ভুত সম্পর্কে আমরা হর হামেশাই শুনে থাকি। মুসলমানগন জ্বিনে বিশ্বাসী কেননা পবিত্র কোরআনে জ্বিনদের অস্তিত্ব নিয়ে কথা আছে। ভূত সম্পর্কিত কিম্ভূত আলোচনা
ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস মতে মানুষ, ময়ূর, হরিণের মত জ্বিনও এক প্রকার সৃষ্টি। বেশ-কম শুধু জিনেরা মানুষকে দেখতে পায় কিন্তু মানুষ জিনকে দেখতে পায় না।
হিন্দুরা ভুতে বিশ্বাসী। ভুত জিনদের মত আলাদা কোন প্রাণী নয়। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ পূর্বক শ্মশানে মানব দেহ জ্বালানোর পরে যে আত্মা স্বর্গে যেতে ব্যর্থ হয়।
আরো পড়ুন…
- মানব জীবনে আবেগ ও তার প্রভাব
- মানুষ যখন নিজেই শয়তান হয়
- নলের পানি যবে শুকিয়ে যাবে
সেই ভুত হয়ে বারে বারে লোকালয়ে হানা দেয়। সে হিসেবে ভুত হল মূলত মানুষের প্রাণ বা আত্মা।
এগুলো হল অসৎ আত্মা, পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে সৎকর্ম করেনি বলেই তার এমন পরিণাম। তবে তার জীবিত আত্মীয়রা তার জন্য কিছু উপকার করতে পারে।
ভুত নামের এসব আত্মা তাদের শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পেতে, আত্মীয় স্বজনকে, ঘরে-বাড়ীতে, পৃথিবীর সর্বত্র জ্বালাতন করে।
যাতে করে জীবিত আত্মীয়রা সৎ কর্মের মাধ্যমে তার আত্মার সদ্গতির ব্যবস্থা করে। এর ফলে একদিন ভূতের উৎপাত থেমে যায়।
তবে ভুতের মধ্যেও প্রকারভেদ আছে। কিছু উপকারী ভুত, কিছু কর্ম-কৌশলী ভুত। পৃথিবীর জীবনে যে ব্যক্তি যে স্বভাবের ছিল ভুত হবার পরেও তার স্বভাবের তারতম্য হয়না।
আবার কিছু কিছু ভুত কস্মিনকালেও নিষ্কৃতি পায় না। তারা শাস্তিই পেতে থাকে, তাদের আহাজারি শোনার জন্য কেউ থাকেনা। কেউ থাকলেও তার নিষ্কৃতির পথ থাকে না।
মামদো ভুত
‘মামদো’ ভূতের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন! এগুলো হল মুসলমানদের আত্মা! এদের আত্মা স্বর্গে যেতে ব্যর্থ হয়েই মামদো হয়েছে। এই ভুতগুলো কোনভাবেই মুক্তি পায় না।
এরা বড় জ্বালাতন কারী ভুত। পৃথিবীতে তাদের আত্মীয় স্বজনও এমন কোন পুণ্য কাজ করতে পারেনা,যার কারণে এসব আত্মা মুক্তি পায়।
মামদো ভুতের আত্মা না স্বর্গে যেতে পারে, না মুক্তি পায়! এক সময় আত্মীয় স্বজনও মারা যায়। ফলে অতৃপ্ত, ক্ষিপ্ত এসব ভুত-আত্মা জীবিত মানুষকে শান্তি দেয়না, বিবিধ উপায়ে তারা মানব সমাজে অনিষ্ট সাধনে লেগে থাকে।
প্রেত্নী
নিশ্চয়ই পেত্নীর নাম শুনে থাকবেন! এগুলো হল মহিলাদের অতৃপ্ত আত্মা। পরিবার ও সংসারে সকল অশান্তির পিছনেই লেগে থাকে পেত্নীদের ভূমিকা।
লম্বা নাক, সরু গাল, ছোট্ট ঠোটের পেত্নীর চেহারা চিত্রকরেরা এঁকে থাকে।
শাঁকচুন্নি নামের একটি পেত্নী আছে। এটা অনেকটা উপকারী পেত্নী। কারো সংসারে ঢুকে সে গায়ে পড়ে কাজ করে দেয়। ভূত সম্পর্কিত কিম্ভূত আলোচনা
এতে করে সে সংসারে জব্বর কাজ-কর্ম সম্পাদিত হয়। গৃহস্বামীর পিছনে লেগে থাকে বলে সে সংসারে আগুন ও জ্বলে উঠতে পারে।
এগুলো হল সেই মহিলার পেত্নী। যারা ছিল কর্মে চঞ্চল কিন্তু সুখের সংসার পায় নি। তাই অন্যের সংসারে ঢুকে নিজের সংসার পাতে।
দৈত্য
দৈত্যের কথা অবশ্যই শুনবেন! সিন্দাবাদের কাহিনীতে হু হা হা হা হা করে ঘটনাস্থলে হাজির হয়। মানুষ যা চায়, তাই হাজির করে দেয়।
এগুলো আলাদা কোন জীব নয়; মানুষেরই প্রেতাত্মা! তবে চরম শক্তিশালী ও বেজায় ক্ষমতাধর।
এমন দৈত্যদের মধ্যে একটি আছে ব্রহ্ম দৈত্য। শব্দ দ্বারাই বুঝা যায় এরা হিন্দু ব্রাহ্মণদের মৃত আত্মা।
কোন কারণে এরাও স্বর্গে পৌছতে ব্যর্থ হয়েছে। উচ্চ বংশীয় মর্যাদার কারণে, মর্তে এরা সাধারণ মানুষের মত হলেও, পরলোকে ওদের আত্মা মহাশক্তিধর হয়ে উঠে।
আরো বহু ধরনের ভুত, পেত্নী ও দৈত্য আছে। এগুলোর অনেকটার সাথে আমাদের পরিচিতি আছে। বাংলা সাহিত্যের পাতায় এই নামগুলো আমরা কদাচিৎ দেখে থাকি।
অত তলিয়ে দেখিনা বলেই, চিন্তা থেকে হারিয়ে যায়। পাঠকদের সুবিধার্থে এমন কিছু উদাহরণ উপস্থাপন করা হল,
দেও – পানিতে চুবিয়ে মারে,
দৈত্য – শক্তিশালী পুরুষ ভুত,
ডাইনী – সুন্দরী মেয়েদের আত্মা।
ডাকিনী – কুমারী মেয়ের মৃত আত্মা।
চোরাচুন্নী – চুরির অপরাধে মৃত আত্মা
মোহিনী – ব্যর্থ প্রেমে আত্ম হত্যাকারীনী।
কানাভুলো – অন্ধকার রাত্রে পথ ভুলিয়ে দেয়,
গেছোভুত – বনে জঙ্গলের গাছে অবস্থানকারী ভুত।
মেছোভুত – জলাশয়ে থাকে যেখানে মাছ পাওয়া যায়।
কাঁদারমা – জঙ্গলে দুঃখিনী মায়ের মত বিলাপ ধরে কাঁদে,
শাঁকিনী – বিয়ের পরে সংসারে অসুখী হয়ে আত্মহত্যা করা নারী।
পাঠক আপনি জীবনে কোন ভুতের পাল্লায় যদি পড়ে থাকেন, তাহলে সে ঘটনার বিবরণ লিখুন এবং উপরের তালিকা ধরে নিশ্চিত হউর, আপনি কার খপ্পরে পড়েছিলেন! ভূত সম্পর্কিত কিম্ভূত আলোচনা
Discussion about this post