধ এমন কি বিধবাদের দ্বিতীয় বিয়েও ঘৃণিত! সাধারণ হিন্দুদের জন্য এসব নিষিদ্ধ হলেও, হিন্দু ধর্মে বহু বিয়ে প্রথা বিদ্যমান। ইতিহাসে প্রমাণিত রাজা দশরথের তিনজন, মহারাজা ধ্রুবের পাঁচজন, পাণ্ডুর দুই জন, অর্জুনের তিনজন স্ত্রী ছিল। বহু বিয়ে, বিধবা বিয়ে হিন্দু সমাজে ঘৃণিত হলেও অন্যের স্ত্রীর সাথে চুপিসারে প্রনয় করা, পরকীয়া প্রেমে মজে থাকাটা হিন্দু সমাজে ঘৃণিত ছিলনা। দেব-দেবতাদের প্রেমের সকল কাহিনী গুলোই পরকীয়া ঘটনায় ভরপুর!
নারীকে উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘নারীরা কখনও তালাক পাবেনা। ধন-সম্পদ, শিক্ষায় নারী অধিকার চাইতে পারে না। স্বামী হল নারীর দেবতা, স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর স্বর্গ! তাই স্বামী স্ত্রীকে যত অত্যাচারই করুক না কেন, তাকে স্বামীর কাছেই থাকতে হবে’।
নারীর চরিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নারী স্বাধীন হবার যোগ্য নয়, তার কোন ইচ্ছা আখাঙ্খা থাকতে পারেনা! শয্যা-প্রিয়তা, অলঙ্কারাসক্তি, ব্যভিচারের ইচ্ছা, কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, মিথ্যা এবং পুরুষ দেখলেই মিলনের ইচ্ছা নারীর স্বভাবজাত বদ খাসিয়ত। পুরুষ পৃথিবীতে পাপ করলে পরজন্মে নারী হয়ে জন্মাবে। নারী জাতি হীন, পাপ-মূর্তি, বিশ্বাসের অযোগ্য এবং দাস সম্প্রদায়ভুক্ত’!
নারীর দোষ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোন মানুষকে এক হাজার মুখ দিলে, সেই প্রতিটি মুখে হাজার বছর ধরে নারীর বদনাম করলেও, নারীর দোষ বর্ণনা করা শেষ হবেনা! নারী থেকে কোন ভাবেই পরামর্শ নেয়া যাবেনা, এমনকি পরামর্শ নেবার সময়ে নারীকে কাছেও রাখা যাবেনা’!
নারীর প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা: কন্যা প্রথম ঋতুবর্তী হলে, পিতা-মাতা সে কন্যাকে মন্দিরের প্রাঙ্গণে রেখে আসতেন! ছেলেরা সে সব মেয়েদের তুলে জঙ্গলে নিয়ে যেত। মেয়েকে ধর্ষণ করে পিতা-মাতার কাছে ফেরত আনা হত। এতে মেয়ে পবিত্রতা অর্জন করতে পেরেছে মনে করে পিতা-মাতা আহ্লাদিত হত। বাড়ী ফিরে আত্মীয়দের নেমন্তন্ন করা হত, পূজার ব্যবস্থা হত। ভীত-সন্ত্রস্ত এসব বালিকার বোবা কান্নার আওয়াজ ঢোলের বাড়ির নিচে চাপা পড়ে যেত! ধর্মীয় রীতির এই নিয়মের যথেষ্ট অপ-ব্যবহার হত! কখনও কখনও সুযোগ সন্ধানী ছেলেরা, বালিকাদের বাড়ী থেকেই তুলে নিয়ে যেত! এতে অনেক গৃহবধূও নিখোঁজ হত। সুযোগ সন্ধানী ছেলেদের ছিনতাই থেকে রক্ষা পেতে গৃহবধূরা, কপালে টিপ চিহ্ন দিয়ে বুঝাতেন যে, তার বিয়ে হয়েছে, তাকে যাতে ছিনতাই করা না হয়! এসবই ছিল তদানীন্তন ভারতীয় সমাজের হিন্দু নারীদের নিয়তি।
Discussion about this post