নিশ্চয়ই আপনার পোষা বিড়ালের একটি খাসিয়ত লক্ষ্য করেছেন! সে দিনের বেলায় যেভাবে ঘুরে বেড়ায়; ঘুটঘুটে অন্ধকারেও তার চলার গতি তেমনিভাবে সচল! মানুষকে বলা হয়, “সৃষ্টির সেরা জীব”, তাহলে তারা কেন রাতের অন্ধকারে বিড়ালের মত চলতে পারে না? মানুষ যেভাবে সৃষ্টির সেরা
আরো পড়তে পারেন…
- আলোর পরিবর্তনে কপালে হাত
- মানুষ নিজের কারণেই খারাপ হয়, অন্য কেউ দায়ী নয়
- ক্ষমা চাওয়ার গুন মানুষকে দুনিয়াতে সুখী ও সমৃদ্ধশালী করে।
নিশ্চয়ই ক্যামরার লেন্স দেখেছেন! এটাই ক্যামরার চোখ এবং ক্যামরা একটি মাত্র চোখ দিয়েই সারা দুনিয়ার ছবি তুলে। ক্যামরার চোখ আর মানুষের চোখের কার্যক্রম কিন্তু একই! ক্যামরা দিয়ে যারা ছবি তুলে তাদেরকে Aperture (অ্যাপারচার) নামক একটি বিষয়ে অবশ্যই দক্ষ হতে হয়। নতুবা সে মানসম্মত ফটোগ্রাফার হতে পারেনা। এটা হল এই লাইনের প্রথম বিদ্যা।
Aperture (অ্যাপারচার) আহামরি তেমন কিছু না। ক্যামরার চোখের মত ছিদ্রটিকে বড়-ছোট করার কারসাজি করা। আমরা হঠাৎ রোদে দাঁড়ালে, চোখ ঝলসে উঠে, সবকিছু দেখতে পাইনা। কপালে হাত দিয়ে, ভ্রু কুঁচকিয়ে, চোখ ছোট্ট করে জিনিষের প্রতি তাকাই। কারণ বেশী আলোর উপস্থিতিতে চোখ জিনিষের সঠিক অবয়ব দেখতে পারছে না। তাই চোখের ছিদ্র ছোট করে, কিঞ্চিত আলো ঢুকিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়। সে জন্যই ভ্রঁ কুঁচকাতে হয়! ক্যামরাতেও তাই করা হয়।
আবার অন্ধকারে গেলে কিছুই দেখিনা। তখন চোখ দুটোকে পরিপূর্ণ মেলে ধরতে হয়। যাতে করে যতটুকু আলো চারিদিকে আছে তা সংগ্রহ করা যায়। অন্ধকার রাতে চাঁদ না থাকলে, আকাশের তারার আলোই হয়ে উঠে সর্বশেষ মাধ্যম! তারার ক্ষীণ আলো, চোখে ঢুকিয়ে, মানুষ আবছা করে দেখতে পায় এবং পথ চলে। অন্ধকার ক্যামরার অ্যাপারচার বড় করা লাগে।
ঠিক এভাবেই ক্যামরার Aperture (অ্যাপারচার) বড় ছোট করে আলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। নতুবা ছবি জ্বলে যাবে অথবা বেশী কালো হয়ে যাবে। ক্যামরার Aperture এর ব্যবহার জানলে ঘন নিকষ কালো অন্ধকারেও সুন্দর ছবি তোলা সম্ভব! কিন্তু মানুষের চোখের Aperture এর উপর তার কোন ক্ষমতা নেই, সেটি সমন্বয় করে তার মগজ। মানুষ শুধু তার ইচ্ছাটাকে মগজের কাছে সোপর্দ করতে পারে, আর মগজ সেভাবে কাজ করবে।
এর দ্বারা বুঝা গেল, মানুষ পৃথিবীতে সকল সৃষ্টির সেরা হলেও, মানুষ কিন্তু পৃথিবীতে বড় অসহায় একটি সৃষ্টির নাম। তাকে পৃথিবীতে চলতে গেলে, পদে পদে পরিবেশ অনুযায়ী সমন্বয় করেই চলতে হয়! পৃথিবীর নিয়মকানুন ও পরিবেশের বাহিরে গেলেই সে অনিরাপদ হবে। অন্য প্রাণীদের একটি শিশু বাচ্চা পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে যত সহজে পরিচিত হয়ে উঠতে পারে, মানুষ সেটা কখনই পারে না!
আলো-আঁধারীর এই সমস্যাটি মানুষ ব্যতীত অন্য কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। কিছু প্রাণী রাতে চরে, কিছু দিনে; মাছ পানিতে পানিতে, পিপড়া গর্তে, সেটা ভিন্ন কথা, তাদেরকেও ওভাবেই বানানো হয়েছে। কিন্তু বহু প্রাণী রাত-দিন উভয় অবস্থাতেই সচল থাকে, মানুষও তাদের একটি। এদের সাথে বিবেচনা করলে মানুষকে দেখা যাবে বড় দুর্বল অবস্থায়। তাহলে মানুষের বেলায় কেন এমনটি হয়ে থাকে?
এটার একটি মাত্র কারণ। মানুষকে দুনিয়ার জন্য বানানো হয়নি! যদিও সে সার্বক্ষণিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে বুৎপত্তি অর্জন ও শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে পারে। লক্ষণীয় মানুষের জন্য, এই ক্ষমতার গণ্ডি শুধুমাত্র দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ। অন্য কোন গ্রহেও নয়! অধিকন্তু দুনিয়ার সকল জিনিষের রহস্য মানুষের জ্ঞানের অধীনে। মানুষ দুনিয়ার সকল উপকরণের ব্যবহার জানে। গোপন গুনাগুণ, বিষ-মধু ও তার রহস্য ভেদ করতে পারে। এই যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে, ‘সে জন্যই সে সৃষ্টির সেরা জীব’!
তাই বুঝা যায়, মানুষকে বানানো হয়েছে ভিন্ন স্থানে, ভিন্ন কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখেই। সে পৃথিবীর কোন প্রাণীর সাথে সাদৃশ্য নয়। পৃথিবীতে সাহায্য সহযোগিতা ব্যতীত সে একেবারেই অসহায়। অন্য কোথাও থেকে উঠিয়ে এনে মানুষকে পৃথিবীর মাটিতে দাড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমরা জানি, মানুষকে শুরুতে জান্নাতেই রাখা হয়েছিল এবং জান্নাতের অগণিত গুনরাজির কথাও আমরা জানি। তার একটি হল, “জান্নাতের সর্বত্র দিনের মত আলো বিরাজমান থাকবে” আর মানুষের চোখ দুটোও এ ধরনের আলোর জন্য উপযোগী। জাহান্নাম কে অন্ধকার দিয়ে আবদ্ধ করা হয়েছে, মানুষের চোখ অন্ধকারে একেবারেই অসহায়। ঘন আঁধারে দুনিয়াতেও মানুষ এক কদমও সামনে এগুতে পারে না।
Discussion about this post