বুয়েটের মেধাবী ছাত্রদের একজন, তার পছন্দের এক মেয়েকে ম্যাসেঞ্জারে প্রেম নিবেদন করেছিল। কিন্তু তার দীর্ঘ মৌনতায় সেই মেধাবী ছাত্রের ধৈর্যহানি ঘটে। দীর্ঘদিন ছাত্রটি তার মত করে মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছিল। যাতে করে মেয়েটির মন পাওয়া যায়। কিন্তু মেয়ের মন পাবে দূরের কথা বরং তার ঘৃণা ও গোস্বা বাড়তে থাকে। লাইলির জন্য পাগল হতে হলে, মজনুর মত চরিত্রও থাকা লাগবে, যার ছিটে ফোটাও ছিল না ছেলেটির আহবানে! লাইলী-মজনুর বিরাট সাহিত্যে মজনু একটি বারের জন্যও বলেনি যে, “লাইলি আমি তোমাকে ভালবাসি”। এমন একটি বাক্যের উপমা ছাড়াই এটা বিশ্ব সাহিত্যে প্রেমের উপাখ্যান হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আবেদন-নিবেদনের পর্যায় কতটুকু গভীর হলে এমন হয়। অথচ আজকালকার মেধাবীরা প্রেম নিবেদন করতে নোংরা বাক্যের ব্যবহার ও অশ্লীল ছবি দিয়ে প্রলোভন দিতে চেষ্টা করে। বুয়েট মেধাবীদের প্রেম নিবেদন
আরো পড়তে পারেন…
- যোগ্য লোক অলস হলে কূটচালে অভ্যস্ত হয়
- মানুষের সঙ্গ ও রুচি বাছাইয়ের পদ্ধতি
- দূরদৃষ্টি Prudence অর্জনের গুরুত্ব
পরিশেষে মেয়েটির মন পাওয়া কিংবা তাকে রাজি করার বিষয়ে সফল হতে, আরো তিন মেধাবী যোগ দেয় ‘মজনু’ মিশনে! ফলাফল ব্যর্থ উল্টো নিজেদের কপালে কুলাঙ্গার তকমা জুটেছে। ভালবাসা প্রকাশে কদাকার বাক্যের প্রয়োগ, অশ্লীল ছবি দিয়ে প্রেম নিবেদনের প্রচেষ্টা, এমনকি তারা নিজেরাও যে সুপুরুষ তা প্রমাণ করতে পেন্ট-লুঙ্গি সবই মাটিতে দান করেছে। একদল মেধাবী থেকে এমন আউটপুট আসলে, সারা দেশের গাধাবীদের করণীয় কি বুঝে আসেনা! এমন কদাকার প্রেম তো পাখিরাও করেনা। তারা নারী পাখির মনজয় করতে চেষ্টা করে। বিফল হলে নিজেকেই গুটিয়ে নেয়।
বুয়েটের ছাত্র হওয়াতে বিষয়টি অনেকে নজরে এসেছে। কেননা ওরা প্রথম কথায় দেশের সেরা মেধাবীদের অন্যতম এবং দেশের নামকরা কলেজের ছাত্র। তারা প্রত্যেকেই তার এলাকার অতি আলোচিত খ্যাতিমান সন্তান। এদেরকে মেয়ে বিয়ে দিতে অনেক পিতা মুখিয়ে আছে! কথা হল, ওরা মেধাবী এবং বুয়েটের ছাত্র হওয়ার পরেও; তারা চরিত্রহীন ও অসামাজিক। এই কথাটি মূল বিবেচ্য। আমরা হয়ত এই চারজনকে নিয়ে কথা বলছি কিন্তু তলে তলে পুরো দেশটিই এমন হয়ে গিয়েছে সে খবর ক’জনে রেখেছি!
মূলত এটি একটি সামাজিক ক্ষত এবং এর জন্য দায়ী শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা ও তাদের পিতা-মাতা। হয়ত তাজ্জব হবেন এমন মন্তব্যে। একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি।
ছেলের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করাতে, উদ্ভাসের মালিবাগ শাখা ও বনশ্রী শাখায় আসা যাওয়া করতাম। সারাদিন কোন কাজ ছিলনা, এভাবে টানা তিন মাস। কোচিং সেন্টারে বসা, ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ানো এবং যে সব অভিভাবক কোচিং সেন্টারে বসে অলস সময় পার করত, তাদের সাথে গপ্প ও তথ্যের আদান প্রদান করা। উদ্ভাসের মালিবাগ সেন্টারে দেশের সবচেয়ে চৌকশ মেধাবীদের দিয়ে সরগরম থাকত। এখানে আগত অধিকাংশই দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। ফলে এসব ছাত্রদের অনেকের চালচলন ও পিতা-মাতার অভিব্যক্তি জানার সুযোগ হয়েছে খুব কাছ থেকেই।
এখানে আগত অভিভাবক গুলোর অনেকেই অন্তর্মুখী, কথা বলায় অনাগ্রহী, চুপচাপ বসে থাকায় পারদর্শী হিসেবে দেখেছি! কিছু ব্যতিক্রম ছিল, যারা বাস্তববাদী এবং তাদের অনেকের সাথে আজো আমাদের যোগাযোগ আছে। দু’জন পিতা জানতে পেরেছে আমি প্রবাসী, সে কারণে আমার প্রতি কৌতূহল বাড়া এবং কথা বলতে গিয়ে আন্তরিকতার সৃষ্টি হয়েছে। তার ছেলে শহরের নামী-দামী কলেজের ছাত্র। তারা চাইছিলেন সন্তানের সাথে আমার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। সন্তান অনিচ্ছা সত্ত্বেও পেরেশানি মনে আমাদের সাথে কলা বলেছেন! ওরা মেধাবী হলেও একজন অপরিচিত মুরুব্বী মার্কা ব্যক্তির সাথে কিভাবে কথা শুরু করতে হয়, সেটাতেও দুর্বলতা পরিলক্ষিত। সেন্টারের কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকির বেশীর ভাই বাক্য পাঠদান সম্পর্কিত না হয়ে বরং তাদের অসৌজন্য কথা-বার্তার আপত্তি সম্পর্কিত হত। দেশের সেরা কলেজের, বেশীর ভাগ ছাত্ররাই বিদ্যার খ্যাতির কারণে অহংকারীত্ব ও দাম্ভিকতা দেখাতে পারঙ্গম এবং যা দৃশ্যত একপ্রকার গোঁয়ার্তুমি।
