লোকাটাকে যৌবন কাল থেকেই চিনি। হিন্দি সিনেমায় বুঁদ হয়ে থাকত। আসর-মাগরিবের আজান দিলে ভিসিআরে বিরাম দিয়ে নামাজ পড়ে নিত। যথারীতি আবার সেই জায়গা থেকে সিনেমায় মগ্ন হত। যেমন বক্তা তেমন শ্রোতা
পরিচিতদের কাছে তিনি একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম হিসেবে চিত্রিত। তিনি এখন কাঁচা টাকার মালীক। ধার্মীক এবং পীরের মুরিদ। এলাকার মানুষের ধর্মীয় উপদেষ্টা এবং দানবীর হিসেবে পরিচিত।
তিনি একটি আবেগঘন ফোনে ব্যস্ত। কাউকে পরামর্শ দিচ্ছেন এবং অবস্থান জানান দিচ্ছিলেন। অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে ফোনের কথোপকথনে জানালেন,
“আপনারা মৌলানা যাকেই আনেন আমার কোন প্রশ্ন নাই কিন্তু ওয়াজের মাহফিল কাঁপানো বয়ানের জন্য একজন দক্ষ বয়ানীকেই চাই, নতুবা আমি ওয়াদাকৃত টাকাটা দেবনা”
এক বাক্যেই বিষয়টি বুঝে ফেলেছি। তাই তাকে প্রশ্ন করলাম, ঐ বক্তার ওয়াজ কি আপনার খুব পছন্দ?
তিনি সহাস্যে জবাব দিলেন,
“ওর মজাদার ওয়াজগুলো আমি খুটিয়ে খুটিয়ে মনদিয়ে শুনি। এভাবেই আমার সময় কেটে যায়। আগে অনেক গুনাহ করেছি (সিনেমা দেখে) এখন ওসব বাদ দিয়ে ওয়াজ নসিহত শুনি। তিনি যেভাবে বয়ান করে তা শুনে আমি দারুন মজা পাই।
তাছাড়া নবীর দোষমনদের তিনি যেভাবে বিষ মারেন, এমনটি আর অন্য কোন শালা পারে না! তাই এলাকার মাহফিল কমিটিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমার পছন্দের আলেম বক্তা না হলে, একটি টাকাও দিব না। (অট্টহাসি)
তাছাড়া ওরা আমার কথা শুনতে বাধ্য, কেননা সবাই যত চাঁদা দিচ্ছে আমি দিচ্ছি তার অর্ধেক! আমার পছন্দের বক্তা না আনলে তো তাদের মাহফিলই হবে না”
ওই বক্তা ইউটিউবে খুবই জনপ্রিয়। তারও প্রচুর গুনগ্রাহী রয়েছে। তাকে পেতেও শিডিউল পেতে হয়। উপস্থিত শ্রোতারা তার মুখে যত না ইসলাম সর্ম্পকে জানতে আগ্রহী তার চেয়ে বেশী আগ্রহী তার মুখ থেকে নিত্য নতুন, নানা কিসিমের পরনিন্দার জপমালা শুনতে!
হরহামেশা গালাগালি, কটুক্তি, তির্যক মন্তব্য, বাজে উদাহরণ সৃষ্টিতে তিনি পারদর্শী। যেমন বক্তা তেমন শ্রোতা
ওগুলো মূল বিষয় নয়, আসল বিষয় হল ওয়ায়েজিনের পদটা যেন এখন দেখে সবার জন্য উন্মুক্ত। মাদ্রাসা পড়ুয়া কেউ রসিয়ে কথা বলতে পারলেই তাকে বক্তার চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া যেমন জুলুম, এমন ব্যক্তিদের বক্তব্য শোনাও নিজের উপর জুলুম।
ওয়াজের মাহফিল গুলোকে এভাবে আনন্দ তামাশার বিষয় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কিছু ধনশালী ব্যক্তি তৈরী হয়েছে, যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের আবেদন ঠুনকো বিষয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে।
এগুলো তো ওয়াজ মাহফিল নয়, রীতিমত গীবত-অপবাদ চর্চাকারী জনসভা। এমন পরিবেশে ফেরেশতা বসার সুযোগ পায় না। উল্টো শয়তান এসেই জায়গা দখল করে।
Discussion about this post