অনেক মানুষের আন্তরিক দান বিফলে যায় নিজেদের সামান্য ভুলের কারণে। ভদ্রলোক ঢাকায় বড় চাকুরী করেন কিন্তু গ্রামের সাথে তার সখ্যতা বরাবরই ভাল। পিতা-মাতার প্রতি তার অগাধ ভালবাসা, তাকে গ্রামের প্রতি বরাবরই আকৃষ্ট রেখেছিল।
ভাল জীবনের সুবাদে তিনি জাকাত-সাদাকা করতেন গ্রামের মানুষদের কিন্তু ভিন্ন পন্থায়। তার এক ভাই খুব পরহেজগার। তিনি এই ভাইকে টাকাটা দিয়ে দিতেন যেন অভাবী মানুষ দেখে শুনে দান হস্তান্তর করেন।
পরহেজগার ভদ্রলোক ভাইদের দানের টাকাটা, নিজের পছন্দসই মানুষদেরই দিতেন। এমন অভাবী মানুষ বাছাই করতেন, যারা কোন না কোন সময় তার কাজে আসে। তাছাড়া ভাইয়ের দেওয়া দানের টাকাটা হস্তান্তরের সময় এমন ভাব করতেন যেন তিনি অভাবীদের কর্জ দিচ্ছেন।
তিনি যদি না থাকতেন তাহলে তারা এই উপকারটি পেতেন না। এই দুর্বলার সুযোগ নিতেন কড়ায় গণ্ডায়; এসব মানুষদের ব্যক্তিগত ফরমায়েশে কাজে লাগাতেন।
তার ছিল একটি দোকান। দোকানের সামনে দিয়ে অভাবীদের কেউ হেটে যাবার সময় নির্দেশ দিতেন, সব কাজ বাদ দিয়ে, তার বাজার গুলো যেন বাড়ীতে পৌঁছে দেয়!
কেউ কোন কারণে অপারগতা দেখালে, তাকে ধমক দিয়ে বলতেন, আমার ভাইয়ের দানের টাকা খেয়ে এখন ঘাড়ে চর্বি বেড়েছে।
সামনের বারে পা ধরে কান্নাকাটি করলেও, তোর মত মোনাফেকের কোন উপকার করব না। কার দানে কে মাতব্বরি করে? কিন্তু এভাবে ভাইয়ের মাধ্যমে দান করে অপমানিত-অপদস্থ করার মধ্যে না জাকাত আদায় হয়, না দানের বরকত হাসিল হয়।
দান এমন এক জিনিষ। যা করার পরে ভুলে যেতে হয় এমনভাবে যেন তার নামও মনে না আসে। যারা হাশরের ময়দানে আল্লাহর রহম আশা করে, তারা তাদের স্বীয় দানের মাধ্যমে সুনাম তো দূরের কথা, সামান্য ধন্যবাদও প্রত্যাশা করা উচিত নয়।
এমনকি এই ব্যক্তি যদি কখনও শত্রুতেও পরিণত হয়, তখনও কথাচ্ছলে তাকে বলা যাবেনা, তোমাকে একদা দান করে ধন্য করেছিলাম। কেননা দান করা হয় আল্লাহকে খুশী করার জন্য।
দান করার সাথে সাথেই তিনি খুশী হয়েছিলেন, তাহলে খোটা দিয়ে কি তাঁকে পেরেশান করা হয় না। এই দান যত বেশীই হউক না কেন। বস্তুতই কোন কাজে আসে না। তাইতো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,
“যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর নিজেদের অনুগ্রহের কথা বলে বেড়ায় না আর কাউকে কষ্টও দেয় না; তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন দুঃখ মর্মবেদনা ও ভয় নেই”
সুরা বাকারা-২৬২
Discussion about this post