ঢাকা শহরের একটি নামী-দামী স্কুলের ক্যান্টিনের ভিডিও দৃশ্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী নবম শ্রেণীর এক ছাত্রকে জুতো দিয়ে আঘাত করছে। মেয়েটির খোলা হাতের চপেটাঘাতে ছেলেটির কান ঝুলে পড়ার দশা। ছেলেটি কোনভাবেই নিজেকে আত্মরক্ষা করতে পারছিল না। প্রথমে ভেবেছিলাম ছেলেটি মনে হয়, মেয়েটিকে টিজ করেছিল! পরে জানা গেল, ধনী লোকের মেয়েটির অব্যাহত প্রেমের প্রস্তাব ছেলেটি উপেক্ষা করে যাচ্ছিল। তাই ক্যান্টিনে সুযোগ পেয়ে সবার সামনে এমনতর পদ্ধতিতে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে! বুয়েট মেধাবীদের প্রেম নিবেদন
প্রেম কিভাবে করতে হয়, কিভাবে প্রেমের চিঠি লিখতে হয় এসব নিয়ে বিস্তারিত সরেস বই ফুটপাতে বিক্রি হয়। কম শিক্ষিত ব্যক্তিরাই এসবের পাঠক। রকমারি অনলাইনে যদি এসব বই বিক্রি হবার সুযোগ থাকত তাহলে দেখা যেত এগুলোই বেষ্ট সেলার বই হয়ে উঠেছে! এসব বইয়ে ছেলেকে সন্ত্রাসী বানাবার বিদ্যে নেই। তবে একটি মেয়েকে পটানোর জন্য ভাষার ব্যবহার কেমন মোলায়েম হওয়া চাই, নিজেকে কিভাবে পরিপাটি রাখা চাই, নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করা হবে এবং মূলত নারীরা কোন জিনিষটি দেখে পুরুষকে পছন্দ করে তার বিষদ বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে। প্রেম করতে গেলে, একজন অল্পশিক্ষিত মানুষ যতটুকু প্রস্তুতি নেয়; বর্তমানের মেধাবীরা দেখছি তার ধারে কাছেও নেই!
পাঠক ভুল বুঝবেন না। প্রেমের প্রতি উৎসাহ দিচ্ছি না কিন্তু চরিত্র ও অন্তরে যে প্রেমের প্রয়োজনীয়তা আছে সেটাই বুঝাতে চাচ্ছি। চরিত্রে সৌন্দর্যহীনতা, অন্তরে প্রেমহীন ছাত্র মেধাবী হলেই বা কি সম্পদশালী হলেই বা কি? তার দাম্পত্য জীবনে আগুনই হবে মুল উপাদান এবং এমন সংসারে যত যোগ্য, সুন্দরী নারীই আসুক না কেন, গৃহপালিত কুকুরের মত মর্যাদাও জুটবে না!
মেধা ও চরিত্র দুটোর মাঝে ব্যবধান আসমান জমিন। চরিত্র না থাকলে মেধা ব্যক্তি জীবনে মূল্যহীন হয়ে উঠে। আর মেধা না থাকলে উত্তম চরিত্র দিয়েও সে সর্বজন গ্রহণীয় হতে পারে। তাই সন্তানদের গঠনে শুধুমাত্র মেধার পিছনে দৌড়ানো উচিত নয়। শুধুমাত্র স্কুল-কলেজের বই নয়, বাহ্যিক সাহিত্যও পড়তে দিন। চিন্তায় আঘাত করে এমন বই কিনে উপহার দিন। ধনী-দরিদ্র সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে মিশতে দিন। তাদেরকে আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে নিয়ে যান; নিজেও আত্মীয়দেরকে ঘন ঘন বাসায় দাওয়াত দিন। এতে করে সন্তানেরা কথা বলতে শিখবে, ভাবের আদান প্রদান করতে জানবে। অন্যের সামনে নিজেকে উপস্থাপনা করতে হয়, অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কি করা উচিত সেটা রপ্ত করতে শিখবে। অন্যের সামনে নিজের মূল্য বাড়াতে কি বাড়তি সতর্কতা থাকা উচিত সবই তারা সমাজ থেকে শিখবে।
বুয়েটের এসব ছাত্রদের ঢালাও ভাবে দোষ দিতে রাজি নই। সুন্দরী মেয়ে দেখলে তরুণের হৃদয়ে আগুন জ্বলে উঠবে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু একজন তরুণীর কাছে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করতে হবে এতটুকু সামাজিক জ্ঞান, বৈষয়িক কাণ্ডজ্ঞান এমন উচ্চ পর্যায়ের মেধাবীরা অর্জন করতে পারেনি। এটাই বড় ব্যর্থতা। সমাজ রাষ্ট্রের জন্য এমন মেধায় কোন সুফল নেই, কোন মূল্য নেই।
Discussion about this post