রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে ইসলামী ব্যক্তিদের প্রাবল্য থাকলে, নানা প্রজেক্ট দেখিয়ে বৈধপথে, শুধু আরব দেশ থেকেই বিশাল পরিমাণ যাকাত ফাণ্ড সংগ্রহ করা খুবই সঙ্গত, সহজ এবং সহায়ক হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। জামায়াত
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বক্তব্যটি নানা জন নানা মত পোষণ করছেন। মূলত দান গ্রহিতা কখনও, দানের উৎস, দান বন্টনের প্রথা ও পদ্ধতি সর্ম্পকে জানেন না। সেটা না জানার কারণে তার কাছে হাসির উদ্রেক হচ্ছে! অন্যের কাজকে সন্দেহের চোখে দেখে তাচ্ছিল্য করছে! প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে বিষয়টিকে মূল্যায়ন করছেন। যাকাত
যাকাত দিয়ে কিভাবে সামাজিক বিপ্লব ঘটানো যায়, একটি জাতির অর্থনৈতিক ভিতকে কিভাবে শক্ত করানো যায়, সেটা তো বাংলাদেশে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের চেয়ে বেশী আর কারো জানার কথা নয়! তার পজিশন আমিরে জামায়াত ড. শফিকুর রহমানের পরেই রয়েছে। দলে এটি নিতী নির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ন ও সম্মানীয় পজিশন। জামায়াত-যাকাত
জামায়াত আমির দেশ ও জনগনের বিপদে আপদে দৌড়ে যান এবং তাদের সাহার্য্যার্থে বিরাট অংকের অর্থ দান করেন! এটা কি আমির সাহেবের নিজের পকেটের টাকা! নিশ্চয়ই এমনটি কেউ মনে করেন না। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিটি কর্মী যারা যাকাত দিতে সমর্থ, তাদের একটি উল্লেখ যোগ্য অংক দলীয় যাকাত ফাণ্ডে দান করেন। জামায়াতের আমীর সেই টাকাটা কোথায় দিবেন, সেটা নির্ণয় করার জন্যে যাদের পরামর্শ গ্রহণ করেন, তার মধ্যে একজন এই আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
সুতরাং যাকাতের টাকা কিভাবে সংগ্রহ করতে হয় এবং কোথায় কিভাবে বন্টন করতে হয়, তার প্র্যাকটিক্যাল আইডিয়া অন্তত আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও তার সতীর্থদের চেয়ে বেশী কেউ জানেনা। সমগ্র বাংলাদেশেই তাদের সমকক্ষও কেউ নাই। জামায়াতের জনশক্তিই যদি তাদের পুরো যাকাতের টাকাটা দিয়ে দেয়, সেটা দিয়েই তো বহু কিছু করা সম্ভব। জামায়াত এটা করেনা এ কারণে যে, যিনি যাকাত দেন, তিনি যেন তার নিকটাত্মীয় ও আশে পাশের গরীবদের মধ্যেও এর কিছুটা শেয়ার করতে পারেন। ফাইনাল কথা হল, এ বিষয়ে জামায়াতের রয়েছে দীর্ঘ দিনের প্র্যাকটিক্যাল আইডিয়া, যা অন্যদের নেই!
সুতরাং আমেরিকায় দাঁড়িয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের যাকাত নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা অবিবেচক, কথার কথা, উপস্থিতিকে উজ্জীবিত করার জন্যে বলেন নাই। এই দাবির ন্যায়সঙ্গত জোড়ালো ভিত্তি আছে।
আরব দেশগুলোতে বিশাল পরিমান যাকাত ফান্ড আছে। আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরবীরা দেশের মক্তব-মাদ্রাসায় দান করত। আমেরিকার এক এগার এর পরে মালি লন্ডারিং আইন শক্ত করা ও নানা অর্থনৈতিক সেংশনের কারনে, গোপনে দান করার কাজটা আর আরব দেশগুলো খোলা-মেলা করতে পারে না। ফলে আমাদের দেশ থেকে আলেম-ওলামারা সেখানে গেলে, আগের মত আর যাকাতের টাকা পায় না। সে সব দেশগুলো এসব টাকা কোন প্রজেক্টের অধিনে দিতে চায়। যেখানে স্বচ্চতা, পরিচ্ছন্নতা ও ইসলামী দায়বদ্ধতা আছে। এই কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার করতে পারলে, অবশ্যই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইসলামী দেশগুলো যাকাত ফান্ড থেকে সহযোগীতা পাবে। এটা হাসির বিষয় নয়, বরং নিরেট বাস্তবতা!
মনে আছে কি ২০০৭ সালে নভেম্বরে বাংলাদেশের উপকুলে সিডর আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের ধ্বংসলীলা এবং আক্রান্তদের দুর্দশা দেখে তৎকালীন সৌদি আরবের একজন, নাম গোপন রাখা শেখ, ১ হাজার ৬৪ কোটি (১৩ কোটি মার্কিন ডলার) টাকা দান করেন। উল্লেখ্য এই টাকাটা তৎকালীন সরকারের কাছেই দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এই ত্রানের টাকা হরিলুট করতে সকল এনজিও গুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুর্গত অঞ্চলে যোগাযোগ, বন্টন, তালিকাবদ্ধ করা সহ নানা কারণীক কাজে এনজিও ছিল গুলো অগ্রগামী। ফলে দানের কাজটা তারাই পেয়েছে, কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা কোন মাদ্রাসার ছাত্র কিংবা মুফতি-মাওলানাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। যদি রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে ইসলামী ব্যক্তিদের প্রাবল্য থাকে, তাহলে বৈধ পথে, নানা প্রজেক্ট দেখিয়ে, বিশাল যাকাত ফাণ্ড সংগ্রহ করা খুবই সঙ্গত, সহজ এবং সহায়ক হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আরব দেশের এই আন্তরিক কাজটি নিয়েও, আওয়ামীলীগ সরকার বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন! ফলে পরবর্তীতে আর কখনও আবর দেশগুলো গায়ে পড়ে সহযোগীতা করেনি বরং এড়িয়ে যাবার নীতি গ্রহণ করেছেন। নাম বলা সেই আরবী শেখকে কটাক্ক করে সংসদে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন, হাসানুল হক ইনু, শেখ সেলিম সহ আরো কয়েক জন। তারা সংসদে হাসি ঠাট্টার ছলে, কথা তুলেন যে, তারা সেই মহান আরবীর নাম জানতে চান! তার আয়ের উৎস কি? তিনি আদৌ সৎ মানুষ কিনা? (সেখ সেলিম আর ইনু সততার লাইসেন্স দেখতে চাচ্ছেন) তার দুই নম্বরী ব্যবসা বানিজ্য না থাকলে এতগুলো টাকা দান করেছেন কোন বিবেচনায়! ইত্যাদি। তারা সেই মহান আরবীর ব্যবসা কিংবা এত টাকা মালীক হবার ফিরিস্তি চায়। সে দিনের সংসদে হাসিনার স্মীত হাসি দেখে, সংসদের স্পীকার ওদের থামানোর জন্যে কোন চেষ্টা করেন নি!
দান করা সেই মহান ব্যক্তি ছিলেন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (IDB)-এর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে বৈধ পথেই বিরাট পরিমান অর্থ তিনি বাংলাদেশে পাঠান। সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর অনেক দিন পরে, ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলী তার নাম প্রকাশ করেন। আমরা বাঙ্গালী কি আর স্বাধে গরীব! আমরা গরীব আমাদের খাসিয়তের কারনে।
Discussion about this post