প্রতিটি শিশু-কিশোরের মনে, দুনিয়ার সকল জিনিষ সম্পর্কেই জানার আগ্রহ প্রবল। সে কারণে যার নিকট থেকে মনের খোরাক পায়, তাকেই বন্ধু বানায়, তাকেই বিশ্বস্ত ভাবে। তাই শিশু-কিশোরদের বেলায় সৎ সঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আবার একটি বই কিন্তু একজন সঙ্গীর মত কাজ করে। জেলখানায় শিক্ষিত মানুষদের অন্যতম সঙ্গীই হল বই। জেলে গিয়ে বই লিখে দুনিয়াতে সাড়া ফেলেছেন এমন ঘটনা বিশ্ব সাহিত্যে প্রচুর।
সন্তান যখন কিছু জানতে চাইবে, তখন তার উত্তর খুঁজতে হাতে একখানা বই নিতে পারি। কোন কথাটা পড়ে তার মনের উত্তর দেয়া যায়, সেটা পড়ে তাকে শোনাই। জানা কথা হলেও প্রয়োজনে পড়ার ভান করি। এতে শিশু খুব আগ্রহ ভরেই কথা শুনবে এবং দৃষ্টিকে আমাদের দিকেই নিবদ্ধ করবে। শিশু গল্প শুনতে চায় কিন্তু সে তো পড়তে পারেনা; তাই একটি গল্প নিজেরাই পড়া শুরু করি, নিজেরাই হাঁসি, তাকেও হাঁসাই। শিশুদের সংসার জীবন নিয়ে দুঃচিন্তা থাকেনা, তারা সর্বদা মন-প্রাণ খুলে হাঁসতে চায়। যখনই সে হাসির খোরাক কোন বই থেকে পাবে, তখনই সে বইয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে, বইকে যত্ন করবে এবং বইয়ের কথাকে বেশী মান্য করবে। সে অবিরত ভাবতে থাকবে, তার মনের সকল অজানা কথার উত্তর এই বইয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।
বাড়ীতে মেহমান আসলে দেখা যায়, শিশু বইটি মেহমানকে ধরিয়ে দিয়ে বলছে একটু পড়। এখানে পড়া মানে মেহমানের অবসর সময়ের মাধ্যমে সে নতুন কিছু শিখতে চায়। কেননা সে বুঝে ফেলেছে তার মনের খোরাক, অজানাকে জানার খোরাক বইয়ের মধ্যেই আছে এবং সে কারণে তার দৃষ্টিকে বই-মুখী করে ফেলেছে। অঘোষিত ভাবে বইয়ের সাথে তার মিতালী হয়ে যাবে। ফলে স্কুল জীবনের শুরুতেই বইয়ের প্রতি তার আগ্রহ থাকবে প্রবল। তাকে যখন বলা হবে স্কুলের দেখানো নিয়মে পড়লে, বড় বইও পড়তে পারা যায়, তখন সে শ্রেণী পাঠ্যের প্রতিও যত্নশীল হবে। পাঠ্য ভীতি তো থাকবেই না বরং প্রতিটি বইয়ের ছত্রে ছত্রে সে হানা দিবে নতুন কিছুর সন্ধানে।
কোথাও বেড়াতে গেলে, সাথে একটি শিশুতোষ বই সাথে রাখুন। তার একাকীত্বের সময়েই বইটি ধরিয়ে দিন। না, সেখানে সে বিরক্ত করবে না। এটাতেই মনোনিবেশ করবে। শুধু একটু অভ্যাস করিয়ে দেওয়া দরকার হয়। তাছাড়া মুরুব্বীরা পড়ুয়া শিশুদের সামনেই প্রশংসা করে। নগদ প্রশংসা তাদেরকে পড়ার প্রতি উদ্যমী করে তুলবে। এর পর থেকে সে নিজেই বই সাথে রাখবে। সুযোগ পেলে শিশুদের বই মেলাতে নিয়ে যান। শপিং মলে গেলে বিভিন্ন বুক শপের সামনে একটু দাঁড়ান, বইয়ের সাড়ির দিকে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকান, শিশু তাকাবে আপনার দিকে। শিশুকে বাছাই করতে দিন একটি বই, ঘরোয়া পরিবেশে ঘটা করে উপহার দিন। শিশুরা ঘটায় আগ্রহী, সে জন্য তারা জন্মদিন উৎযাপনের জন্য পাগল হয়। সুতরাং বইয়ের জন্যও এভাবে হালকা ঘটা করুন। রাত্রেই সে বিরক্ত করে ছাড়বে বইয়ে কি আছে তা যেন তাকে শোনানো হয়। শিশু জীবনের শুরুতে যদি এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়, তাহলে সারা জীবনে এটা তার পাথেয় হয়ে যাবে এবং খারাপ বন্ধুর সঙ্গ ছাড়ানো একেবারেই সহজ হয়ে যাবে। বই পড়ার মাধ্যমে ভাল বন্ধু ও খারাপ বন্ধুর তফাৎ বুঝতে পারবে। তাছাড়া বইয়ের জ্ঞান তাকে এমনিতেই দুষ্টবন্ধুর সান্নিধ্য থেকে পৃথক করে ফেলবে।
Discussion about this post